কক্সবাজারে সেনাবাহিনীর বিনামূল্যে বাজার-স্বাস্থ্যসেবা
ঘূর্ণিঝড় আম্পান-পরবর্তী সময়ে পবিত্র ঈদুল ফিতর সামনে রেখে কক্সবাজারে কর্মহীন মানুষকে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী এবং কাঁচাবাজারের চাহিদা পূরণ করতে সেনাবাজার ও ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পেইনের আয়োজন করা হয়েছে।
সেনাবাহিনীর ১০ পদাতিক ডিভিশনের তত্ত্বাবধায়নে আজ শুক্রবার সকালে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে কক্সবাজার জেলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী চাল, আটা, তেল, লবণ, ডাল ও বিভিন্ন ধরনের সবজিসংবলিত সেনাবাজারের আয়োজন করা হয়। সেখান থেকে এক হাজার পরিবারের মধ্যে বিনামূল্যে দ্রব্যসামগ্রী সরবরাহ করা হয়। এ ছাড়া প্রায় ২০০ জনকে বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ওষুধ সামগ্রী দেওয়া হয়।
করোনাভাইরাস পরিস্থিতি ও সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে এ অঞ্চলের যেসব প্রান্তিক কৃষক তাঁদের উৎপাদিত সবজি বাজারে বিক্রি করতে পারছেন না, সেনাসদস্যরা সরাসরি সেসব কৃষকের কাছ থেকে সবজি কিনে এ বাজারে নিয়ে আসেন। ফলে অসহায় মানুষের পাশাপাশি কৃষকও তাঁদের সবজির ন্যায্যমূল্য পেয়ে উপকৃত হচ্ছেন। এ ছাড়া ঈদের ঠিক আগ মুহূর্তে এ ধরনের কাজের উদ্যোগ অসহায় মানুষের জন্য যেমন ঈদের বোনাসের মতো, তেমনি কৃষকদের জন্যও ঈদের উপহার বলে সুধী মহলের অভিমত।
সরেজমিনে কক্সবাজার জেলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে গিয়ে দেখা যায়, সেনাবাহিনীর সার্বিক ব্যবস্থাপনায় বাজারের প্রবেশপথে ছিল জীবাণুনাশক বুথ ও হাত ধোয়ার ব্যবস্থা। প্রকৃত অসহায় মানুষ তাদের প্রয়োজনীয় বাজার কোনো প্রকার ঝামেলা ছাড়াই বিনামূল্যে সংগ্রহ করছেন।
বাজার করতে আসা কলাতলীর একটি হোটেল কর্মচারী লিয়াকত বলেন, ‘করোনার কারণে সব ধরনের কাজ বন্ধ থাকায় নিজের জমানো যে অর্থ ছিল, তা অনেক আগেই শেষ। বর্তমানে ধারদেনা করে সংসার চলছে। আজ সেনাবাজার থেকে চাল, আলু, বরবটি, কচুর লতি, কাঁচামরিচসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস পেয়ে আমি অনেক আনন্দিত। এ ছাড়া কানের ব্যথায় এক সপ্তাহ ধরে আমি কষ্ট পাচ্ছিলাম। আজ সেনা মেডিকেল ক্যাম্পের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখিয়ে বিনামূল্যে ওষুধও পেয়েছি।’
ঈদের আগে সেনাবাহিনীর এ ধরনের কার্যক্রম অসহায়দের ঈদের আনন্দকে উপভোগ করার সুযোগ করে দিয়েছে বলে জানান লিয়াকত।
কথা হয় কক্সবাজার সৈকতের আলোকচিত্রী হাসান আলীর সঙ্গে। ৩৫ হাজার টাকায় কেনা একটি ক্যানন ব্র্যান্ডের সেমি ডিএসএলআর ক্যামেরাই তাঁর পাঁচজনের পরিবারের আয়ের একমাত্র মাধ্যম। তিনি বলেন, ‘পর্যটন নগরী কক্সবাজারে সারা বছরই পর্যটকের ভিড় লেগেই থাকে। ঈদের সময় পর্যটকদের আনাগোনা আরো বেড়ে যায়। বর্তমানে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে প্রায় তিন মাস কোনো ট্যুরিস্ট কক্সবাজারে না আসছে না। আমার মতো স্বল্প আয়ের মানুষদের পথে বসার উপক্রম হয়েছে। ঈদের সময় সেনাবাহিনীর উদ্যোগে আয়োজিত এই সেনাবাজার আমার কাছে স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। পরিবারের সবাইকে নিয়ে এখন আমিও ঈদ উৎসবে শামিল হতে পারব।’
রামু সেনানিবাস সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর সার্বিক দিকনির্দেশনায় সেনাপ্রধানের নেতৃত্বে অসহায় ও প্রান্তিক আয়ের মানুষদের জীবনযাত্রাকে সহজ করার জন্য রামু সেনানিবাসের তত্ত্বাবধানে এ ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। অদূর ভবিষ্যতে উপজেলা পর্যায়েও এ ধরনের বাজারের আয়োজন করা হবে বলে জানা যায়। সম্পূর্ণ অনাড়ম্বর ও ব্যতিক্রমধর্মী এ আয়োজন উপলক্ষে রামু সেনানিবাসের কর্মকর্তা ও সেনা সদস্যরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের চারটি উপজেলায় গত ২৪ মার্চ থেকেই মাঠে আছে সেনাবাহিনী। টহল কার্যক্রমসহ করোনার ভয়াবহতার ব্যাপারে মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও মাস্ক বিতরণ করছেন তাঁরা। এ ছাড়া নিজেদের রেশন বাঁচিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে চাল, ডাল, তেল, আলু, পেঁয়াজ, সাবানসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন সামগ্রী কর্মহীন অসহায় পরিবারের কাছে তুলে দিচ্ছেন। বর্তমানে তাঁরা ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে দুর্গত এলাকাগুলোতে ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ও বাঁধ পুনর্নির্মাণে স্থানীয়দের সঙ্গে কাজ করছেন। পাশাপাশি দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে জনসাধারণকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সহায়তা দেওয়ার জন্য সেনাবাহিনীর ১০টি মেডিকেল টিম গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে একযোগে কাজ করছে।