করোনার কারণে এবার হচ্ছে না লালন শাহের তিরোধান দিবসের অনুষ্ঠান
বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের ১৩০তম তিরোধান দিবস কাল শনিবার। আর এই দিবসটিকে ঘিরে প্রতি বছরই আধ্যাত্মিক গুরু ফকির লালনকে স্মরণ ও তাঁর দর্শন পাওয়াসহ অচেনাকে চেনা, জ্ঞান সঞ্চয়, আত্মার শুদ্ধি ও মুক্তির লক্ষে সাধু সঙ্গে ও পুণ্য সেবায় যোগ দিতে আত্মিক প্রশান্তির প্রয়াসে সাঁইজির ধামে আসেন লালন ভক্ত-অনুসারী ছাড়াও অসংখ্য দেশ-বিদেশের দর্শনার্থী। কিন্তু মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে এবার হচ্ছে না ১ কার্তিক বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের ১৩০তম তিরোধান দিবসের অনুষ্ঠান।
জেলা প্রশাসন করোনাভাইরাসের কারণে এবার তিরোধান দিবসের সব অনুষ্ঠান স্থগিত করায় হতাশ লালনের ভক্ত-অনুসারীরা। তার পরও তিরোধান দিবস উপলক্ষে দূর-দূরান্ত থেকে কুষ্টিয়ায় আসতে শুরু করেছে বাউল-ফকির ও ভক্তরা। আখড়াবাড়ির প্রধান গেট তালাবন্ধ থাকায় সেখানে ঢুকতে না পেরে কালী নদীর তীরে লালন একাডেমির বিশাল মাঠে জড়ো হয় তারা। কিন্তু দুই দিন আগে সেখান থেকেও বাউল-ফকির ও ভক্তদের বের করে দিয়ে মাঠে ঢোকার সব গেটে তালাবদ্ধ করে দেয় কমিটির লোকজন। এখন তারা লালন একাডেমির সামনের রাস্তা ও আশপাশের এলাকায় জড়ো হচ্ছে।
এখানে আসা বাউল-ফকির ও ভক্তরা বলছে, তারা এখানে আসে সাঁইজিকে স্মরণ করতে। তাদের ধর্মনীতি পালন করতে দেওয়া হোক। না হলে অধর্ম হবে। করোনার কারণে মেলা না হোক, লালনের মৃত্যুবার্ষিকী পালন করতেই হবে। তাই অতিদ্রুত লালনের মাজারের প্রধান গেটের তালা খোলাসহ সাধুদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার দাবি তাদের।
এখানকার ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনার কারণে গত সাত মাস লালনের আঁখড়াবাড়ি বন্ধ আছে। এতে তাদের চরম লোকসান হচ্ছে। আবার নতুন করে তিরোধান দিবসের অনুষ্ঠান স্থগিত করায় চরম বিপর্যয়ে সম্মুখীন হবেন তাঁরা।
আর লালন একাডেমির সভাপতি ও কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো. আসলাম হোসেন বলছেন, দূর-দূরান্ত থেকে আসা বাউল ও ভক্তরা একসঙ্গে হলে করোনার সংক্রমণ বাড়ার শঙ্কা রয়েছে। তাই জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সুপারিশ ও লালন একাডেমির অ্যাডহক কমিটির সিদ্ধান্তে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে স্থগিত করা হয়েছে তিরোধান দিবসের অনুষ্ঠান।
১২৯৭ বঙ্গাব্দের পহেলা কার্তিক মরমি সাধক বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের মৃত্যুর পর থেকে তাঁর স্মরণে প্রতি বছরই তিরোধান দিবসের অনুষ্ঠান চালিয়ে আসছে তার অনুসারীরা। এ উপলক্ষে আখড়াবাড়ি চত্বরে কালী নদীর তীরে মাঠে লালন মেলার আয়োজন করা হয়। আর আখড়াবাড়ির ভেতরে ও বাইরে লালন অনুসারী, ভক্তদের খণ্ড খণ্ড সাধু আস্তানায় গুরু শিষ্যের মধ্যে চলে লালনের জীবন-কর্ম নিয়ে আলোচনা ও তাঁর গান। আর রাতে লালন মঞ্চে চলে সাঁইজির জীবন-কর্ম নিয়ে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।