কঠিন ওয়ার্মআপ করেছি, ভালো টেস্ট খেলতে পারব : আতিকুল ইসলাম
আতিকুল ইসলাম। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী। ওই সিটিরই সাবেক মেয়র তিনি। ১৯৬১ সালের ১ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম মমতাজউদ্দিন আহমেদ ও মায়ের নাম মাজেদা খাতুন।
আতিকুল ইসলাম ২০১৩-১৪ মেয়াদে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া তিনি বাংলাদেশের পোশাক খাতের শ্রম পরিস্থিতি ও পণ্যের মান উন্নয়নে গঠিত সেন্টার অব এক্সিলেন্স ফর বাংলাদেশ অ্যাপারেল ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। বাংলাদেশ সরকার তাঁকে বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (সিআইপি) হিসেবে ঘোষণা করেছে।
২০১৫ সালে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে মেয়র পদে জয়ী হন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আনিসুল হক। ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর আনিসুল হক মারা যান। ২০১৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ওই পদে অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ছিলেন আতিকুল ইসলাম। ওই নির্বাচনে জয়ী হন তিনি।
নির্বাচন ও নগর নিয়ে এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেন আতিকুল ইসলাম। তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এনটিভি অনলাইনের স্টাফ করেসপনডেন্ট ফখরুল শাহীন।
এনটিভি অনলাইন : সিটি নির্বাচনে আপনি কতটুকু আশাবাদী?
আতিকুল ইসলাম : বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একটি ঐতিহ্যবাহী দল। যে দল দিয়েছে আমাদের লাল-সবুজের পতাকা। যে দল দিয়েছে স্বাধীনতা এবং যে দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যাঁর ডাকে আমরা পেয়েছি স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশ।
সেই আওয়ামী লীগ আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে। আওয়ামী লীগ উন্নয়নের রাজনীতি করে। আমি মানুষের দ্বারে দ্বারে উন্নয়নের বার্তা পৌঁছে দিতে চাই। উন্নয়নের কথাগুলো তুলে ধরতে চাই। বলতে চাই আজ থেকে ১০ বছর আগে পরিস্থিতি কেমন ছিল আর এখন কেমন আছে। মানুষও কিন্তু পরিবর্তনটা দেখছে। মিরপুর, উত্তরায় সড়কের কী অবস্থা ছিল, এখন কেমন সেই পরিবর্তনও মানুষ দেখছে। আমার বিশ্বাস ইনশাআল্লাহ ভোটের নির্বাচনে জয়লাভ করব।
এনটিভি অনলাইন : জয়ী হলে নগর নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কী থাকবে?
আতিকুল ইসলাম : আমরা যখন নয় মাস আগে একটি নির্বাচন করি, তখন কিন্তু আমাদের স্লোগান ছিল ‘একটি সুস্থ সচল আধুনিক গতিময় ঢাকা’। সবাই মিলে সবার ঢাকা। এ শহরে নারীর অধিকার আছে, শিশুদের অধিকার আছে, যুবকদেরও অধিকার আছে, বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদেরও অধিকার আছে। এসব অধিকার নিয়েই কিন্তু আমাদের চলতে হবে। শিশুরা চাইবে তাদের হারানো মাঠগুলো যেন ফিরে পায়। নারীরা চাইবে নারীবান্ধব শহর। বয়স্করা চাইবে তাদের জন্য ওল্ড সিটিজেন রাইটস দেওয়া। সেভাবেই কিন্তু আমরা পার্কগুলো তৈরি করছি। যে পার্কে শিশু তার বাবা-মা, দাদা-দাদিকে নিয়ে সন্ধ্যার পরেও যেন অবস্থান করতে পারে। সেই হারানো ফিরে পাওয়া পার্কগুলোতে আবার যেতে পারে এবং সব ধরনের মাল্টিপারপাস সুযোগ-সুবিধা থাকবে। ক্রিকেটও থাকবে এবং ফুটবলও খেলা যাবে। আমরা পার্কগুলো এভাবে তৈরি করছি, বৃষ্টি হলেও হাঁটুপানি থাকবে না। কিছু কিছু মাঠে আমরা আউটডোর জিমের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি, জিমও করতে পারবে।
আমি যেটা মনে করি, গত নয় মাস আমার জন্য ওয়ার্মআপ ছিল। ক্রিকেট খেলতে যদি যান, তাহলে আগে একটা ওয়ার্মআপ কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ। আমি গত নয় মাস ওয়ার্মআপ করেছি এবং কঠিন ওয়ার্মআপ করেছি, আপনারা দেখেছেন। একটি দিনও কিন্তু আমি বসে নেই। এখন ওয়ার্মআপ পরে টেস্ট খেলার সুযোগ এসেছে। আমরা মনে করি, একটি ভালো টেস্ট খেলতে পারব পরবর্তী পাঁচ বছর। আমি ওয়ার্মআপ করেছি ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে, সড়কের নিরাপত্তা নিয়ে, জলাবদ্ধতা নিরসন নিয়ে।
এনটিভি অনলাইন : নাগরিক সমস্যাগুলো নিয়ে আপনার চিন্তা কী?
আতিকুল ইসলাম : এটি একটি অপরিকল্পিত নগরী। এটা বাস্তবতা। আজ আমরা যদি বিদেশে দেখি সেখানে আগে সবকিছু তৈরি করা হয়। কমিউনিটি সেন্টার, লাইব্রেরি, বাজার, মসজিদ, রাস্তা, ফুটপাত কোনোটাই কিন্তু মেইনটেইন করা হয়নি। তাই বলে কিন্তু আমরা হাল ছেড়ে দিচ্ছি না। আর এ জন্যই প্রধানমন্ত্রী আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন। আমি গার্মেন্টস ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে এসেছি। আমার ব্যাকগ্রাউন্ড হলো অসম্ভবকে সম্ভব করা। আমার বিশ্বাস, আমরা প্ল্যান করছি পরিকল্পিত শহর ও সুস্থ ঢাকার জন্য, আমরা প্ল্যান করছি একটি সচল ঢাকার জন্য। মানুষ তো বেশি কিছু চায় না, কেউ বলবে না মেয়র সাহেব আমাকে একটি বাড়ি বানিয়ে দেন! তারা চায় সার্ভিসটা। আপনি ঘরে বসে যেন আপনার আয়করের টাকা দিতে পারেন। তারা চাইবে জন্মসনদটা কত তাড়াতাড়ি সংগ্রহ করতে পারবেন। এ জন্য আমি গুরুত্ব দিচ্ছি কাউন্সিলরদের ওপরে। আমরা কাউন্সিলরদের জন্য কমপ্লেক্স তৈরি করে দিতে চাই। আমরা চাই সিটি হলো টাইপের মিটিং করার জন্য। প্রতি মাসে দুটি এলাকার কাউন্সিলরদের এনে তাদের সমস্যার সমাধান করতে চাই।
এনটিভি অনলাইন : ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে আপনার ভাবনা কী?
আতিকুল ইসলাম : আপনি জানেন যে, আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর ঠিক আট-নয় দিনের মাথায় ছাত্রদের বড় একটা আন্দোলন ছিল। সবাইকে নিয়ে আন্দোলনটাকে আমরা যখন কন্ট্রোল নিয়েছি, এরপর একটি আগুনের ঘটনা ঘটেছে এফ আর টাওয়ারে। এগুলো নিয়ে যখন কাজ করছি, তখনই চলে আসে ডেঙ্গুর মতো একটা ভয়াবহ বিষয়। অনেক জীবন চলে গেছে। অনেকের পরিবার তার প্রিয়জনকে হারিয়েছে। এ জন্য আমি ক্ষমা চাইছি। আমি বলেছি ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে ৩৬৫ দিন কাজ করতে হবে।
২০০৮ সালে কলকাতায় ডেঙ্গু হয়েছিল। ওই নগরীকে ডেঙ্গুমুক্ত করতে ১১ বছর লেগেছে। যখন কারো ডেঙ্গু হয়েছে, তখন তার বাড়ির চারপাশে দ্রুত লোক পাঠিয়ে ওষুধ ছিটিয়ে আসতে হয়েছে। অর্থাৎ যেন এর বিস্তার না ঘটে। এটি প্রাথমিকভাবে আমরা জানতামও না। আমি যে ওয়ার্মআপ করেছি, তার মধ্যে কিন্তু ডেঙ্গু মোকাবিলা আছে।
আমাদের সিটি করপোরেশনে কিন্তু কোনো কীটবিদ ছিল না, যেটা বড় প্রয়োজন। কারণ কীটবিদেরাই বুঝতে পারবে কোন জায়গাটাতে মশার প্রজনন হচ্ছে এবং সেই জায়গাটা ধ্বংস করতে হবে। প্রজনন হয়ে গেলে এটাকে কিন্তু রুখে দেওয়া যাবে না। এ জন্য আমাদের সবাইকে মিলে কাজ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী তখন দেশের বাইরে ছিলেন, তারপরও কিন্তু তিনি খোঁজখবর নিয়েছেন এবং সবাই মিলে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। আপনার বাড়ির ১০ তলা কিন্তু আপনাকেই পরিষ্কার করতে হবে। দায়িত্ব নিতে হবে।
এনটিভি অনলাইন : ঢাকা এখন বায়ুদূষণের নগরী...
আতিকুল ইসলাম : বায়ুদূষণের জন্য ৮৬ শতাংশ দায়ী ইটভাটাগুলো। ঢাকার চারপাশের ইটভাটাগুলোর সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের বলেছি নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে। এটি বড় চ্যালেঞ্জ।
দুই নম্বর হচ্ছে, আমাদের পরিবহন। তিন নম্বর হচ্ছে কনস্ট্রাকশন। আপনারা দেখেছেন আমি নিকেতন ও গুলশানে যারা বালু-সিমেন্টের মতো নির্মাণসামগ্রী রাস্তার ওপরে রাখা হয়েছে। এতে ক্ষতি হচ্ছে। আমরা যদি নিজেদের কাজগুলো নিজেরা ঠিকমতো করতে পারি, তাহলে কিন্তু বায়ুদূষণ হয় না।
এ বিষয়ে আমি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলেছি। ১৬টা সেন্সর বসাতে যাচ্ছি, যেখানে সেন্সর আমাদের রিডিং দেবে কোন সেক্টর থেকে সবচেয়ে বেশি বায়ুদূষণ আসছে। গাড়ি থেকে কত আসছে, কনস্ট্রাকশন থেকে কত আসছে, সিটি করপোরেশনের ঝাড়ু দিতে গিয়ে কত আসছে। সেটা দেখে বায়ুদূষণের কারণটা ধরতে পারব।
এনটিভি অনলাইন : দখলবাজদের ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ...
আতিকুল ইসলাম : এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। আমাদের অনেক জমি কিন্তু দখল হয়েছে। আমরা সে জন্য আ্যকশন শুরু করেছি। ফুটপাতও দখলে চলে যায়। হকাররা দখল করে আবার অনেকে দোকান দিয়ে ভাতের হোটেল দেয়। এগুলো জনগণ দখল করেন না। এগুলো কিন্তু জনগণ পছন্দ করে না, জনগণ চায় হাঁটার জন্য রাস্তা, জনগণ চায় হাঁটার জন্য সুন্দর ফুটপাতের রাস্তা। আমার কর দেওয়া পয়সা দিয়ে আমি হাঁটব, এটা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে।
বড় রাস্তায় হকারদের জন্য রেজিস্ট্রেশন করে দেব। যেটা বিদেশেও আছে। চার ঘণ্টা একেকজন করে বসবে যেন তাদের পরিবারগুলোও যেন চলতে পারে।
এনটিভি অনলাইন : আনিসুল হককে নিয়ে কিছু বলুন...
আতিকুল ইসলাম : আনিস ভাই আর আমি একই জায়গা থেকে এসেছি, বিজিএমইএ থেকে। একই ব্যবসা দুজনই করতাম। তিনি খুব আন্তরিক মানুষ ছিলেন, যাকে বলে অলরাউন্ডার। আমার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল উনার অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত করা। উনার স্বপ্ন ছিল ঢাকাকে আলোকিত করা। কিন্তু উনি মারা যাওয়ার পর কিন্তু ওই ফাইলগুলো নড়েনি। আমি কম সময়ে সবার সহযোগিতায় পেয়েছি। উনার স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমি দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করেছি। কারণ, উনার চিন্তা ছিল নগরবাসীর জন্যই। এগুলো নিয়েই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। উনার পরিবার আমাকে বলেছে, যত ধরনের সহযোগিতা দরকার, সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।
এনটিভি অনলাইন : তরুণদের নিয়ে আপনার ভাবনা কী?
আতিকুল ইসলাম : তরুণদের স্কিল ডেভেলপ করা, আমি তরুণদের জন্য পার্টটাইম কাজ করার সুযোগ করে দেব। সিটি করপোরেশনে ইন্টার্নশিপ করার ব্যবস্থা করব। যারা করবে, তাদের আমি একটা মেয়র সার্টিফিকেট দেব। তারা যেন অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে পারে। আজ যে তরুণ সিটি করপোরেশনে ইন্টার্নশিপ করবে, সে কিন্তু জানতে পারবে ভবিষ্যতে তার সামনে কী ধরনের চ্যালেঞ্জ আছে। খেলাধুলার জন্য মাঠগুলো ওপেন করে দিচ্ছি। বিভিন্ন জাতীয় দিবসে খেলাধুলার ব্যবস্থা করব। মেয়র কাপ, মেয়র ক্রিকেট, মেয়র ভলিবলের ব্যবস্থা করব। পাড়া উৎসব করব, যেন একে অন্যকে চিনতে পারে।
এনটিভি অনলাইন : নগরবাসীকে কী বার্তা দিতে চান?
আতিকুল ইসলাম : গত নয় মাস আমি ওয়ার্মআপ করেছি। একটি ভালো ওয়ার্মআপ হয়েছে, সেই ওয়ার্মআপ করার পরে আমি টেস্টে নেমেছি। সেই পাঁচ বছরের টেস্ট। আমি সবাইকে বলব নৌকার কোনো বিকল্প নেই। নৌকার গিয়ার একটি সেটা হচ্ছে ফ্রন্ট গিয়ার, এই নৌকাকে নিয়ে আমরা সামনে এগিয়ে যাব। এই নৌকা দিয়েছে আমাদের স্বাধীনতা, নৌকাই দিয়েছে বিজয়। নৌকায় ভোট দিয়ে, আমাকে ভোট দিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করুন। আমি কথা দিতি পারি, সবাই মিলে সবার ঢাকা করার জন্য চেষ্টা করব।