কিশোরগঞ্জে আতিকের মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্তের দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো কর্মসূচি পালিত
কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার বাদলা ইউনিয়নের ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা সৈয়দ আতিকুর রহমানের (৪৬) মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো কর্মসূচি পালিত হয়েছে। ভূমি অফিসার্স কল্যাণ সমিতি ও কিশোরগঞ্জ সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে আয়োজিত এসব কর্মসূচিতে গতকালের মতো আজ রোববারও সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত সত্য উদঘাটনের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীকে আইনের আওতায় আনার দাবি উঠেছে।
এর মধ্যে আজ দুপুরে জেলা শহরের একটি হোটেলে কিশোরগঞ্জ সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত নিহত আতিকের মা সৈয়দা খায়রুন্নেছা কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, তাঁর ছেলে সৈয়দ আতিকুর রহমান সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়নি, তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যার বিচার করতে হবে।
নিহত আতিকের ছোট ভাই সৈয়দ আহসান আদিল সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়ে বলেন, ‘আমার ভাইয়ের স্ত্রী ও স্কুল পড়ুয়া কন্যা এবং আমার বৃদ্ধ পিতা-মাতাসহ সবাইকে জানতে দিন আতিক কিভাবে মারা গেছে।
সংবাদ সম্মেলনে নিহতের মেয়ে সৈয়দা লিথিয়া রহমান লিতুসহ আয়োজক অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
আতিকের সহপাঠী বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুলের অধ্যক্ষ আমিনুল ইসলাম হামিম বলেন, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীকে আইনের আওতায় আনা নিশ্চিত করতে অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সিদ্ধান্তক্রমে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
অপরদিকে আজ সকালে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে আতিক হত্যা নিয়ে প্রকৃত সত্য উদঘাটনের দাবিতে মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ ভূমি অফিসার্স কল্যাণ সমিতি কিশোরগঞ্জ জেলা শাখা। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচি চলাকালে বক্তারা উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা সৈয়দ আতিকুর রহমানের সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার প্রচারণাকে সম্পূর্ণ মিথ্যা উল্লেখ করে ঘটনাটিকে পরিষ্কার হত্যাকাণ্ড বলে দাবি করেন এবং এবং অবিলম্বে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত সত্য উদঘাটনের দাবি জানান।
মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্য দেন ভূমি অফিসার্স কল্যাণ সমিতি কিশোরগঞ্জ জেলার সভাপতি জ্যোতির্ময় রায়, সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান, কেন্দ্রীয় কমিটির মহিলা বিষয়ক সম্পাদক সেলিনা ইয়াসমিন এবং কার্যকরী সদস্য এস এম হাফিজুর রহমান।
এর আগে গতকাল শনিবার কিশোরগঞ্জ সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশের কর্মসূচি পালিত হয়। কিশোরগঞ্জ সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচি চলাকালে বক্তারা উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা সৈয়দ আতিকুর রহমানের সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার প্রচারণাকে সম্পূর্ণ মিথ্যা উল্লেখ করে ঘটনাটিকে পরিষ্কার হত্যাকাণ্ড বলে দাবি করেন। তাই অবিলম্বে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্য প্রকৃত সত্য উদঘাটনের দাবি জানান।
গত ৬ ডিসেম্বর সকালে মোটরসাইকেলে করে কর্মস্থলে যাওয়ার পথে কিশোরগঞ্জ-চামড়াবন্দর সড়কে উপজেলার নিয়ামতপুর ইউনিয়নের মনসন্তোষ এলাকায় রহস্যজনকভাবে নিহত হন সৈয়দ আতিকুর রহমান। নিহত সৈয়দ আতিকুর রহমান কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের নগুয়া এলাকার সৈয়দ আবু সাহিদের ছেলে। তিনি নিকলী উপজেলার ধারীশ্বর গ্রামের সৈয়দ বাড়ির সন্তান।
এ ঘটনায় নিহত আতিকের বাবা সৈয়দ আবু সাহিদ করিমগঞ্জ উপজেলার সূতারপাড়া ইউনিয়নের পুরান চামটা গ্রামের সাইফুল ইসলাম নামের এক যুবককে আসামি করে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ আইনে করিমগঞ্জ থানায় একটি মামলা করেছেন।
পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহত আতিকের পরিবারের দেওয়া তথ্য মতে জানা যায়, কথিত ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া দুর্ঘটনাকবলিত কিশোরগঞ্জ-হ ১২-৬০১৭ নম্বরের হিরো মোটরসাইকেলটি সৈয়দ আতিকুর রহমানের নয়। তিনি নিজের টিভিএস মোটরসাইকেল (কিশোরগঞ্জ-হ ১২-২৬২৬) নিয়ে কিশোরগঞ্জ থেকে কর্মস্থল ইটনা উপজেলার বাদলায় যাচ্ছিলেন। বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করার পর করিমগঞ্জ থানা পুলিশের একটি দল ওইদিন বিকেলে ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। সেখানে খোঁজাখুজির একপর্যায়ে অন্য এক স্থান থেকে সৈয়দ আতিকুর রহমানের টিভিএস মোটরসাইকেলটি অক্ষত উদ্ধার করে। এ ছাড়া শুধু মাথায় গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত সৈয়দ আতিকুর রহমানের প্যান্টের বেল্ট ছিল না। তাঁর নিথর দেহের কিছুটা দূরে বেল্ট পড়ে ছিল।
ওই ঘটনাগুলোর কারণেই আতিকের মৃত্যুকে হত্যাকাণ্ড হিসেবে মনে করে অনেকে। পরে পুলিশ তদন্ত করে দুর্ঘটনাকবলিত হিরো মোটরসাইকেলের চালক হিসেবে মামলায় উল্লেখিত আসামি সাইফুল ইসলামকে শনাক্ত করে। তবে তাকে এখন পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা করিমগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ফখরুল হাসান ফারুক জানান, সংঘটিত ঘটনায় সন্দেহ করার মতো অনেক উপাদান রয়েছে। সেগুলো গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। আশা করা যায় অভিযুক্তকে আটকসহ দ্রুতই সব রহস্যের সুরাহা সম্ভব হবে।