কক্সবাজারে শনিবার থেকে লকডাউন, অধিকাংশ এলাকায় ‘রেড জোন’
কক্সবাজার জেলায় করোনা সংক্রমণের পরিমাণ আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলেছে। পৌরসভাসহ কয়েকটি এলাকাকে ‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আর সেসব এলাকায় আগামী দুই সপ্তাহের জন্য কঠোর লকডাউন ঘোষণা করেছে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসন। অবস্থার উন্নতি না হলে লকডাউনের সময় আরো বৃদ্ধি করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
এ সময় রেড জোন এলাকায় বাইরে থেকে কেউ প্রবেশ করতে পারবে না; আবার কেউ বাইরে যেতেও পারবে না।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এবং জেলা করোনা সংক্রান্ত ওয়ার্কিং কমিটির আহ্বায়ক মো. আশরাফুল আফসারের নেতৃত্বে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে জুম (zoom) ভিডিও কনফারেন্সে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সভায় কক্সবাজার পৌরসভার ১ ও ১২ নম্বর ওয়ার্ডকে ‘ইয়েলো জোন‘ এবং ২ থেকে ১১ নম্বর অর্থাৎ বাকি ১০টি ওয়ার্ডকে ‘রেড জোন‘ এলাকায় ঘোষণা করা হয়।
একইভাবে জেলার চকরিয়া, মহেশখালী ও টেকনাফ পৌরসভা এবং জেলার আট উপজেলায় করোনা সংক্রমণের হারের ভিত্তিতে তিনটি জোনে ভাগ করে লকডাউন কার্যকর করা হবে।
সভায় জানানো হয়, করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যার ভিত্তিতে কক্সবাজার জেলাকে তিনটি জোনে বিভক্ত করা হয়েছে। জেলার আটটি উপজেলাকে ইউনিয়ন ভিত্তিক ও চারটি পৌরসভাকে ওয়ার্ড ভিত্তিক বিন্যাস করে ম্যাপ তৈরি করা হয়েছে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘আগামীকাল শনিবার থেকে ১৯ জুন শুক্রবার পর্যন্ত কক্সবাজার পৌরসভায় লকডাউন প্রাথমিকভাবে বলবৎ থাকবে। প্রয়োজন হলে পরে সিদ্ধান্ত নিয়ে সময় আরো বাড়ানো হবে।’
সভায় নেওয়া সিদ্ধান্তসমূহের মধ্যে রয়েছে কক্সবাজার পৌরসভার প্রতিটি ওয়ার্ডে ৩০ জন করে স্বেচ্ছাসেবক থাকবেন। তাদের কক্সবাজার সদর উপজেলার ইউএনও মাহমুদ উল্লাহ মারুফ পরিচয়পত্র ইস্যু করবেন। লকডাউন চলাকালে শুধু স্বেচ্ছাসেবক ও ইমার্জেন্সি কাজের লোকজন ছাড়া অন্য কেউ বাড়ি ঘর থেকে কোনো অবস্থাতেই বের হতে পারবেন না। কক্সবাজার পৌর এলাকায় যাদের বাড়ির বাইরে পাওয়া যাবে, তাদের কঠোর আইনের আওতায় আনা হবে।
সপ্তাহের রোববার ও বৃহস্পতিবার সীমিত সময়ের জন্য কাঁচাবাজার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রীর দোকান খুলতে পারবে। সে সময় স্বাস্থ্যবিধি মানাতে, সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে প্রশাসনের সেখানেও কঠোর মনিটরিং থাকবে। সপ্তাহের অন্যান্য সময় সব মার্কেট, শপিং মল, দোকান, কাঁচাবাজার সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে।
একইভাবে কক্সবাজার পৌর এলাকায় অবস্থিত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোও সপ্তাহের রোববার ও বৃহস্পতিবার সীমিত সময়ের জন্য খেলা থাকবে। কোনো প্রকার গাড়ি লিংক রোড থেকে পশ্চিম দিকে শহরে আসতে পারবে না। শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালেও প্রবেশ করতে পারবে না। লিংক রোড থেকেই সব গাড়ি ছেড়ে যাবে এবং সেখানে এসে থামবে।
কক্সবাজারে কর্মরত আই-এনজিও এবং এনজিওগুলোর কোনো গাড়ি লিংক রোড থেকে পশ্চিমে শহরে আসতে পারবে না। শনিবার থেকে ১৯ জুন পর্যন্ত আই-এনজিও এবং এনজিওগুলোকে লিংক রোডে তাদের গাড়ি রেখে ও সেখান থেকে গাড়ি ছেড়ে তাদের অফিস করতে হবে।
কক্সবাজার জেলার বাইরের কোনো লোককে এই দুই সপ্তাহ কক্সবাজার শহরে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। গণমাধ্যমকর্মী, সংবাদ সংগ্রহকারী, ক্যামেরাম্যান ও সংশ্লিষ্টদের কক্সবাজার প্রেসক্লাব কর্তৃপক্ষ থেকে ইস্যু করা পরিচয়পত্র নিয়ে চলাচল করতে হবে। কক্সবাজার প্রেসক্লাব কর্তৃপক্ষের ইস্যুকৃত পরিচয়পত্র নিয়ে গণমাধ্যমের লোকজন ও সংশ্লিষ্টরা সংবাদ সংগ্রহ ও ভিজিলেন্স টিমের সঙ্গে থাকতে পারবে।
শহরের মসজিদগুলোতে কর্তৃপক্ষের নির্দেশিত সংখ্যার বেশি মুসল্লি জামাতে অংশ নিতে ও মসজিদে যেতে পারবে না। কর্তৃপক্ষের এসব নির্দেশনার বিষয়ে কক্সবাজার জেলা তথ্য অফিস, কক্সবাজার পৌরসভা, কক্সবাজার সদর উপজেলার ইউএনও এবং কক্সবাজার পৌর আওয়ামী লীগ আজ শুক্রবার পুরো কক্সবাজার শহরে মাইকিং করবে।
ভিডিও কনফারেন্সে জানানো হয়, শুধুমাত্র কক্সবাজার পৌরসভায় ২৭৬ জন করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে সর্বনিম্ন হলো ১ নম্বর ওয়ার্ডে পাঁচজন এবং ১২ নম্বর ওয়ার্ডে তিনজন। এর মধ্যে কক্সবাজার পৌরসভায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ১০ জন।
কক্সবাজার জেলায় এ পর্যন্ত ৮৮৬ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। প্রায় আড়াইশ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। মারা গেছেন ২০ জন। ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্প রয়েছে ঝুঁকিতে। এর মধ্যে একজন রোহিঙ্গা মারা গেছেন, করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ২৯ জন রোহিঙ্গা।