কিশোরগঞ্জে বরখাস্ত হওয়া দুই ইউপি চেয়ারম্যানের হয়রানির অভিযোগ
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের সময় এলাকায় অবস্থান করে ত্রাণ বিতরণসহ সার্বিক কাজে সহায়তা না করে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় কিশোরগঞ্জের দুই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। সাময়িক বরখাস্ত হওয়া দুই ইউপি চেয়ারম্যান হলেন বাজিতপুর উপজেলার হালিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান হাজি মো. কাজল ভূঁইয়া ও নিকলী উপজেলার সিংপুর ইউপির চেয়ারম্যান মো. আনোয়ারুল হক।
কিশোরগঞ্জের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মোহাম্মদ আবদল্লাহ বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, দুই ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে এ ব্যাপারে পৃথক দুইটি প্রজ্ঞাপন জারি করা করেছে।
তবে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া দুই চেয়ারম্যান তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে গৃহীত পদক্ষেপকে রাজনৈতিক হয়রানিমূলক বলে দাবি করেছেন।
হালিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও বাজিতপুর উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি হাজি মো. কাজল ভূঁইয়া কর্মস্থলে অনুপস্থিতিসহ সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, ‘বিধবা ও বয়স্ক ভাতা, ভিজিডিসহ সব ধরনের সরকারি ত্রাণ কার্যক্রম যথাসময়ে সম্পন্ন করেছি। প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে, এই আসনের বর্তমান এমপি আফজাল হোসেনের শ্যালক ইউপি নির্বাচনে আমার কাছে পরাজিত হওয়ার পর থেকে মিথ্যা মামলা দায়েরসহ বিভিন্নভাবে হয়রানি করে আসছেন। এরই ধারাবাহিকতায় প্রভাব খাটিয়ে ইউএনওর মাধ্যমে মিথ্যা প্রতিবেদন পাঠিয়ে আমার বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
অপর দিকে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত সিংপুর ইউপির চেয়ারম্যান মো. আনোয়ারুল হক বলেন, ‘এমপি আফজাল হোসেনের মনোনীত প্রার্থীকে পরাজিত করার পর থেকেই আমাকে নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। এর ফলে এমপির প্রভাবে মিথ্যা মামলা দায়ের করে জেল খাটাসহ বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছি। কর্মস্থলে অনুপস্থিতি, বিভিন্ন ভাতা ও ত্রাণ বিতরণসহ সব কর্মকাণ্ড আমি উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের মধ্যে সবার আগে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করেছি। এমনকি করোনার কারণে জনগণকে অফিসে না এনে গ্রামে গ্রামে গিয়ে ত্রাণ পৌঁছে দিয়েছি। একটি লোকও আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে পারবে না। আমি আওয়ামী পরিবারের সন্তান, বর্তমানে জেলা কৃষক লীগের কার্যকরী সদস্য। উত্তরা শাখা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা হওয়ার পরও শুধু এমপি সাহেবের সাথে ভালো সম্পর্ক না থাকা ও বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে জয়লাভের কারণেই আমাকে হয়রানি করার জন্য এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
এ ব্যাপারে মুঠোফোন বন্ধ থাকায় বারবার চেষ্টা করেও কিশোরগঞ্জ-৫ (নিকলী-বাজিতপুর) আসনের সংসদ সদস্য আফজাল হোসেনের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের ইউনিয়ন পরিষদ-১ অধিশাখার উপসচিব মোহাম্মদ ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী স্বাক্ষরিত পৃথক দুইটি প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে কর্মস্থলে অনুপস্থিত এবং সরকারি ত্রাণ কার্যক্রমসহ অন্যান্য কার্যক্রম বাস্তবায়ন না করার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর উপজেলার হালিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাজি মো. কাজল ভূঁইয়া এবং নিকলী উপজেলার সিংপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আনোয়ারুল হককে স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন ২০০৯ এর ৩৪(১) ধারা অনুযায়ী স্বীয় পদ থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হলো।