কক্সবাজার হাসপাতালে করোনা চিকিৎসার সুবিধা আরো বাড়ল
কক্সবাজার সদর হাসপাতালে কোভিড-১৯-এর গুরুতর রোগীদের চিকিৎসার জন্য বর্ধিত ইউনিটের উদ্বোধন করা হয়েছে। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর, জেলা সদর হাসপাতাল ও সরকারের যৌথ উদ্যোগে এ বর্ধিত স্বাস্থ্য ইউনিট চালু করা হয়।
আজ সোমবার দুপুরে সদর হাসপাতালে ২০ শয্যায় বর্ধিত অংশে করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য এই সুবিধার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়।
অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হাসপাতাল পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সারওয়ার কমল, সদর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. রফিক-উস-সালেহীন, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. অনুপম বড়ুয়া, জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (এমআরও) ডা. শাহীন আব্দুর রহমান, শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়ের হেলথ সেক্টর কো-অর্ডিনেটর ডা. আবু মো তোহা, ইউএনএইচসিআরের সিনিয়র অপারেশনস কোঅর্ডিনেটর হিনাকো টোকি, কক্সবাজার পুলিশ সুপারের প্রতিনিধি প্রমুখ।
এ বছরের জুনে ইউএনএইচসিআরের সহযোগিতায় কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে প্রথম নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) ও হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিটের (এইচডিইউ) উদ্বোধন করা হয়। গুরুতর রোগীদের জন্য নির্মিত আইসিইউতে বর্তমানে আছে ১০টি বেড, ১১টি ভেন্টিলেটর ও দুটি পোর্টেবল ভেন্টিলেটর; আর এইচডিইউতে আছে আটটি শয্যা। আজ সোমবার নতুন করে যুক্ত হওয়া ২০টি শয্যার মাধ্যমে গুরুতর কোভিড-১৯ রোগীদের আরো বেশি চিকিৎসাসেবা দেওয়া যাবে।
অতিরিক্ত এই ২০ শয্যার পাশাপাশি ইউএনএইচসিআর একটি ওয়ার্ড তৈরি করে দিচ্ছে সম্পূর্ণ নতুন করে। এ ছাড়া ১০ জন চিকিৎসক, ১৫ জন স্টাফ নার্স, একজন সিনিয়র নার্স, একজন ইনফেকশন প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোল সুপারভাইজার, আটজন ক্লিনার ও আটজন ওয়ার্ড স্টাফসহ মোট ৪৩ জন নতুন স্টাফের দায়িত্ব নিচ্ছে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা।
এ ছাড়া বিছানা ও দেয়াল থেকে সরবরাহকৃত অক্সিজেন, অক্সিজেন পাম্প, ইনফিউশন অ্যান্ড সিরিঞ্জ পাম্প ও স্পেশালাইজড মেডিকেল পার্সোনাল প্রোটেক্টিভ ইকুইপমেন্টের (পিপিই) মতো বিশেষায়িত বিভিন্ন উপকরণ ও ওষুধ দেওয়া হয়েছে।
হাসপাতাল পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও সংসদ সদস্য সাইমুম সারওয়ার কমল অনুষ্ঠানে বলেন, ‘শরণার্থী ও স্থানীয় জনগণের জন্য ইউএনএইচসিআর ও জাতিসংঘের অন্যান্য সংস্থার সহায়তা আমরা সব সময় মনে রাখব। পারস্পরিক সহযোগিতা ও একসঙ্গে কাজ করার সদিচ্ছা না থাকলে কেউই সামনে এগুতে পারে না।’
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. রফিক-উস-সালেহীন বলেন, ‘মহামারির শুরুতে যখন সবাই আতঙ্কে উদ্বিগ্ন হয়ে সমাধান খুঁজছিল, ইউএনএইচসিআর তখন সবার আগে সামনে এগিয়ে আসে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে। কক্সবাজারের মতো একটি প্রান্তিক জেলায় এরকম চমৎকার সেবা দেখতে পাওয়া আসলেই দারুণ।’
গত ২০ জুন আইসিইউ ও এইচডিইউ উদ্বোধনের পর থেকে এই বিশেষায়িত বিভাগে ১২৪ জন সংকটাপন্ন রোগী ভর্তি হয়েছে এবং চিকিৎসা নিয়েছে। এই রোগীদের মধ্যে আছে শরণার্থী ও কক্সবাজারের স্থানীয় বাংলাদেশি উভয় জনগোষ্ঠীর মানুষ।
কক্সবাজার জেলায় কোভিড-১৯ প্রতিরোধ ও মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে যাচ্ছে ইউএনএইচসিআর ও সব মানবিক সংস্থা। জেলাজুড়ে ১৪টি সিভিয়ার একিউট রেস্পিরেটরি ইনফেকশন আইসোলেশন অ্যান্ড ট্রিটমেন্ট সেন্টার (সারি আইটিসি) গড়ে তোলা হয়েছে, যেখানে মাঝারি ও তীব্রভাবে আক্রান্ত কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
কক্সবাজারে ইউএনএইচসিআরের সিনিয়র অপারেশনস কোঅর্ডিনেটর হিনাকো টোকি বলেন, ‘করোনাভাইরাস মহামারি সারা বিশ্বে বিশাল একটি চ্যালেঞ্জ নিয়ে এসেছে। এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারের অংশীদারত্বের জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত শরণার্থী ও কক্সবাজারের স্থানীয় জনগণ সবাই যেন সম্ভাব্য সর্বোচ্চ সেবা পায়, সেটি নিশ্চিত করার জন্য আমরা একসঙ্গে কাজ করে যাব।’