কারো ঘর পুড়ে, কেউ আলু পোড়া খায়
মিরপুরের রূপনগরের শিয়ালবাড়ীর বস্তিজুড়ে আতঙ্ক তখন। আগুনে জ্বলছে শত শত মানুষের স্বপ্ন। এই যখন পরিবেশ তখন কেউ ব্যস্ত আগুন নেভাতে। কেউ আবার ব্যস্ত আগুন থেকে আসবাবপত্র বাঁচাতে। এর ভেতরে ওঁত পেতে থাকা কেউ কেউ আবার ব্যস্ত চুরি করতে!
আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর মিরপুরের রূপনগরের শিয়ালবাড়ী বস্তিতে আগুন লাগায় পুড়ে যায় শতাধিক ঘরবাড়ি। সে সময় বস্তির অনেক মানুষ ব্যস্ত হয়ে পড়ে ঘর থেকে তাদের আসবাবপত্র বের করতে। তড়িঘড়ি করে রাস্তার ধারে একে একে টিভি, ফ্রিজ, হাড়ি-পাতিল, চেয়ার-টেবিল ও জামা কাপড়সহ নানা আসবাবপত্র বের করে বস্তির মানুষ। এর পরই বাধে বিপত্তি। রাস্তায় রাখা বিপদগ্রস্ত ওইসব মানুষের টিভি ও ফ্রিজসহ নানা আসবাবপত্র চুরি হয়ে যায় সেখান থেকে।
দুপুরে শিয়ালবাড়ী বস্তির ভেতরে ঢুকে মালামাল খোয়া যাওয়া অন্তত ১০ জন মানুষের সঙ্গে কথা হয় এনটিভি অনলাইনের। এদেরই একজন রোকন উদ্দিন (২২)। তিনি সাত বছর ধরে থাকেন ওই বস্তিতে। একটি প্লাস্টিক কোম্পানিতে চাকরি করেন তিনি। আগুন লাগার খবর শুনেই অফিস থেকে রোকন চলে আসেন বস্তিতে। ঘর পুড়ে যাওয়ার ভয়ে ঘরে থাকা ফ্রিজ ও টিভিসহ অন্যান্য আসবাবপত্র স্ত্রীর সহযোগিতায় দ্রুত বের করেন রোকন। পরে রেখে আসেন বস্তির ৭ নম্বর রোডের ধারে। কিন্তু রাস্তায় গিয়ে হাড়ি-পাতিল পেলেও পাননি ফ্রিজ ও টিভি।
জানতে চাইলে রোকন উদ্দিন বলেন, ‘মানুষের ভেতরে একটুও মানবতা নেই। আগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যাওয়ার ভয়ে আমরা টিভি ও ফ্রিজসহ সব কিছু ঘর থেকে বের করে রেখে এলাম আর মানুষ তা চুরি করে নিয়ে গেল! ছিঃ, মানুষ কত খারাপ। জিনিস না হয় আবার কিনতে পারব, কিন্তু এ কেমন মানুষ?’
ঝরনা বেগম (৫০) রাস্তায় আসবাবপত্র রেখে আবার ঘরে গিয়েছিলেন। ফিরে এসে দেখেন তাঁর টিভি নেই সেখানে! পরে পরিবারের অন্য সদস্যদের দিয়ে তিনি জিনিসপত্র আনান। আর নিজে বসেছিলেন রাস্তায়। তিনি বলেন, ‘আমি টিভিটা রেখে মাত্র ঘরে গেলাম। এসে দেখি টিভি নেই। এ কেমন ধরনের মানুষ?’
জোহরা বেগম (৫৮) ও তাঁর মেয়ে শামসুন্নাহার (৪১) তিন বছর ধরে শিয়ালবাড়ীর বস্তিতে থাকেন। দুজন দুই কক্ষে ভাড়া থাকেন। তাদের মধ্যে জোহরার হাড়ি-পাতিল চুরি হয়েছে। শামসুন্নাহারের চুরি হয়েছে তিনটি শাড়িসহ মেয়ের কয়েকটি পোশাক। জোহরা বেগম বলেন, ‘দুই মাস আগে ভালা ভালা হাড়ি-পাতিল কিনছি। চৌকি আর ফ্যান ছাড়া আজ আমার সবকিছু হারাই গ্যাছে।’
সুফিয়া বেগমের একটি টিভি চুরি হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি রাস্তায় জামা কাপড় রাখার জায়গায় টিভি রাইখা আইলাম শাড়ি দিয়ে ঢাইকা। পরে গিয়া দেখি আর নাই। এমন বিপদের দিনে মানুষ কীভাবে চুরি করে? আল্লার কাছে বিচার দিলাম।’
রাবেয়া আক্তারেরও চুরি হয়েছে এক বস্তা হাড়ি-পাতিল। তিনি বস্তায় করে হাড়ি-পাতিল রেখে এসেছিলেন রাস্তায়। পরে গিয়ে আর পাননি। এ ছাড়া রাইসুল ফাহাদ নামের আরেকজনেরও খোয়া গেছে একটি পড়ার টেবিল। ওই টেবিলে তাঁর মেয়ে মনজুয়ারা খাতুন লেখাপড়া করত। রাস্তা থেকে চুরি হওয়ার ভয়ে রাফাত নামের একজনকে দেখা গেছে এক তলার উপর জিনিসপত্র তুলে রাখতে। তিনি বলেন, ‘যখন জিনিসপত্র বের করছিলাম তখন এখানে কেউ ছিল না। তাই চুরির ভয়ে উপরে রেখেছিলাম।’