কক্সবাজারে সুগন্ধা পয়েন্টে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, ব্যবসায়ী-পুলিশ সংঘর্ষ
কক্সবাজার শহরের কলাতলীর সুগন্ধা পয়েন্টে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে গিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে পুলিশ, সাংবাদিকসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে। আজ শনিবার বিকেলে বুলডোজার দিয়ে দোকানপাট উচ্ছেদকালে এ ঘটনা ঘটে।
ব্যবসায়ীদের প্রতিবন্ধকতা, প্রতিরোধ সত্ত্বেও প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী রুদ্ধশ্বাস অভিযানে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে সুগন্ধা পয়েন্টের ৫২টি অবৈধ স্থাপনা। যেখানে রয়েছে রেস্তোরাঁ, শুঁটকি মাছের দোকান, ট্যুরিজম অফিস, ফার্মেসি ইত্যাদির দোকান।
বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু হয়। সাড়ে পাঁচটার দিকে অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সচিব ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবু জাফর রাশেদ।
তার আগে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির কক্সবাজার জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম মুকুলসহ আটজনকে আটক করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের কলাতলী সুগন্ধা পয়েন্টে ৫২টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ২০১৮ সালের ১০ এপ্রিল উচ্ছেদের নোটিশ দেয়। পরে জসিম উদ্দিনসহ ৫২ জন একটি রিট আবেদন দায়ের করলে ২০১৮ সালের ১৬ এপ্রিল হাইকোর্ট রুল জারি করে স্থগিতাদেশ দেন। এর বিরুদ্ধে ভূমি মন্ত্রণালয় ও রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করে। গত ১ অক্টোবর সমুদ্র সৈকতের কলাতলীর সুগন্ধা পয়েন্টে ৫২টি স্থাপনা উচ্ছেদে হাইকোর্টের দেওয়া রুল ও স্থগিতাদেশ খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ। ভূমি মন্ত্রণালয় ও রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ভার্চুয়াল আপিল বেঞ্চ এ রায় দেন। ফলে ওই ৫২টি স্থাপনা উচ্ছেদে কোনো বাধা না থাকায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে সুগন্ধা পয়েন্টের এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের উদ্যোগ নেয়।
আজ বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সচিব আবু জাফর রাশেদ, কক্সবাজার সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুহাম্মদ শাহরিয়ার মোক্তার ও কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়।
তবে, অভিযানে গিয়ে ব্যবসায়ীদের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয় প্রশাসনের যৌথ টিম। ব্যবসায়ী ও দোকান কর্মচারীরা কাফনের সাদা কাপড় পরে প্রতিবাদ জানান। উচ্ছেদ অভিযান শুরুর সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসায়ীরা পুলিশকে লক্ষ করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। ব্যবসায়ীদের বিক্ষোভ থামাতে ফাঁকা গুলি, রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুঁড়ে পুলিশ।
প্রায় আধা ঘণ্টাব্যাপী উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ চলে। পুলিশের শক্ত অবস্থান ও প্রতিরোধের মুখে বিক্ষোভকারী দোকানদাররা পিছু হটে। এ সময় আহত হন কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মুনীর-উল-গীয়াস, যমুনা টিভির কক্সবাজার প্রতিনিধি নুরুল করিম রাসেল, সাংবাদিক ইকবাল বাহার চৌধুরীসহ ১০ জন। তাঁদের জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সচিব আবু জাফর রাশেদ সাংবাদিকদের জানান, মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের নির্দেশনার আলোকে আজ উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। কিন্তু অভিযান শুরুর সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসায়ীরা পুলিশকে লক্ষ করে ইটপাটকেল ছুঁড়তে থাকে। বিক্ষোভ করে উচ্ছেদ কার্যক্রমে চরমভাবে বাধা দেয়। ক্ষোভ থামাতে ফাঁকা গুলি, রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল ছুড়ে পুলিশ। পুলিশের শক্ত অবস্থান ও প্রতিরোধের মুখে বিক্ষোভকারী দোকানদাররা পিছু হটে।
এর আগে গত ১৫ অক্টোবর দুপুরে প্রশাসনের লোকজন সুগন্ধা পয়েন্টে উচ্ছেদ অভিযানে যান। ব্যবসায়ীদের মালামাল সরাতে এক দিনের সময় দেওয়া হয়। দুই দিন পর আজ অভিযান চালানো হয়।