‘করোনা রোগীর সেবা করে মারা গেলে কোনো আফসোস নেই’
রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের এনেসথেশিয়লজি ও আইসিইউ বিভাগের প্রধান ডা. শাহজাদ হোসেন শুরু থেকেই করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর একটাই দাবি, নিজ গ্রামে পৈতৃক ভিটে-মাটি ও বাড়ির সঙ্গে পারিবারিক কবরস্থান রয়েছে। ওই কবরস্থানে মা, চাচা-চাচি, দাদা-দাদি চিরনিদ্রায় শায়িত রয়েছেন। দায়িত্ব পালনকালে যদি তিনি মারা যান, এতে তাঁর কোনো আফসোস নেই। তবে গ্রামবাসী যেন তাঁর শেষ ঠিকানা মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার মনসুরনগর ইউনিয়নের সরখরনগর গ্রামের পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করার অনুমতি দেন।
এই কথাগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
ডা. শাহজাদ হোসেনের সেই ফেসবুকের লেখাটি এনটিভি অনলাইনের পাঠকের জন্য হুবহু দেওয়া হল : ‘আমি এখানে একটা পোস্ট দিতে চাই। আমার আত্মীয়রা ছাড়া কেউ আমাকে চিনবেন না। কারণ বাবার চাকরির জন্য জন্ম থেকেই আমি সিলেটের বাইরে ছিলাম। মাঝে বছর দশেক আমি মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে কাজ করেছি, এনেসথেশিয়া বিভাগের প্রধান হিসেবে। ২০০৪ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত। তখন কেউ কেউ আমার সাথে পরিচিত হয়েছেন। আমি ২০১৩ সাল থেকে ঢাকায় সরকারি কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে এনেসথেশিয়া বিভাগের প্রধান হিসাবে কাজ করছি। মার্চ মাসের শুরুতে এই হাসপাতালকে করোনা চিকিৎসার জন্য নির্দিষ্ট করা হয়। তখন থেকে আমি এই হাসপাতালের সবচেয়ে সংবেদনশীল বিভাগের প্রধান হিসেবে কাজ করছি। আমার নেতৃত্বে এই আইসিইউতে চল্লিশ জন চিকিৎসক ও পঁয়তাল্লিশ জন নার্স কোভিড রোগীদের নিবিড় চিকিৎসা দিয়ে আসছেন। এই সময়কালে আমি সব ভয়ভীতি ত্যাগ করে রোগীদের সেবায় আত্মনিয়োগ করেছি। আমি জানি, যেকোনো সময় আক্রান্ত হতে পারি এবং বয়স ও শারীরিক কারণে মৃত্যুর মুখোমুখি হতে পারি। তবু কখনোই আমি আমার কর্তব্যে বিন্দুমাত্র অবহেলা করিনি।
‘আমি এই গ্রামের সন্তান। আমার বাবার নাম সুরুজ মিয়া। যাঁকে অনেকেই দারোগা সাহেব বলে জানেন। এই গ্রামে আমাদের পৈতৃক ভিটা। বাড়ির সামনে দীঘির পাড়ে আমাদের পারিবারিক কবরস্থান। যেখানে আমার মা, চাচা-চাচি চিরনিদ্রায় শায়িত। আমার দায়িত্বের কারণে আমি যদি মৃত্যুবরণ করি আমার কোনো আফসোস নেই, আমি ধরে নিব, আল্লাহ আমার জন্য এটাই নির্ধারিত রেখেছেন। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী আমার দাফন আন্জুমানে মফিদুল ইসলাম সরকার নির্ধারিত কবরস্থানে করার কথা। কিন্তু আপনাদের কাছে আমার আবেদন, যদি এটা ঘটেই তবে গ্রামবাসী যেন আমার কবরটি আমার পারিবারিক গোরস্থানে করার অনুমতি দেন। আমার আর কিছুই চাওয়ার নেই।’
‘দেশের জন্য আমার কর্তব্যের বিনিময়ে আমি আপনাদের কাছে এইটুকু চাই। আমার পরিবার করোনা ছড়াবে না এরকম নিরাপদভাবে এই ব্যবস্থা করতে সক্ষম হবেন। আশা করি, আমার লেখাটি অ্যাডমিন এখানে পোস্ট করবেন। আমার জন্য দোয়া করবেন যেন, আমি আপনাদের গর্বিত করতে পারি। সকলের মঙ্গল কামনা করি।’