করোনাভাইরাসের প্রভাব, রাজধানীতে মাস্ক সংকট
করোনাভাইরাসের প্রভাবে রাজধানীর ওষুধের দোকানগুলোতে ফেসিয়াল ও সার্জিক্যাল মাস্কের ব্যাপক সংকট সৃষ্টি হয়েছে। মাস্ক যেনো সোনার হরিণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর বিজয়নগরে পপুলার ফার্মা, প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট, মা ফার্মেসি, লাজ ফার্মা, ঢাকা ফার্মেসি, মর্ডান ফার্মেসি, অনুরাগ ফার্মাসহ বেশকিছু ওষুধের দোকানে মাস্ক পাওয়া যায়নি। দুই-একটি দোকানে তা মিললেও বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে।
এ ছাড়া কয়েকদিন আগেও রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে হকাররা পাবলিক বাসে উঠে নিয়মিত মাস্ক বিক্রি করতেন। প্রকারভেদে পাঁচ টাকা থেকে শুরু করে ২০ টাকায় এসব মাস্ক অহরহই বিক্রি হতো বাসগুলোতে। মানুষও ধুলাবালি থেকে বাঁচতে চলতি পথে এসব মাস্ক কিনে নিতেন। কিন্তু এখন এই দৃশ্য খুব কমই দেখা যাচ্ছে। যে গুটিকয়েক হকার বিক্রি করছেন তাঁরা চড়া দামেই বিক্রি করছেন।
রাজধানীর কাফরুলের ইনোভা সার্জিক্যাল স্টোরের ব্যবস্থাপক আবু ইউসুফ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘করোনাভাইরাসের প্রভাব শুরু হওয়ার পর থেকে দেশে মাস্কের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। কোথাও এই মাস্ক পাওয়া যাচ্ছে না।’
সার্জিক্যাল মাস্ক প্রধানত চীনে উৎপাদন হয়। কিন্তু চীনে করোনাভাইরাসের প্রভাবের কারণে সেখান থেকে মাস্ক বাংলাদেশে আসছে না। উল্টো চীনসহ আশেপাশের অনেক দেশ বাংলাদেশ থেকে মাস্ক কিনে নিয়ে যাচ্ছে বলে দাবি করেন ব্যবস্থাপক।
সততা মেডিকেল স্টোরের বিক্রেতা আবদুল্লাহ হক বলেন, ১০/১৫ দিন ধরে মাস্কের সংকট দেখা দিয়েছে। কোম্পানিগুলো মাস্ক দিচ্ছে না, বিক্রেতারা ফিরছেন খালি হাতে।
এদিকে মাস্ক সংকটের কারণে বিপদে পড়েছেন চিকিৎসক, সেবিকাসহ সাধারণ ক্রেতারা।
বেসরকারি চাকরিজীবী ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘রাস্তায় প্রচণ্ড ধুলাবালির কারণে প্রতিদিনই মাস্ক ব্যবহার করি। কিন্তু ১০ দিন ধরে কোনো দোকানেই মাস্ক পাচ্ছি না। এ যেনো সোনার হরিণ হয়ে গেছে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দোকানি বলছেন, ‘করোনাভাইরাসের পর মাস্কের সাপ্লাই নেই। প্রতিদিন এক থেকে দেড়শ জন মানুষ মাস্ক চাইছেন আমাদের কাছে, কিন্তু দিতে পারছি না।’
মা ফার্মেসির কর্ণধার নাবিল বলেন, ‘এক বাক্সে ৫০ পিস মাস্ক থাকে। আগে এক বাক্স ৭০ টাকায় পাওয়া যেত। এখন ৫০০ টাকার উপরে দাম। পাঁচ টাকার মাস্ক ৩০/৪০ টাকায় চলে গেছে।’
বাংলাদেশ মেডিক্যাল ইন্সট্রুমেন্ট অ্যান্ড হসপিটাল ইক্যুইপমেন্ট ডিলারস অ্যান্ড এম এফ আর এস অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় পরিচালক জসিম উদ্দিন বলেন, ‘মাস্কগুলো আমাদের চায়না থেকে আমদানি করতে হয়। এখন চায়নাতে করোনাভাইরাসের কারণে সেখান থেকে কোনো মাস্ক আসছে না। উল্টো বাংলাদেশ থেকেও অনেক মাস্ক তারা নিয়ে গেছে। আমরাসহ ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর চেষ্টা করে যাচ্ছি যাতে বাংলাদেশ থেকে কোনো মাস্ক দেশের বাইরে না যায়।’
এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক আবু হাসনাত বলেন, ‘বর্তমানে রাজধানীতে মাস্কের সংকট দেখা দিয়েছে। আমরা নিজেরাই পাঁচ টাকার মাস্ক ৪০ টাকা দিয়ে কিনছি। এ ছাড়া কোনো কোনো দোকানে মাস্ক পাওয়া যাচ্ছে না।’
চিকিৎসক আরো বলেন, ‘করোনাভাইরাস থেকে বাঁচার জন্য প্রথমত মাস্কের ব্যবহার করতে হবে। কেননা এই ভাইরাস মানুষের হাঁচি-কাশি থেকে অন্যের শরীরে ছড়ায়। আর হাঁচি প্রবেশ করে আরেক মানুষের নাক বা মুখ দিয়ে। তাই এই মাস্কের ব্যবহার অনেক বেশি।’