কক্সবাজার সৈকত বর্জ্যে সয়লাব, ভেসে আসছে মৃত সামুদ্রিক প্রাণীও
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে দুদিন ধরে ব্যাপক হারে ভেসে আসছে প্লাস্টিকের বিভিন্ন ধরনের বর্জ্য। এর সঙ্গে ভেসে আসছে কাছিম, সাপসহ অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণীও। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রয়েছে মদের খালি বোতল, প্লাস্টিক, ইলেকট্রনিকসের পরিত্যক্ত বর্জ্যসামগ্রী এবং জাহাজে ব্যবহারের জালসহ নানা সামগ্রী।
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের লাবণী পয়েন্ট থেকে হিমছড়ি পর্যন্ত এলাকায় ভেসে আসা এসব বর্জ্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় পরিবেশকর্মীরা। তবে গতকাল রোববার বিকেল থেকে জেলা প্রশাসন ও পরিবেশকর্মীরা এসব বর্জ্য অপসারণ শুরু করেছে। এ ছাড়া বিষয়টি খতিয়ে দেখতে জেলা প্রশাসন পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে।
গত ২০ মে থেকে সাগরে টানা ৬৫ দিনের জন্য মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এখন সামুদ্রিক মাছের প্রজনন মৌসুম। গত বছর থেকে সরকারি সিদ্ধান্তে সমুদ্রে মাছ ধরা বন্ধ কর্মসূচি চলছে। আগামী ২৩ জুলাই পর্যন্ত এ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। সাগরে এখন কোনো মাছ ধরার জেলে নেই। মাছ ধরার নৌকা না থাকায় বিশাল বঙ্গোপসাগরও এক প্রকার শূন্য পড়ে রয়েছে।
এদিকে, সাগরে মাছ ধরা বন্ধ আর স্থলভাগে চলছে করোনাকালের লকডাউন পরিস্থিতি। এমন সুযোগে কোনো বিদেশি জাহাজ থেকে গভীর সাগরে বর্জ্য ফেলে থাকতে পারে। কক্সবাজার উপকূলের লোকজন এমনই সন্দেহ করছে।
কক্সবাজার মাছ ধরা নৌকা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন গত রাতে এ বিষয়ে বলেন, ‘সাগরে এবং স্থলভাগে চলমান লকডাউনের সুযোগে কোনো বিদেশি জাহাজ থেকে এসব বর্জ্য নিক্ষেপ করা হয়ে থাকতে পারে। চট্টগ্রাম বন্দরে যাতায়াতকারী কোনো পণ্যবাহী জাহাজ থেকেও এ জাতীয় বর্জ্য ফেলে থাকতে পারে।’
আকস্মিক জোয়ারের পানিতে সৈকতে ভেসে আসা বর্জ্য নিয়ে সাগরতীরের মানুষের মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। মানুষের আশঙ্কা, কেমিক্যাল জাতীয় পদার্থ রয়েছে বর্জ্যের সঙ্গে। আর এ কারণে কাছিম ও সামুদ্রিক সাপের মতো প্রাণী ভেসে আসছে।
আবুল কালাম নামের কক্সবাজারের হিমছড়ির একজন স্থানীয় বাসিন্দা তাঁর পুরো পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সকাল থেকে হিমছড়ি সৈকতে ভেসে আসা বর্জ্যের নানা পণ্য সংগ্রহ করছিলেন।
আবুল কালাম জানান, মাছ ধরার জালে বেঁধে নানা ধরনের বর্জ্য সাগরে নিক্ষেপ করা হয়েছে। তিনি প্রথমে মনে করেছিলেন, সাগরে বৈরী আবহাওয়ার কারণে হয়তো কোনো মাছ ধরার নৌকাডুবি হয়েছে, এসব সেই নৌকারই হতে পারে। কিন্তু বর্তমানে সাগরে মাছ ধরা বন্ধ রয়েছে বুঝতে পেরে তাঁর ভুল ভাঙে।
তিনি কিছু প্লাস্টিক সামগ্রী দেখিয়ে বলেন, ‘এসব বিদেশি জাহাজে ব্যবহার করা হয়।’
কক্সবাজার শহরের বাহারছড়া এলাকার বাসিন্দা রাশেদুল আলম রিপন বলেন, ‘শনিবার রাত থেকেই স্থানীয় লোকজন সৈকতে ভেসে আসা বর্জ্য লক্ষ করছে। সেইসঙ্গে সামুদ্রিক প্রাণী ভেসে আসার বিষয়টিও বেশ উদ্বেগের। শনিবার রাতে স্থানীয় যুবকরা বেশ কয়েকটি ভেসে আসা আধা মরা কাছিম সাগরে আবার ভাসিয়ে দিয়েছে।’
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেছেন, ‘সৈকতে ভেসে আসা এসব বর্জ্য সম্পর্কে জেনেছি। কীভাবে এসব বর্জ্য এলো, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এসব বর্জ্য অপসারণের জন্য জেলা প্রশাসন গতকাল রোববার বিকেল থেকে কাজ শুরু করেছে। এসব বর্জ্য কারা সাগরে নিক্ষেপ করল, তা খতিয়ে দেখতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। এই কমিটিতে পরিবেশ অধিদপ্তর এবং বন বিভাগের কর্মকর্তারাও থাকবেন। তাঁরা আজ সোমবার থেকে সরেজমিনে গিয়ে তদন্ত করবেন।’
এদিকে, কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইমরান জাহিদ খানের নেতৃত্বে গতকাল রোববার সৈকত ব্যবস্থাপনা কমিটির কর্মীরা প্রায় ২৫টি জীবিত সামুদ্রিক কাছিম সৈকত থেকে উদ্ধার করে এগুলো আবার গভীর সাগরে ছেড়ে দিয়েছেন। সেইসঙ্গে মৃত পাঁচটি কাছিম ও বড় আকারে বেশ কিছু মৃত এবং জীবিত সামুদ্রিক সাপও উদ্ধার করা হয়েছে।
সৈকত ব্যবস্থাপনা কমিটির কর্মী মাহবুব আলম জানান, তাঁরা গতকাল দিনব্যাপী বর্জ্য সরানোর কাজ করছেন। স্থানীয় ভাঙাড়ির দোকানিরাও বর্জ্যগুলো কুড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।’