‘করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বলেই অর্থনীতির চাকা ঠিকভাবে চলছে’
করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকার কারণেই দেশে অর্থনীতির চাকা সচল রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) আয়োজিত মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে আজ সোমবার এ মন্তব্য করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
এ সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আজ যেসব দেশে করোনা পরিস্থিতি ভালো আছে, (সেসব দেশে) ইকোনমি (অর্থনীতি) ভালো আছে। বাংলাদেশের ইকোনমি প্লাস কেন আছে? কারণ করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, সে কারণেই অর্থনীতির চাকা ঠিকভাবে চলছে। আমদানি-রপ্তানি চলছে। আমাদের এখানে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছে, যা সর্বকালের... বাংলাদেশের ইতিহাসে আমার মনে হয় এ রকম কখনো হয়নি যে এত রেমিট্যান্স এসেছে। ২২ বিলিয়ন ডলার এক বছরে এসেছে। যদি দেশের প্রতি লোকের আস্থা না থাকত, তাহলে আপনি এই রেমিট্যান্স পেতেন না।’
জাহিদ মালেক আরো বলেন, ‘দেশে খাবারের অভাব হয়নি, চিকিৎসার অভাব হয়নি। হাসপাতালের বাইরে পড়ে মরে গেছে লোকজন হাজার হাজার—এ রকম ঘটনা বাংলাদেশে ঘটেনি। অলি-গলিতে লোক মরে পড়ে আছে—এ ধরনের ঘটনাও ঘটেনি। সেজন্য সবই চলমান রয়েছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা, গাড়ি-ঘোড়া চলছে, ফ্যাক্টরি চলছে, আমদানি-রপ্তানি আছে, সব কিছুই স্বাভাবিক আছে।’
দেশে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন, ২৫ বা ২৬ জানুয়ারি দেশে করোনার টিকার প্রথম লট আসবে। টিকা দেওয়ার জন্য ৪২ হাজার কর্মীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। হাসপাতাল বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারেই টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঢাকায় প্রস্তুত রয়েছে ৩০০টি কেন্দ্র। এ ছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে টিকা দেওয়ার পাশাপাশি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলে তার সেবাও দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘এখন আমরা কী করেছি, আপনাদের কিছু ধারণা দিলাম। এমনকি মাস্ক যে একটা কার্যকর ব্যবস্থা, এটা আগে অনেকেরই জানা ছিল না। এই বিষয়টি আমরা তুলে ধরলাম। একটা সার্ভিস পেতে হলে পরে আপনাকে মাস্ক পরতে হবে। ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’—এটা কিন্তু আমাদের একটা স্লোগান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্লোগান। আমরা প্রধানমন্ত্রীকে বিষয়টি জানিয়েছি। উনি আনন্দের সঙ্গে অনুমোদন দেওয়ার পরে সব মন্ত্রণালয় এবং সব প্রাইভেট সেক্টর এটাকে গ্রহণ করে। এবং গ্রহণ করার ফলে দেখুন আমাদের করোনা কতখানি নিয়ন্ত্রণে আছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরো বলেন, ‘আজ করোনা কমে যাচ্ছে। মানুষ সেকেন্ড ওয়েভের কথা বলে। আমাদের এখানে সেকেন্ড ওয়েভ কবে শুরু হলো, আমরা বুঝতে পারলাম না। এখন সেকেন্ড ওয়েভ কিন্তু বলা যায় ফার্স্ট ওয়েভের চেয়েও নিচে নেমে গেছে। এখন ওয়ান পয়েন্ট ফাইভ—এই পর্যায়ে কিংবা ফোর পয়েন্ট ফাইভ...ফোর পয়েন্ট নাইন ফাইভ—এই পর্যায়ের মধ্যে আছে আক্রান্তের সংখ্যা। এবং মৃত্যুর সংখ্যা অনেক কমে গেছে। এটা একটা আনন্দের বিষয় যে আমাদের দেশে প্রাণহানি কম হচ্ছে।’
সাংবাদিকদের উদ্দেশে জাহিদ মালেক বলেন, ‘আমরা চাই না, একটি প্রাণহানিও হোক। এবং এই যে মৃত্যুর সংখ্যা কমেছে, আক্রান্তের সংখ্যাও কমেছে, এর পেছনে সবাই-ই কাজ করেছে, আপনারাও কাজ করেছেন, প্রচার-প্রচারণা করেছেন। আপনারা বলেছেন, পত্র-পত্রিকায় লিখেছেন। যার ফলে লোকে সজাগ হয়েছে, মাস্ক পরতে শিখেছে, সঠিক চিকিৎসা সঠিক সময়ে নিতে শিখেছে। আমাদের দেশের প্রায় ৫০ পারসেন্ট লোক মারা গেছে..ষাটোর্ধ্ব লোক। আরো প্রায় ৩০ পারসেন্ট লোক মারা গেছে, ৫০ বা ৬০-এর মধ্যে যাঁরা আছেন। কাজেই তাঁদের সজাগ করে দেওয়া, তাঁদের সতর্কতার সঙ্গে চলাফেরা করা—এটা বলে দেওয়ার দায়িত্ব আমাদের সবার।’
সাংবাদিকদের উদ্দেশে মন্ত্রী আরো বলেন, ‘আপনাদের কাছ থেকে আমরা কী চাই, আপনাদের কাছ থেকে চাই যে, আপনারা এই কথাগুলো তুলে ধরুন, এই কথাগুলো মানুষের কাছে বলেন যে, বাংলাদেশ ভালো আছে। শুধু আমরা করোনার ট্রিটমেন্টই করিনি, করোনার পেশেন্টের...আমাদের যে নন-কোভিড অর্থাৎ নন-করোনা পেশেন্ট আছে, তারা তো সংখ্যায় বেশি। হাসপাতালের সংখ্যা আগের মতোই, আইসিইউ আগের মতোই আছে, কিন্তু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।’