করোনাকালে ভরসা যোগাচ্ছে ‘সুখী কিশোরগঞ্জ’
করোনাকালে ভরসা যোগাচ্ছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘সুখী কিশোরগঞ্জ’। করোনা মহামারির শুরুর দিকে গত বছর এই সংগঠনটি কিশোরগঞ্জ সদরে তাদের কার্যক্রম শুরু করে। করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের বাড়িতে বিনামূল্যে অক্সিজেন সেবা পৌঁছে দিচ্ছে তাঁরা। পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকায় সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য করোনার টিকাদানে উদ্বুদ্ধকরণসহ বিনামূল্যে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করে দিচ্ছে সংগঠনটির স্বেচ্ছাসেবীরা। এসব কাজে ভালো সাড়াও মিলেছে সাধারণ মানুষের।
সংগঠনটির অন্যতম উদ্যোক্তা ও প্রধান সমন্বয়কারী অধ্যাপক ডা. খালেকুল ইসলাম ববি বলেন, ‘গত বছরের ১৭ জুন ডেঙ্গু রোধে প্রথম কার্যক্রম শুরু করে সংগঠনটি। এর অংশ হিসেবে পৌরসভার নয়টি ওয়ার্ডে এডিস মশার জন্মস্থল বিনাশ, পরিচ্ছন্নতা অভিযান ও ওষুধ ছিটানো কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। পরে করোনা পরিস্থিতির অবনতি হলে করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের বিনামূল্যে সেবা দিতে গড়ে তোলা হয়েছে অক্সিজেন ব্যাংক।’
অক্সিজেন কার্যক্রমের সমন্বয়কারী এহতেশামুল হুদা মুনাব্বী বলেন, ‘গত ১৪ জুলাই কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত আমরা ৩০টি অক্সিজেন সিলিন্ডার ও ৩৫টি অক্সিজেন কনসেনট্রেটর দিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছি। করোনায় আক্রান্তদের যারা হাসপাতালে যেতে অপারগ এবং বেশি মুমুর্ষু এমন আনুমানিক দুইশ রোগীকে আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে অক্সিজেন সেবা দিয়েছি।’
করোনায় আক্রান্ত হওয়া অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জালাল আহমেদ বলেন, ‘আমি সস্ত্রীক করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলাম। তখন এই সংগঠনের কর্মীরা আমাদের অক্সিজেন সেবা প্রদানসহ সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর নেয়।’
বিশিষ্ট ব্যবসায়ী রোটারিয়ান মাহবুব রানা বলেন, ‘সস্ত্রীক করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর অনেকটা ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। পরে এই সংগঠনটির কথা জানতে পেরে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তাদের সহায়তায় বুকে সাহস পাই।’
টিকার রেজিস্ট্রেশন কাজে সমন্বয়কারী মো. জাকির হোসেন রাজীব বলেন, ‘টিকার রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রমে আমরা প্রান্তিক মানুষের ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। আমরা সুখী কিশোরগঞ্জ সংগঠনের পক্ষ থেকে সদর উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী নির্ধারিত স্থানে টিকা নিতে আগ্রহী মানুষের রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেছি। এ পর্যন্ত আমরা ১০ হাজার মানুষের রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেছি। সদর উপজেলার সবকটি ইউনিয়নের পর এখন আমরা কিশোরগঞ্জ পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে রেজিস্ট্রেশনের কাজ করছি।’
লতিবাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের ইউনিয়নের খেটে খাওয়া মানুষরা টিকার রেজিস্ট্রেশন নিয়ে বিভ্রান্তিতে ছিল। অনেকের জানাই ছিল না। অনেকেরই মুঠোফোন নেই। এই সংগঠনের কার্যক্রমের কারণে সহজেই সাধারণ মানুষ টিকার রেজিস্ট্রেশন করাতে পেরেছে।’
মহিনন্দ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনসুর আলী বলেন, ‘এই সংগঠনের কর্মীরা মাঠ পর্যায়ে না এলে হয়ত অনেকের পক্ষেই রেজিস্ট্রেশন করা ও টিকা নেওয়া সম্ভব হতো না।’
‘সুখী কিশোরগঞ্জ’ সংগঠনের উদ্যোক্তা লুৎফুল্লাহ হোসাইন পাভেল বলেন, “সুখী কিশোরগঞ্জ একটি সেবামূলক, অরাজনৈতিক ও অবাণিজ্যিক উদ্যোগ। কিশোর-তরুণদের ভালো কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যেই লেখক হুমায়ুন আহমেদের ‘সুখী নীলগঞ্জ’ নামটিকে উপজীব্য হিসেবে ধরে সুখী কিশোরগঞ্জ নামটি নেওয়া হয়েছে। আশা করি কিশোরগঞ্জকে একটি সুখী এলাকা হিসেবে গড়ে তুলতে আরও বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করবে সংগঠনটি।”