কক্সবাজারে ১৩৩ জন কলেরা রোগী শনাক্ত
কক্সবাজারে সংক্রামক ব্যাধি কলেরার ঝুঁকিতে পড়েছে রোহিঙ্গাসহ স্থানীয় জনগোষ্ঠী। বিশেষ করে উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় বসবাসরত রোহিঙ্গা ও স্থানীয়রা এ রোগের ঝুঁকিতে রয়েছে। এরই মধ্যে রোহিঙ্গা ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে পরীক্ষা চালিয়ে এ রোগের জীবাণুর অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, ১৯১ জন মানুষের নমুনা পরীক্ষা করে ১৩৩ জনের শরীরে পাওয়া গেছে কলেরার জীবাণু। তাদের মধ্যে ৭৭ জন রোহিঙ্গা ও ৫৬ জন স্থানীয় মানুষ। উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বসবাসরত রোহিঙ্গা ও উপজেলা দুটির স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে এ পরীক্ষা চালানো হয়।
এদিকে রোহিঙ্গাসহ স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে কলেরামুক্ত করতে ভ্যাকসিন ক্যাম্পেইন চালু হচ্ছে। ক্যাম্পেইনের আওতায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পাশাপাশি উখিয়া-টেকনাফে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের দেওয়া হবে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ভ্যাকসিন। ৮ ডিসেম্বর শুরু হতে চলা ক্যাম্পেইন শেষ হবে ৩১ ডিসেম্বর। ক্যাম্পেইনে যাদের ভ্যাকসিন দেওয়া হবে, অদূর ভবিষ্যতে তাদের কলেরার ঝুঁকি থাকবে না বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
ক্যাম্পেইনে এক বছর থেকে পাঁচ বছরের প্রায় দেড় লাখ রোহিঙ্গা শিশুকে দেওয়া হবে ভ্যাকসিন। পাশাপাশি উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার এক বছরের বেশি বয়সের প্রায় পাঁচ লাখ স্থানীয় মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে।
গতকাল বুধবার জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে কলেরার ঝুঁকির কথা জানান ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. মহিউদ্দিন মোহাম্মদ আলমগীর। সভায় প্রজেক্টরের মাধ্যমে ক্যাম্পেইনের সার্বিক দিকসহ উখিয়া ও টেকনাফে কলেরার চিত্র তুলে ধরেন সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কর্মকর্তা ডা. রঞ্জন বড়ুয়া রাজন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, কেউ যাতে ভ্যাকসিন ক্যাম্পেইন থেকে বাদ না যায়, সেদিকে লক্ষ রাখা হচ্ছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে দেওয়া হবে টিকা। পাশাপাশি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বাসস্টেশন, হাট-বাজার, নৌকাঘাটসহ জনসমাগম ঘটে এমন স্থানেও টিকা দেওয়া হবে। ক্যাম্পেইন সফল করতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এক হাজার ৪০০টি টিম কাজ করবে। পাশাপাশি ১০০টি টিম কাজ করবে উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায়।
সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, উখিয়া-টেকনাফে ওরাল কলেরা ভ্যাকসিন (ওসিভি) ক্যাম্পেইন পঞ্চমবারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। তবে এবার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর চেয়ে স্থানীয় জনগোষ্ঠী বেশি থাকবে ওসিভি ক্যাম্পেইনের আওতায়।
এবারের ক্যাম্পেইনে কলেরা টিকা দেওয়া হবে ছয় লাখ ৩৫ হাজার ৮৫ জনকে। এর মধ্যে উখিয়া-টেকনাফের স্থানীয় জনগোষ্ঠী চার লাখ ৯৫ হাজার ১৯৭ জন। আর রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী এক লাখ ৩৯ হাজার ৮৮৮ জন। স্থানীয়দের ক্ষেত্রে এক বছরের ঊর্ধ্বে সব বয়সী লোকজন আর রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে শুধু এক বছর থেকে পাঁচ বছরের নিচে শিশুরা ওসিভি টিকা পাবে।
উখিয়া-টেকনাফের স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে টিকা দেওয়া কর্মসূচি ৮ ডিসেম্বর শুরু হয়ে শেষ হবে ৩১ ডিসেম্বর। আর রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে টিকা দেওয়া ৮ ডিসেম্বর শুরু হয়ে শেষ হবে ১৪ ডিসেম্বর।
সিভিল সার্জন অফিসের স্বাস্থ্য সমন্বয়ক ডা. জামশেদ বলেন, ‘সর্বশেষ ওসিভি ক্যাম্পেইন হয়েছিল ২০১৮ সালের ১৭ নভেম্বরে। সেই ক্যাম্পেইনের আওতায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ছিল বেশি। আর রোহিঙ্গা শিবিরের আশপাশের কয়েকটি এলাকায় কিছু সংখ্যক স্থানীয় লোকজনকে খাওয়ানো হয়েছিল। কিন্তু এবার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ওসিভি ক্যাম্পেইনের আওতায় কম থাকবে। বেশির ভাগ স্থানীয় লোকজনকে দেওয়া হবে কলেরা টিকা।’
ডা. জামশেদ জানান, গত জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত উখিয়া-টেকনাফে ১৩৩ জন কলেরা রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫৬ জন স্থানীয় আর ৭৭ জন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। উখিয়াতে আটজন স্থানীয় ও ১৩ জন রোহিঙ্গা কলেরা রোগী শনাক্ত হয়েছে। টেকনাফে স্থানীয় ৪৮ জন ও রোহিঙ্গা ৬৪ জন কলেরা রোগী শনাক্ত হয়েছে।
ডা. রঞ্জন বড়ুয়া রাজন জানান, এবারের ক্যাম্পেইনে টিকাদান কেন্দ্র সকাল ৮টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। ক্যাম্পেইন সফল করার জন্য ব্যাপক কর্মযজ্ঞ গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে সচেতনতা, মাইকিং ও সভাসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করা হয়েছে। সফলভাবে ওসিভি ক্যাম্পেইন সম্পন্ন হলে কলেরা ঝুঁকি থেকে মুক্ত হবে উখিয়া-টেকনাফ। এ জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকার সবাইকে সঠিক সময়ে টিকা গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।
ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. মহিউদ্দিন মো. আলমগীর জানান, নিরাপদ পানি ও সঠিক পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার অভাবে কলেরা রোগ হচ্ছে। এটি একটি পানিবাহিত রোগ। এই রোগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যাবে।
ডা. মহিউদ্দিন আরো জানান, উখিয়া-টেকনাফে গত এক বছরে ১৯১ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে ১৩৩ জনের কলেরা রোগ শনাক্ত হয়। তবে জেলার অন্য কোনো উপজেলায় এখন পর্যন্ত কলেরা রোগী পাওয়া যায়নি। এ দুই উপজেলায় দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করা গেলে পুরো জেলাকে কলেরা থেকে নিরাপদ করা সম্ভব। তিনি সংশ্লিষ্ট সবাইকে সঠিক সময়ে কলেরা টিকা খাওয়ার আহ্বান জানান।