করোনাভাইরাস : কক্সবাজারে ১০০ শয্যার আইসোলেশন ইউনিট
করোনাভাইরাস মোকাবিলায় কক্সবাজারে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এজন্য প্রস্তুতি সভা করা হয়েছে জেলা প্রশাসন, জেলা স্বাস্থ্য বিভাগসহ সব উপজেলায়। রামু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নতুন দুটি ভবনকে করোনায় আক্রান্ত রোগীদের জন্য নির্ধারণ হয়েছে। দুটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভবনে ১০০ শয্যা আইসোলেশন ইউনিট করা হয়েছে।
গতকাল করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত জেলা কমিটির সভায় জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘করোনাভাইরাস মোকাবেলায় ৫০ শয্যা করে দুইটি হাসপাতাল প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রস্তত রয়েছে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য সাপোর্ট।’
জেলা প্রশাসক আরো বলেন, ‘বিমানবন্দরে প্রতিটি যাত্রীদের চেকআপ তথা করোনাভাইরাস আছে কিনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। এটি বাস্তবায়ন করছেন জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও সিভিল অ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষ। খোলা হয়েছে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। যার নম্বর ০১৭২৮৮৮৯১২। এখানে জেলার সব স্থানীয় নাগরিক এবং রোহিঙ্গাদের মধ্যে যে কেউ করোনা আক্রান্ত হলে সঙ্গে সঙ্গে তাকে এই বিশেষ সেবা কেন্দ্রে এনে চিকিৎসা দেওয়া হবে।’
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের পক্ষ থেকে কক্সবাজার বিমানবন্দর এবং টেকনাফ নৌ-বন্দরে মেডিকেল টিম পাঠানো হয়েছে। বিমানবন্দরে সংরক্ষণ করা হচ্ছে যাতায়াতকারী বিদেশি নাগরিকদের তথ্য। বিমানবন্দরের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্ব পালনকালে মাস্ক, গ্লাভসসহ নিরাপত্তামূলক বিভিন্ন সরঞ্জামাদি পরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যাতে তাঁদের কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত না হন। একই সঙ্গে স্ক্যানিংয়ের মাধ্যমে বিমানযাত্রীদের শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপ করা হচ্ছে বলে জানান জেলা প্রশাসক।
কক্সবাজার বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ্-আল-ফারুকের কাছে এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ব্যক্তিদের বিমানবন্দরে প্রবেশের পাশ (অনুমতিপত্র) দিতে বলায় আমি অনুমতিপত্র দিয়েছি। ঢাকা হযরত শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্ক্যানিং করে বিদেশি এবং বিদেশ ফেরত যাত্রীদের দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে। কক্সবাজার থেকে ডমেস্টিক ফ্লাইট চলাচল করে। তারপরও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছি। সরকারি নিদের্শনা মোতাবেক কাজ করছি।’
কক্সবাজার সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, সদর হাসপাতালে স্থাপিত ১০ শয্যাবিশিষ্ট আইসোলেশন সেন্টার পরিচালনার জন্য ১২ জনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যাঁদের মধ্যে ডাক্তার, নার্স এবং পরিচ্ছন্নতাকর্মী। বর্তমানে কক্সবাজারে করোনাভাইরাস পরীক্ষা করার কোনো ব্যবস্থা নেই। তবে, যদি কারো মধ্যে এই ভাইরাসের লক্ষণ প্রকাশ পায়। তাহলে তাঁকে হাসপাতালের আইসোলেশন সেন্টারে চিকিৎসাধীন রেখে প্রয়োজনীয় নমুনা সংগ্রহ করা হবে। এরপর সেই নমুনা ঢাকাস্থ আইইডিসিআর-এ পাঠানো হবে। সেখান থেকেই জানানো হবে নমুনা সংগ্রহকৃত ব্যক্তি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কি না।
এদিকে গতকাল বিকেলে কক্সবাজার স্বাস্থ্য বিভাগের আয়োজনে ইপিআই সেন্টারে এক বিশেষ সভায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (পরিকল্পনা ও গবেষণা) ডা. ইকবাল কবীর এসব কথা বলেন।
এতে বক্তব্য দেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোর্ডিনেশন সেলের প্রধান ব্রিগেডিয়ার (অব.) মোহাম্মদ আলী। জেলা সদর হাসপাতালের তত্ববধায়ক ডা. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, রামু উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নোবেল কুমার বড়ুয়া, চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শাহবাজ এবং সব উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ বিশ্ব সংস্থার কর্মকর্তাসহ সব এনজিওর শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে করোনাভাইরাস সংক্রান্ত জেলা কমিটির সচেতনামূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন। এতে শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, সরকারি কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন মহলের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় জেলা প্রশাসক করোনা ভাইরাস নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে সচেতনা বৃদ্ধিসহ কোনো প্রকার আতঙ্ক না ছড়ানোর জন্য অনুরোধ করেন। জেলা প্রশাসন থেকে এ বিষয়ে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে, যার নাম্বার- ০১৭২৪৪৪৫১৯২। এই নাম্বারে ফোন করলে ডাক্তার নিজে গিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করবেন।