করোনায় সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ও বিশেষ প্রণোদনা দিতে সরকারকে আইনি নোটিশ
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনা সংক্রমণের মধ্যে দায়িত্ব পালন করায় সাংবাদিকদের নিরাপত্তা এবং বিশেষ প্রণোদনা দিতে সরকারকে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার সকালে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনিরুজ্জামান লিংকন ই-মেইলের মাধ্যমে তথ্য সচিব, অর্থসচিব, বাংলাদেশের করোনা প্রতিরোধ সেল বরাবরে এ নোটিশ পাঠান।
নোটিশে আগামী সাত দিনের মধ্যে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়। অন্যথায় উচ্চ আদালতে এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়।
নোটিশে আইনজীবী মনিরুজ্জামান লিংকন বলেন, ‘যেহেতু করোনাভাইরাস সারা বিশ্বে মহামারি আকার ধারণ করেছে যার ব্যাপকতা আমার প্রিয় স্বদেশকে দারুণভাবে আক্রান্ত করেছে এবং এর প্রভাবে জনজীবন স্থবির হয়ে গেছে। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এবং বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সর্বস্ব নিয়োগ করে এই যুদ্ধে জয়ী হওয়ার জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।’
নোটিশে বলা হয়, ‘যেহেতু করোনাভাইরাসের সুনির্দিষ্ট কোনো ওষুধ আজ পর্যন্ত আবিষ্কার হয়নি এবং সামাজিক সচেতনতাই এই ভাইরাস নিবারণের একমাত্র স্বীকৃত পন্থা হিসেবে পরিগণিত হয়ে আসছে এবং এই সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য যারা সব থেকে বেশি অবদান রাখছে সেটা হলো আমাদের মিডিয়া এবং এর সঙ্গে কর্মরত সাংবাদিক বন্ধুরা।
এ ছাড়া যেহেতু সারা পৃথিবীর সাথে আমরা নিজেরাও করোনা প্রতিরোধ যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছি এবং এই যুদ্ধের অগ্রভাগে লাইনে ডাক্তার ছাড়াও যারা সবথেকে বেশি ভূমিকা রাখছে তারা হলো আমাদের সাংবাদিক সমাজ। একমাত্র সাংবাদিক সমাজের মাধ্যমে এই যুদ্ধে এই ভাইরাস সম্পর্কিত সব তথ্য আমরা পেয়ে যাচ্ছি এবং যার পরিপ্রেক্ষিতে মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এই যুদ্ধে জয়ী হওয়ার আশা তৈরি হচ্ছে।’
নোটিশে আইনজীবী আরো বলেন, ‘এটা অনস্বীকার্য যে কোনো যুদ্ধে জয়ী হওয়ার জন্য যেমন যোদ্ধাদের সুসজ্জিত রাখা প্রয়োজন তেমনি তাদের যুদ্ধ, অস্ত্র, যুদ্ধের ময়দানে তাদের যুদ্ধ করার জন্য তাদের মনোবল এবং তাদের অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা একান্ত আবশ্যক যাতে পরে এই যোদ্ধারা মাঠে তাদের প্রাণপণ লড়াই করে সেই সংগ্রামে জয়ী হতে পারে, যেটা করোনা যুদ্ধে জয়ী হওয়ার জন্য আমাদের একান্ত আবশ্যক।
যেহেতু বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা জানার পাশাপাশি নানাবিধ গুজব রটনা হয়, তাই এই সংক্রান্ত বিষয়ে নিরসনের জন্য যারা সঠিক তথ্য জনসাধারণের সামনে বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে উপস্থাপন করেন এবং খবরের ভেতরে গিয়ে খবর সংগ্রহ করেন তারা হলো আমাদের সাংবাদিক সমাজ। সংগত কারণে এই সাংবাদিক সমাজকে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে গণ্য করা হয়।
বর্তমানে এই ক্রান্তিকালে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে চিহ্নিত যে সাংবাদিক সমাজ যারা এই যুদ্ধে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ী হওয়ার জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সংবাদ সংগ্রহ করে মানুষকে অবহিত করছে, তাদের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ময়দানে থেকে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে, তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের জন্য একান্ত আবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, সাংবাদিকদের কাজ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, যেটা রাষ্ট্রের যেকোনো ক্রান্তিকালে সেই ঝুঁকির পরিমাণ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। ঠিক তেমনিভাবে বর্তমান ক্রান্তিকালে তাদের ঝুঁকির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ইতিমধ্যে সংবাদ সরবরাহ করতে গিয়ে অনেক সাংবাদিক এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। করোনা প্রতিরোধ যুদ্ধে সম্মুখসারির যোদ্ধা হিসেবে তাদের নিরাপত্তা প্রদান এবং এজন্য পিপিইসহ নিরাপত্তা সরঞ্জামাদি প্রদান এবং তাদের জন্য বিশেষ প্রণোদনা দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দেখা দিয়েছে।
তাই এই লিগ্যাল নোটিশ প্রদানের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এই বিষয়ে আগামী সাতদিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হলো। অন্যথায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।