কুলিয়ারচরে রোগাক্রান্ত গরু নিয়ে দিশেহারা খামারিরা
কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলায় লাম্পি স্কিন ডিজিজ ভাইরাসে আক্রান্ত গরু নিয়ে দিশেহারা শত শত খামারি। এ চর্মরোগটি গবাদিপশুর মধ্যে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় খামারিসহ স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। বাজারে এ রোগের প্রতিষেধক বা ভ্যাকসিন না থাকায় এটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি গরুর মৃত্যু হয়েছে।
এদিকে করোনাভাইরাসের মহামারিতে প্রিয় গবাদিপশুটির চিকিৎসায় উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা না পাওয়ার অভিযোগ খামারি ও কৃষকদের।
স্থানীয় কৃষকরা জানায়, কুলিয়ারচর উপজেলায় লাম্পি স্কিন ডিজিজ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে গরু। সর্বত্র দ্রুত ছড়িয়ে পড়া এই রোগে আক্রান্ত গরু নিয়ে দিশেহারা কৃষক। রোগটির প্রতিষেধক বাজারে না থাকায় স্থানীয় চিকিৎসকদের পরামর্শে নানা প্রকার ওষুধ সেবন করিয়ে তেমন কোনো ফলাফল পাচ্ছেন না। উল্টো পকেটের টাকা ব্যয় হচ্ছে পানির মতো। ঋণগ্রস্ত হচ্ছে দরিদ্র কৃষক ও খামারিরা।
তারা জানায়, হঠাৎ করে গরুর শরীরে এই ভাইরাস দেখা দেয়। এই রোগে গরুর শরীরে তাপমাত্রা খুব বেড়ে যায়। এরপর সারা দেহের চামড়ায় গুটি হয়ে পানি জমে। পরে গলায় ও পায়ে পানি জমে। এ অবস্থায় গরু খাওয়া বন্ধ করায় দুর্বল হয়ে পড়ে। এভাবে এক সময় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।
ছোঁয়াচে হওয়ায় দ্রুত এই রোগ গোয়াল বা খামারের অন্য গরুতে ছড়িয়ে পড়ে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি গরু এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে বলেও খামারিরা জানায়। তাদের অভিযোগ, তাদের এই সংকটে স্থানীয় প্রাণিসম্পদ বিভাগের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা তারা পাচ্ছে না। তাই তারা দ্রুত সরকারি সাহায্যের দাবি জানিয়েছে।
উপজেলার পূর্ব আব্দুল্লাহপুরের খামারি স্বাধীন ও ইয়াসমীন। এদের খামারে পাঁচটি গাভী রোজ ৩০ কেজি দুধ দিত। এ দিয়ে তাদের সংসার ভালোভাবে চলে যেত। গত মাসে লাম্পি স্কিন ডিজিজ হানা দেয় তাদের খামারে। দুধেল গাভিগুলোর চিকিৎসায় এ পর্যন্ত ৩০ হাজার টাকার চেয়েও বেশি খরচ হয়েছে বলে জানান। এই মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করার পর তিনটি সুস্থ হলেও বাকি দুটি এখনো আক্রান্ত। ধার-কর্জ করে এবং নিজেরা না খেয়ে চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এদিকে গাভিগুলো লাম্পি স্কিন ডিজিজ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় দুধের পরিমাণ অনেক কমে গেছে। ফলে তাদের আয় কমে যাওয়ায় খুবই আর্থিক অনটনে দিন যাচ্ছে তাদের।
স্বাধীন ও ইয়াসমিনের মতো অবস্থা একই এলাকার খামারি হাজি সাত্তার ভূইয়ার। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে প্রতি বছরের মতো এবারও আটটি গরু লালন-পালন করছিলেন। সারা বছরে এটাই তাঁর রোজগারের একমাত্র অবলম্বন। কিন্তু গত মাসে তাঁর খামারে লাম্পি স্কিন ডিজিজ ভাইরাস দেখা দেয়। উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে যোগাযোগ করলে করোনার অজুহাতে কেউ তাঁর রোগাক্রান্ত গরুগুলো দেখতে আসেনি। ফলে বাধ্য হয়ে অন্য চিকিৎসককে দেখান তিনি। এরই মধ্যে মারা গেছে তাঁর একটি ষাড় গরু। বাকিগুলো নিয়ে এখন চিন্তিত আছেন তিনি। গরু বিক্রির সময়ে এই ভাইরাস দেখা দেওয়ায় দুই চোখে অন্ধকার দেখছেন তিনি।
কুলিয়ারচর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা নিখিল চন্দ্র দেবনাথ জানান, গরুর লাম্পি স্কিন রোগ সারা দেশের মতো এই উপজেলায়ও দেখা দিয়েছে। এ রোগটির সুনির্দিষ্ট কোনো ওষুধ নেই। প্রাথমিকভাবে আক্রান্ত গরুর লক্ষণ অনুযায়ী প্যারাসিটামল, এন্টিহিস্টামিন ও সোডা এবং গোটপক্স ভ্যাক্সিন প্রয়োগে ইতিবাচক ফল পাওয়া যাচ্ছে। লাম্পি স্কিন রোগে খামারি বা কৃষকদের আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। প্রাপ্তি সাপেক্ষে ভ্যাকসিন কার্যক্রম চলছে। পর্যায়ক্রমে এই ভ্যাকসিন সবাইর গরুর জন্য দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।