কবে নাগাদ টিকা দেওয়া শুরু হবে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি : স্বাস্থ্যমন্ত্রী
কবে নাগাদ টিকা দেওয়া শুরু হবে তা এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। আজ বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টার দিকে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের হাতে পৃথকভাবে করোনার টিকার দুটি বক্স তুলে দেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী। এ সময় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলমও উপস্থিত ছিলেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘বন্ধু সব সময়ই বন্ধু। ভারত আমাদের বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্র তা আবারও প্রমাণিত হয়েছে। ৭১ সালে দেশ স্বাধীনের সময় ভারত যেভাবে আমাদের পাশে ছিল করোনা মহামারিতেও ভারত সেই বন্ধুত্ব বজায় রেখেছে। আজ উপহার হিসেবে ২০ লাখ করোনার টিকা আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের হাতে তুলে দিল ভারত।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘করোনা ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। টিকাদানের জন্য জেলা, উপজেলাসহ সারা দেশে ৪২ হাজার কর্মী প্রস্তুত করা হয়েছে। আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে খুব শিগগিরই টিকাদানে যাব। এখনো অনেক উন্নত দেশ ভ্যাকসিন পায়নি, আমরা পেয়েছি। এটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সফলতা।’
জাহিদ মালেক বলেন, ‘সব ভ্যাকসিনেরই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে, এখানেও থাকতে পারে। আমরা তার চিকিৎসার জন্য ব্যবস্থাও করে রেখেছি।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী ভ্যাকসিন নিয়ে গুজব না ছড়াতে গণমাধ্যমসহ সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, যারা গুজব ছড়ায়, তারা ভালো মানুষ না। ভ্যাকসিন নিয়ে কোনো ধরনের রাজনীতি না করারও আহ্বান জানান তিনি।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জাহিদ মালেক বলেন, ‘ভারত ছাড়াও অন্যান্য দেশের সঙ্গেও ভ্যাকসিন ক্রয় বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। এ ছাড়াও এ মাসের শেষের দিকে ভারত থেকে আরো ৫০ লাখ ভ্যাকসিন দেশে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, করোনার টিকা উপহার দেওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শক্তিশালী সম্পর্কের পরিচয় বহন করে। টিকা উপহার হিসেবে প্রদান করায় ভারত সরকার ও ভারতের জনগণকে ধন্যবাদ জানান তিনি। তিনি উল্লেখ করেন, চুক্তি অনুযায়ী ভারত থেকে পর্যায়ক্রমে আরো তিন কোটি টিকা আসবে।
এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সবাইকে করোনাবিষয়ক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যকার ভার্চুয়াল শীর্ষ সম্মেলনের আলোচনার ধারাবাহিকতায় ভারতে ভ্যাকসিন প্রদান শুরু হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে ভারত বাংলাদেশকে ভ্যাকসিন সরবরাহ করেছে। প্রতিবেশী নীতির অংশ হিসেবে প্রথমে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের প্রতি ভারত সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়।
হাইকমিশনার বলেন, প্রতিবেশী কোনো দেশকে ভারতের দেওয়া সবচেয়ে বড় পরিমাণ উপহার এটি। কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনের (অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন) চালানটি ভারতের পুনেতে অবস্থিত সিরাম ইনস্টিটিউট উৎপাদন করেছে এবং উপহার দেওয়ার উদ্দেশে ভারত সরকার তার নিজস্ব কোটা থেকে কিনেছে।
উপহারের টিকার বাইরে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সিরাম ইনস্টিটিউট ও বেক্সিমকো ফার্মার চুক্তি রয়েছে। অনলাইনে নিবন্ধন ছাড়া কাউকে করোনার এই টিকা দেবে না বাংলাদেশ সরকার।
এর আগে ভারতের উপহার হিসেবে দেওয়া করোনাভাইরাসের টিকার প্রথম চালান আজ বেলা সোয়া ১১টার দিকে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বিশেষ বিমানে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়। করোনার ভ্যাকসিন পরিবহণ করার জন্য দুটি কার্গো আনা হয় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। সেখান থেকে এগুলো সংরক্ষণের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় তেজগাঁওয়ে ইপিআইয়ের সংরক্ষণাগারে।
করোনার টিকা গ্রহণ করতে বিমানবন্দরে উপস্থিত হন ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে এসব টিকা হস্তান্তর করেন ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী।