করোনায় ফেসবুক-ইউটিউবে ব্যস্ত ঘরবন্দি শিক্ষার্থীরা, উদ্বিগ্ন অভিভাবকেরা
নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে। শিশু, কিশোর ও তরুণদের ঘরের চার দেয়ালের মধ্যেই কাটছে গৃহবন্দি জীবন। ঘরে কী করছে শিক্ষার্থীরা? কেমন করে কাটছে তাদের সময়?
একাধিক অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পড়ার বইয়ের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক নেই বললেই চলে। লেখাপড়ায় মনোযোগও নেই আগের মতো। পুরো সময় কাটছে টিভি দেখে আর স্মার্ট ডিভাইসে। অনেকের আচার ব্যবহারেও এসেছে বেশ বড় ধরনের পরিবর্তন। এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অভিভাবকেরা।
এই অবস্থা চলতে থাকলে শিক্ষার্থীদের সামনের দিনগুলো কেমন হতে পারে? জানতে চাইলে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. এইচ এ এম নাজমুল আহসান বলেন, ‘প্রতিটি মানুষের শরীরে যেমন পুষ্টি দরকার, তেমনি মস্তিকেরও পুষ্টি দরকার হয়। সারা দিন ফেসবুক-ইউটিউবে থাকলে মস্তিকের সৃজনশীলতা নষ্ট হয়ে যায়। চিন্তায় পরিবর্তন আসে। ভালো চিন্তা বাদ দিয়ে খারাপ চিন্তাগুলো মস্তিষ্কে ভর করে। আচার-আচরণ বদলে যায়। মানুষের সঙ্গে ব্যবহারও খারাপ হতে থাকে। ফলে এখনই শিক্ষক ও অভিভাবকদের বিশেষ নজর দিতে হবে ঘরবন্দি থাকা তরুণ শিক্ষার্থীদের দিকে।’
অভিভাবক রফিকুল ইসলাম বলছিলেন, ‘আমার ছেলে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। ছুটির এই পুরো সময়টাতে আমরা চেষ্টা করেও তাকে বইয়ের কাছে নিতে পারিনি। সারা দিন নিজ কক্ষে বসে হয় ল্যাপটপে নতুবা মোবাইল ফোনে মাথা গুঁজে থাকে। প্রতিদিন শেষরাতে ঘুমাতে যায়, বিকেলে ঘুম থেকে ওঠে। ওর কোনো কাজে বাধা দিলেই মায়ের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে। কেমন যেন খিটখিটে স্বভাবের হয়ে গেছে ছেলেটা।’
একই কথা জানালেন সরকারি চাকরিজীবী আনিসুর রহমান। তাঁর ছেলে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
আনিসুর রহমান বলেন, ‘অধিকাংশ সময়ই ছেলের সময় কাটে নিজের ঘরে। সেখানে কী করে কিছুই জানি না। এখন বড়ো হয়েছে, বেশি কিছু বললে মাইন্ড করে। কিন্তু লেখাপড়া বাদ দিয়ে সারা দিন ফেসবুক নিয়ে থেকে ওর যে ক্ষতি হচ্ছে, সেটা আমরা বুঝতে পারছি। কিন্তু কী করব?’
শিক্ষক রবিউল ইসলাম বলেন, ‘স্কুল পর্যায়ে অনলাইনে আমার শিক্ষার্থীদের নিয়ে কিছু ক্লাস হচ্ছে, এটা ভালো দিক। প্রতিটি ব্যাচের শিক্ষার্থীদের পৃথক ফেসবুক গ্রুপ আছে। ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থীর হাতে স্মার্টফোনও আছে। পড়াশোনা বাদ দিলাম, ওই গ্রুপগুলোতেও যদি শিক্ষার্থীরা নিয়মিত অ্যাকটিভ থাকে, তাহলেও কিন্তু তাদের মানসিক অবস্থাটা কিছুটা হলেও ভালো রাখা যেত।’
রবিউল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের রক্ষায় আমাদের শিক্ষকদের কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে। এমন অসংখ্য অভিভাবক তাঁদের সন্তানদের নিয়ে চিন্তার মধ্যে আছেন।’
করোনাকালে অধিকাংশ শিক্ষার্থীর সময় কাটছে মোবাইল, ল্যাপটপ আর টিভি দেখে। অনেক তরুণ ভিডিও গেমে আসক্ত হয়ে পড়েছে। সারা দিন ইন্টারনেটে থেকে পর্নোগ্রাফির দিকে ঝুঁকছে অনেক তরুণ।
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. এহসানুল কবীর বলেন, ‘এখনকার তরুণেরা বেশ সেনসেটিভ। তাদের বেশি বিরক্ত না করাই ভালো। পাশাপাশি তাদের লেখাপড়ার মধ্যেও রাখতে হবে। টিভি দেখা বা ঘরের মধ্যে খেলাধুলার (লুডু, দাবা, ক্যারাম) ব্যবস্থা করতে হবে। এখন আপনি যদি নিজেই সারা দিন মোবাইল নিয়ে পড়ে থাকেন, তাহলে তো আপনার সন্তান সেটাই করবে। করেনাকালীন সন্তানদের কিছুটা সময় দেওয়া প্রয়োজন, এটা কিন্তু ভালো সুযোগ। পাশাপাশি তাদের সঙ্গে সদ্ব্যবহারও করতে হবে।’