‘ওয়েস্টিনের প্রেসিডেন্ট স্যুট সবসময় বুকড করে রাখতেন পাপিয়া’
রাজধানীর অভিজাত হোটেলে বসে নানা অপকর্মের মাধ্যমে মাসে কোটি টাকা আয় করতেন যুব মহিলা লীগের নরসিংদী জেলার সাধারণ সম্পাদক শামিমা নূর পাপিয়া। গতকাল শনিবার রাজধানীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে পাপিয়াকে (২৮) গ্রেপ্তার করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। এ সময় তাঁর আরো তিন সঙ্গীকে আটক করা হয়।
আজ রোববার দুপুরে পাপিয়ার ফার্মগেটের বাসা থেকে অস্ত্র, মদসহ বিপুল অবৈধ টাকা উদ্ধার করা হয়। পরে বিকেলে রাজধানীর কাওরানবাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে
এক সংবাদ সম্মেলনে লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাফী উল্লাহ বুলবুল এসব দাবি করেন।
র্যাব কর্মকর্তা বলেন, ‘আজ দুপুরে রাজধানীর ফার্মগেটে পাপিয়ার বাসায় অভিযান চালিয়ে একটি বিদেশি পিস্তল, দুটি পিস্তলের ম্যাগাজিন, ২০টি পিস্তলের গুলি, পাঁচ বোতল বিদেশি মদ ও নগদ ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।’
সংবাদ সম্মলনে বলা হয়, ‘রাজধানীর গুলশানের হোটেল ওয়েস্টিনে প্রেসিডেন্ট স্যুট নিজের নামে সবসময় বুকড করে নানা ধরনের অসামাজিক কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছিলেন পাপিয়া। যিনি হোটেলটির বারে বিলবাবদ প্রতিদিন পরিশোধ করতেন আড়াই লাখ টাকা। এ ছাড়া নারীদের দিয়ে অবৈধ কাজ করাতেন। যাদের মাসিক আট হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত দেওয়া হতো। এ ছাড়া পাপিয়ার কথা কেউ না শুনলে তাদের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে নির্যাতন করা হতো।’
এ ঘটনায় পাপিয়ার বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক ও মানিলন্ডারিং আইনে মামলার প্রস্তুতি চলছে জানিয়ে র্যাব জানায়, পাপিয়া ও তাঁর স্বামী মফিজুর রহমান নারীদের দিয়ে জোরপূর্বক অনৈতিক কাজ করাতেন। যাদের বেশির ভাগকে নরসিংদী থেকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে এবং বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে নিয়ে আসা হতো।
রাজধানীর তেজগাঁওয়ে এফডিসি গেট সংলগ্ন এলাকায় পাপিয়ার যৌথ মালিকানাধীন শোরুম ‘কার একচেঞ্জ’ এবং নরসিংদীতে ‘কেএমসি কার ওয়াশ অ্যান্ড অটো সলিউশন’ নামে একটি গাড়ি সার্ভিসিং সেন্টার আছে। এসব ব্যবসার আড়ালে অবৈধ অস্ত্র, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডই ছিল তার প্রধান কাজ।
পাপিয়া সমাজসেবার নামে নরসিংদী এলাকায় অসহায় নারীদের আর্থিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে সহযোগিতার নামে তাদের অনৈতিক কাজে ব্যবহার করতেন বলেও জানায় র্যাব।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আরো জানায়, বেশিরভাগ সময় পাপিয়া নরসিংদী ও রাজধানীর বিভিন্ন বিলাসবহুল হোটেলে অবস্থান করতেন। নরসিংদী এলাকায় চাঁদাবাজির জন্য তার একটি ক্যাডার বাহিনীও আছে। স্বামীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় অবৈধ অস্ত্র-মাদক ব্যবসা ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে অল্প সময়ের মধ্যে তিনি নরসিংদী ও ঢাকায় একাধিক বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, ফ্ল্যাট, প্লটসহ বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থের মালিক বনে গেছেন।
পাপিয়ার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী তার স্ত্রীর ব্যবসায় সহযোগিতার পাশাপাশি থাইল্যান্ডে বারের ব্যবসা করেন। দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ অস্ত্র, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তিনি। সুমন স্ত্রীর মাধ্যম প্রত্যন্ত অঞ্চলের অসহায় নারীদের অনৈতিক কাজে ব্যবহার করেন, যা নরসিংদীর অনেক মানুষ জানে। তবে তারা ভয়ে প্রতিবাদ করত না।