কক্সবাজারে করোনা সংক্রমণের হার নিম্নমুখী
কক্সবাজারে করোনা শনাক্তের সংখ্যা তিন হাজার ছাড়ালেও জুলাই মাসের শুরু থেকে সংক্রমণ কমতে শুরু করেছে। বর্তমানে জেলায় সংক্রমণের হার শতকরা ৬ থেকে ৮ শতাংশে নেমে এসেছে। দেশের মধ্যে প্রথম রেড জোন হিসেবে ঘোষিত কক্সবাজার পৌর এলাকার পাশাপাশি জেলায় লকডাউন বাস্তবায়নের কারণে করোনা সংক্রমণের হার কমতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা। তবে বর্তমানে লকডাউনের মেয়াদকাল শেষ হলেও কন্ট্যাক্ট ট্রেসিংয়ের মাধ্যমে সংক্রমণের লাগাম টেনে ধরার কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে বলেও জানানো হয়।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সংক্রমণের নিম্নমুখী হারের এ ধারা অব্যাহত থাকলে কক্সবাজারকে করোনামুক্ত করা সম্ভব হবে।
কক্সবাজার সিভিল সার্জন কার্যালয় জানিয়েছে, গতকাল সোমবার পর্যন্ত জেলায় করোনা শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ২৮ জনে। এ পর্যন্ত করোনা থেকে সুস্থ হয়েছে এক হাজার ৮১২ জন। এ ছাড়া করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ৪৭ জন। বর্তমানে আক্রান্তের চেয়ে সুস্থতার হার বেশি।
জানা গেছে, করোনা সংক্রমণের হার ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় জেলা প্রশাসন গত ৬ জুন থেকে ২০ জুন পর্যন্ত কক্সবাজার পৌর এলাকাসহ জেলার কয়েকটি উপজেলার সংক্রমণ প্রবণ এলাকাকে দেশের মধ্যে প্রথম রেড জোন ঘোষণা করে দ্বিতীয় দফায় লকডাউন করে। পরে লকডাউনের মেয়াদকাল বাড়িয়ে ৩০ জুন পর্যন্ত করা হয়। এ ছাড়া জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় গত ১১ জুলাই শনিবার পর্যন্ত এসব এলাকায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে।
স্বাস্থ্য বিভাগ ও প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের তথ্য অনুযায়ী, রেড জোন ঘোষণা করে লকডাউন করার আগে জেলায় করোনা সংক্রমণের হার ছিল নমুনা পরীক্ষার শতকরা ৩০ থেকে ৪০ ভাগের কাছাকাছি। এখন তা দিন দিন কমতে শুরু করেছে। সর্বশেষ গত ১ জুলাই থেকে গতকাল সোমবার পর্যন্ত সংক্রমণের এ হার গড়ে ৮ শতাংশের নিচে রয়েছে বলে জানায় সিভিল সার্জন কার্যালয়।
এদিকে, জেলায় করোনা সংক্রমণের নিম্নমুখী হারের এ ধারা অব্যাহত রাখতে কন্ট্যাক্ট ট্রেসিংয়ের মাধ্যমে এলাকাভিত্তিক রোগী শনাক্ত, আক্রান্ত রোগীদের পর্যবেক্ষণ ও তাদের আইসোলেটেড করাসহ সামাজিক তত্ত্বাবধানের উদ্যোগ নিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ ও প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
এ লক্ষ্যে কক্সবাজার পৌর এলাকায় গঠন করা হয়েছে ৬০ জনের প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবক দল। কক্সবাজার শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. নজিবুল ইসলামকে সমন্বয়ক করে এই স্বেচ্ছাসেবক দল গঠন করা হয়।
নজিবুল ইসলাম জানান, গত জুন মাসে যখন কক্সবাজার জেলায় করোনা সংক্রমণের হার বাড়তে থাকে, তখন জেলা প্রশাসনের আহ্বানে স্বেচ্ছাসেবক দল গঠন করে করোনা রোগীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কন্ট্যাক্ট ট্রেসিংয়ের কাজ শুরু করা হয়, কক্সবাজার শহরে করোনা রোগীর সংস্পর্শে আসা প্রায় সাত শতাধিক লোককে চিহ্নিত করা হয়, তাদের আইসোলেশনে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয় এবং তাদের মধ্যে উপসর্গ থাকা ৫০ জনকে নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। শুধু তাই নয়, যারা করোনায় আক্রান্ত হয়েছে, তাদের চিকিৎসা সহায়তার পাশাপাশি খাদ্য সহায়তাও দেওয়া হয়।
কক্সবাজার জেলা সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবুর রহমান জানান, সংক্রমণ প্রবণ এলাকাগুলো চিহ্নিত পূর্বক রেড জোন ঘোষণা করে লকডাউন করায় জেলায় করোনা সংক্রমণের হার এখন নিম্নমুখী। এতে ব্যাপক হারে সংক্রমণের আশঙ্কা এখন অনেকটা কমে এসেছে। এখন চেষ্টা চলছে কন্ট্যাক্ট ট্রেসিংয়ের মাধ্যমে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের। সংক্রমণের হার শূন্যের কোঠায় না আসা পর্যন্ত এই কন্ট্যাক্ট ট্রেসিংয়ের কাজ চলমান থাকবে বলে জানান তিনি।
এদিকে, জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলছেন, এখন করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা প্রদানে ঘাটতি পূরণের জন্য কাজ চলছে। এতে অনেকটা অগ্রগতিও হয়েছে। কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে আইসিইউ সেবা নিশ্চিত করা হয়েছে। ঈদুল আজহা পর্যন্ত কক্সবাজারে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সরকারি ও বেসরকারি অফিসে কার্যক্রম চলবে এবং সৈকতে পর্যটকদের আগমন নিষিদ্ধ থাকবে।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সোমবার পর্যন্ত ৫৭ জন রোহিঙ্গাসহ কক্সবাজারে করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে তিন হাজার ২৮ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছে এক হাজার ৮১২ জন। এ ছাড়া পাঁচজন রোহিঙ্গাসহ জেলায় মৃত্যু হয়েছে ৪৭ জনের। তবে রেড জোন ঘোষণা করে লকডাউন করার আগেই চার ভাগের তিন ভাগ আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। বর্তমানে কক্সবাজারে আক্রান্তের হারের চেয়ে সুস্থতার হার অনেক বেশি বলে জানায় সিভিল সার্জন কার্যালয়।
লকডাউন কার্যকর করার পর গত এক সপ্তাহের করোনা শনাক্তের হার বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গতকাল কক্সবাজারে মোট ২৭০ জনের নমুনা পরীক্ষায় পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে ২৩ জনের। গত রোববার ৩৩৭ জনের নমুনা পরীক্ষায় পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে ২৭ জনের। গত শনিবার ৯৬ জনের নমুনা পরীক্ষায় পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে ১০ জনের। গত শুক্রবার ৩০৪ জনের নমুনা পরীক্ষায় পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে ২৩ জনের। গত বৃহস্পতিবার ৩৫২ জনের নমুনা পরীক্ষায় করোনা ধরা পড়ে ৪৫ জনের। গত বুধবার ২২৮ জনের নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হয় ২৪ জনের। গত মঙ্গলবার ৩২৪ জনের নমুনা পরীক্ষায় পজিটিভ রিপোর্ট আসে ৫৪ জনের। এবং গত ৬ জুলাই সোমবার ১৬৪ জনের নমুনা পরীক্ষায় পজিটিভ রিপোর্ট আসে মাত্র নয়জনের। অথচ জুন মাসে এই চিত্র ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ জনের নমুনা পরীক্ষায় জেলায় অন্তত ৯০ থেকে ১০০-এর কাছাকাছি সংখ্যক মানুষের করোনা শনাক্ত হতো।
গতকাল পর্যন্ত কক্সবাজার সদর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যেই সদর উপজেলায় আক্রান্ত শনাক্তের সংখ্যা এক হাজার ৪২৯ জন। এর মধ্যে সিংহভাগই কক্সবাজার শহরের বাসিন্দা। শহরে আক্রান্তের সংখ্যা এক হাজার ১৪৮ জন। এ ছাড়া চকরিয়া উপজেলায় ৩৪৬ জন, রামু উপজেলায় ২৫৬ জন, উখিয়া উপজেলায় ৩২০ জন, টেকনাফ উপজেলায় ২৬৬ জন, মহেশখালী উপজেলায় ১৫২ জন, পেকুয়া উপজেলায় ১২৭ জন, কুতুবদিয়া উপজেলায় ৭৫ জন ও শরনার্থী ক্যাম্পে ৫৭ জন রোহিঙ্গা আক্রান্ত হয়েছে।