করোনার নতুন স্ট্রেইন ধরা পড়লেও সরকার গোপন রাখে : মির্জা ফখরুল
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করে বলেছেন, ‘দেশে পাঁচ জানুয়ারি করোনার নতুন স্ট্রেইন ধরা পড়লেও তা গোপন রাখা হয়। সরকার তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি বাস্তবায়নে সময়ক্ষেপণ করে এবং সংক্রমণের বাস্তবচিত্র গোপন করে।’ আজ শুক্রবার বিকেলে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এ অবস্থায় বিএনপি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর সব কর্মসূচি স্থগিত করে এবং সরকারের কর্মসূচি স্থগিতের আহ্বান জানায়। কিন্তু সরকার জনস্বার্থ উপেক্ষা করে তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি বাস্তবায়নে সমগ্র প্রশাসনকে ব্যস্ত করে রাখে। এতে করে করোনা সংক্রমণ দমন ও নিয়ন্ত্রণে বিলম্বের কারণে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করে।’
বিএনপির মহাসচিব আরও বলেন, ‘দেশে করোনা মহামারি এক ভয়াবহ রূপ পরিগ্রহ করেছে। সরকারের উদাসীনতা, অগ্রাধিকার নির্ধারণে ইচ্ছাকৃত উপেক্ষা, রাজনৈতিক কর্মসূচি বাস্তবায়নের অপকৌশল হিসেবে করোনা সংক্রমণের তথ্য গোপন ও সীমাহীন ব্যর্থতা আজ পুরো দেশকে এক বিপদ সঙ্কুল পথে নিয়ে চলেছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘বিশ্বের জনবান্ধব রাষ্ট্রগুলো যখন সংক্রমণ প্রতিরোধে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করতে শুরু করে বাংলাদেশের সরকার তখন স্বভাবসূলভ বলতে শুরু করে, ‘আমরা করোনার চেয়ে শক্তিশালী। যে দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সে দেশে করোনা কিছুই করতে পারবে না।’ এসব বক্তব্য দিয়ে তারা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা শুরু করে এবং করোনা প্রতিরোধে সামান্যতম উদ্যোগ গ্রহণ না করে একটি বিশেষ অনুষ্ঠান আয়োজন নিয়ে বিভোর থাকে।’
‘করোনা মোকাবেলায় সরকারের সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও প্রস্তুতির ক্ষেত্রে উদাসীনতায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে করোনার সম্মুখযোদ্ধা চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। নিম্নমানের সুরক্ষা সামগ্রীর কারণে ব্যাপকভাবে আক্রান্ত হয়ে পড়ে ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। পৃথিবীর কোনো দেশেই এত বিপুল সংখ্যক ডাক্তার করোনায় আক্রান্ত কিংবা মৃত্যুবরণ করেননি।’
টিকার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘করোনা মোকাবিলায় টিকার কোনো বিকল্প নাই। এ পর্যন্ত দেশে টিকা এসেছে এক কোটি দুই লাখ ডোজ। তার মধ্যে ৩২ লাখ উপহার। ৭০ লাখ কিনেছে ত্রিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে। তিন কোটি টিকা কেনার কথা। চুক্তি অনুযায়ী প্রতিমাসে ৫০ লাখ টিকা পাওয়ার কথা। জানুয়ারিতে ৫০ লাখ, ফেব্রুয়ারিতে ২০ লাখ এসেছে। মার্চে কোনো টিকা আসে নাই, কবে পরের চালান আসবে কেউ জানেন না। এ পর্যন্ত প্রায় ৫৫ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে। ৮ এপ্রিল ২০২১ তারিখ থেকে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া শুরু হয়েছে। বর্তমান মজুত অনুসারে সবাই দ্বিতীয় ডোজ পাবে না।’
‘জাতির এই চরম দুর্যোগপূর্ণ সময়ে আমরা জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছিলাম। কোটি কোটি মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম খাত আরএমজি সেক্টরে কয়েক হাজার গামেন্টস বন্ধ হয়েছে। ৪০ লাখ শ্রমিকের জীবন-জীবিকা আবার অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে দশ লাখ শ্রমিক চাকরি হারিয়েছে। অর্থের অভাবে ঢাকা ছাড়ছে শত শত পরিবার। তাই সরকারের প্রতি আমাদের আবারও আহ্বান আসুন, আমরা জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে এ সংকট মোকাবেলায় উদ্যোগী হই’, যোগ করেন মির্জা ফখরুল।