কক্সবাজারে বৈদ্যুতিক তারের ফাঁদে হাতি ও যুবকের মৃত্যু
কক্সবাজারের পাহাড়ি এলাকায় বৈদ্যুতিক তারের ফাঁদে আরো এক হাতির মৃত্যু হয়েছে। জেলার চকরিয়া উপজেলার সীমান্ত লাগোয়া বান্দরবান জেলার লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের কুমারী গ্রামের একটি ছরাখালে আজ শনিবার সকালে মৃত হাতিটি পাওয়া যায়। বৈদ্যুতিক তারের ফাঁদে পড়ে এই হাতিটি মারা যায় বলে ওই গ্রামের লোকজন জানিয়েছে।
একদিন আগে কক্সবাজার জেলার টেকনাফে বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে একটি হাতির মৃত্যুর পরই আরেকটি হাতির মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া গেল।
এদিকে, গতকাল শুক্রবার বিকেলে ফাঁসিয়াখালীর ওই জায়গায় বৈদ্যুতিক তারে স্পৃষ্ট হয়ে আব্দুর রহিম নামের এক যুবকও মারা যায়।
ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন মজুমদার বলেন, ‘বিদ্যুতের মূল পিলার থেকে দুর্বলভাবে টাঙানো বৈদ্যুতিক তারের সঙ্গে স্পৃষ্ট হয়ে আব্দুর রহিমের মৃত্যু হয়। তাঁর মরদেহ উদ্ধার করেছে লামা থানার পুলিশ।’ হাতির মৃত্যুর ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘স্থানীয় পাহাড়ি এলাকায় অনেকেই ধানক্ষেতে বন্যহাতির আক্রমণ ঠেকাতে চলাচলের রাস্তায় বৈদ্যুতিক তার দিয়ে ফাঁদ বসায়, যাতে হাতির পাল না আসে।’
এদিকে, লামা বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) এস এম কায়সার বলেন, ‘সকালে হাতির মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে একদল বনকর্মীকে পাঠানো হয়েছে। এ দলে বন কর্মকর্তা ও বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ রয়েছে। তারা হাতির সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেছে। হাতির শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।’
ডিএফও আরো বলেন, ‘ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়া গেলে বলা যাবে হাতিটি বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে মারা গেছে কি না।’ তিনি স্বীকার করেন ওই পাহাড়ি এলাকার গ্রামবাসীরা বন্যহাতি থেকে তাদের ফসল রক্ষায় নানা ধরনের ফাঁদ দিয়ে থাকে।
দুদিনের মাথায় দুটি হাতির মৃত্যুতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কক্সবাজারের পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা। পরিবেশ বিশেষজ্ঞ বিশ্বজিত সেন বলেন, ‘কক্সবাজার এবং বান্দরবান পাহাড়ি এলাকায় অবস্থান করা হাতির খাদ্য এবং আবাসস্থল বিপন্ন, তাই হাতিরা খাদ্যের সন্ধানে লোকালয়ে চলে আসছে। হাতির নিরাপদ আবাসস্থল এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে ওই এলাকার হাতিগুলোর জীবন বিপন্ন হবে।’
জানা গেছে, গত দুই বছরে কক্সবাজারের বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় আটটি হাতির মৃত্যু হয়েছে। কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের পাহাড়ি এলাকায় ৬০টিরও অধিক হাতির চলাচল রুদ্ধ হয়ে পড়েছে। উখিয়া-টেকনাফের ১০ হাজার একর গভীর বনাঞ্চল গত তিন বছর আগে ১১ লাখ রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অধীনে চলে যাওয়ায় হাতিগুলো আটকা পড়েছে। পুরো এলাকায় রোহিঙ্গাদের বিচরণ বেড়ে যাওয়ায় উখিয়া-টেকনাফের সঙ্গে নাইক্ষ্যংছড়ি বান্দরবানের হাতির ২৩টি নিরাপদ চলাচলের করিডোর রুদ্ধ হয়ে গেছে। খাদ্যের সন্ধানে লোকালয়ে হাতি চলে আসায় হাতির আক্রমণের শিকার হচ্ছে গ্রামের লোকজন। উখিয়া কুতুপালং মেগা ক্যাম্পের লম্বাশিয়া এবং মধুরছড়া ছিল হাতির নিরাপদ আবাসস্থল। সেটিও এখন নেই। গত তিন বছরে হাতির আক্রমণে ১৩ জন রোহিঙ্গাসহ ২২ জনেরও অধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন।