কিশোরগঞ্জে স্বাস্থ্য সচিবের বাড়িতে হামলা, সহকারী কমিশনার আহত
কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলায় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব আবদুল মান্নানের বাড়ি ও নির্মাণাধীন কমিউনিটি ক্লিনিকে হামলা চালিয়েছে একদল দুর্বৃত্ত। আজ শনিবার দুপুরে উপজেলার চানপুর গ্রামে এ হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশরাফুল আলম আহত হয়েছেন। হামলার সময় স্বাস্থ্য সচিব তাঁর বাড়িতেই অবস্থান করছিলেন।
স্বাস্থ্য সচিবের বাড়ির লোকজন জানান, এখানে একটি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ নিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্যকে না জানানোর অজুহাতে তাঁর অনুগতরা এ হামলা চালিয়েছে। এ সময় কয়েকজন শ্রমিককেও মারধর করা হয়।
স্বাস্থ্য সচিব আবদুল মান্নান বলেন, ‘আমি আমার প্রয়াত স্ত্রীর নামে বাড়ির কাছে একটি কমিউনিটি ক্লিনিক ও ছোট রাস্তার কাজ শুরু করি। প্রথম থেকেই এই কাজে কতিপয় লোক বাধা দেওয়া শুরু করে। তারা বলে যে, এমপি সাহেবের নির্দেশ ছাড়া কাজ হবে না।’
খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক মো. শামীম আলম, পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) জিহাদুল কবীর, পুলিশ সুপার মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিএম) আব্দুল্লাহ আল মাসউদসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা স্বাস্থ্য সচিবের বাসায় ছুটে যান।
কটিয়াদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ জলিল জানান, বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এ ঘটনায় এখনো কোনো মামলা হয়নি এবং কেউ আটক হয়নি।
স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) নূর মোহাম্মদ এবং স্বাস্থ্য সচিব আবদুল মান্নানের বাড়ি একই গ্রামে। স্বাস্থ্য সচিবের পরিবারের দেওয়া জায়গায় সম্প্রতি কমিউনিটি ক্লিনিকের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ক্লিনিক নির্মাণের ব্যাপারে সংসদ সদস্যকে জানানো হয়নি– এমন অভিযোগে বেশ কিছুদিন আগে থেকে ওই সংসদ সদস্যের অনুগতদের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম হয়। এ অবস্থায় গতকাল রাতে নিজ বাড়িতে আসেন স্বাস্থ্য সচিব আবদুল মান্নান।
আজ সকালে তিনি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ কাজের অগ্রগতি দেখতে যান। এ সময় ২০ থেকে ২৫ জন লোক সংসদ সদস্যকে কেন জানানো হয়নি এজন্য নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখতে বলেন। এ নিয়ে সচিবের সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা-কাটাকাটির পর তাঁরা ফিরে যান।
পরে দুপুর ১টার দিকে লাঠি ও ধারালো অস্ত্র হাতে শতাধিক লোক স্বাস্থ্য সচিবের বাড়ির সামনে এসে এসে গালিগালাজ করতে থাকেন ও নির্মাণকাজ বন্ধ করতে শ্রমিকদের মারধর করেন। এ সময় বাড়িতে উপস্থিত উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশরাফুল আলম এগিয়ে এসে বিষয়টি জানতে চাইলে তাঁর ওপর হামলা চালানো হয়। একপর্যায়ে হামলাকারীরা তাঁকে ধাক্কা দিয়ে পুকুরে ফেলে দেন।
খবর পেয়ে প্রথমে পুলিশ ও পরে র্যাব সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ব্যাপারে মুঠোফোনে চেষ্টা করেও সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
তবে স্বাস্থ্য সচিবের ছোট ভাই নাসির উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, ‘হামলাকারীদের অনেকেই আমাদের পরিচিত। হামলাকারীদের বেশির ভাগ আওয়ামী লীগের কর্মী। তবে হামলাটি পরিচালিত হয়েছে মূলত চাঁনপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মুরাদ মিয়ার নেতৃত্বে।’