ওয়াসার এমডির পুনর্নিয়োগ অনৈতিক ও বিধিবহির্ভূত : টিআইবি
বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালককেই (এমডি) অনৈতিক ও বিধিবহির্ভূতভাবে পুনর্নিয়োগ দেওয়ার প্রস্তাব নিয়ে ঢাকা ওয়াসা বোর্ড যে বিশেষ বৈঠকে বসতে যাচ্ছে তাকে দুর্নীতির সুরক্ষামূলক আখ্যায়িত করে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
আজ শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংস্থাটি বলছে, সভার আলোচ্যসূচির ভাষায় এটা স্পষ্ট যে, বরাবরের মতো এবারও নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই ঢাকা ওয়াসার শীর্ষ ব্যবস্থাপনায় একই ব্যক্তির অনৈতিক ও অবৈধ বহাল অব্যাহত রেখে দীর্ঘকালের লালিত এককেন্দ্রিক আধিপত্যবাদ অপরিবর্তিত রাখার সব ব্যবস্থা করে ফেলা হয়েছে।
ধারাবাহিক ব্যর্থতা এবং অনিয়মের গুরুতর সব অভিযোগ থাকার পরও এই পদে প্রশ্নবিদ্ধ নিয়োগ ও অব্যাহত পুনর্নিয়োগ ওয়াসায় শুদ্ধাচার তথা সার্বিকভাবে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠার রাষ্ট্রীয় অঙ্গীকারকে প্রহসনে পরিণত করেছে বলে মনে করে টিআইবি।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘গণমাধ্যম ও নির্ভরযোগ্য প্রত্যক্ষ তথ্য সূত্র অনুযায়ী ঢাকা ওয়াসার বোর্ডের বিশেষ সভায় শুধুমাত্র বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নাম উল্লেখ করে তাকে আবারও তিন বছর মেয়াদে পুনর্নিয়োগের সুপারিশ চূড়ান্ত করার কথা বলা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, এই পদে দরখাস্ত আহ্বান করা হয়েছিল কি না, কারা আবেদন করেছিলেন, কেন তারা যোগ্য বিবেচিত হলেন না, বা কেন বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালকই একমাত্র উপযুক্ত প্রার্থী, কেন সংশ্লিষ্ট বিধি অবমাননা করে মেয়াদের পর মেয়াদ একই ব্যক্তিকে নবায়ন দান অপরিহার্য, এসব প্রক্রিয়াগত প্রশ্নের উত্তর যাচাই করা হয়েছে কি না, তার কোনো উল্লেখ নেই।’
“পক্ষান্তরে বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালকের প্রায় দশকব্যাপী দায়িত্বকালে জনদুর্ভোগের বিষয়টি কারো অজানা নয়। টিআইবির গবেষণা ও নির্ভরযোগ্য সংশ্লিষ্ট সব সূত্রে ওয়াসার ছোট-বড় অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন ও সেবা পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতির অভূতপূর্ব বিস্তারের অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে এবং তার কোনো কোনো বিষয় তদন্তাধীন রয়েছে। আমরা আশা করেছিলাম, সরকারপ্রধান যেখানে বারংবার দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘শূন্য সহনশীলতার’ কথা বলছেন, জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল বাস্তবায়ন করে সুশাসন প্রতিষ্ঠার কথা বলছেন, তখন এর একটা সুরাহা হবে। কিন্তু ঘটনা যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তাতে আমরা আর হতাশার কথা বলতে পারছি না। আমরা এখন ওয়াসায় শুদ্ধাচার বা সুশাসনের সম্ভাবনার কথা বলতেও লজ্জা পাচ্ছি এবং এই প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি ও সুরক্ষাকারী তোড়জোড়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এই পথ পরিহারের জন্য মন্ত্রণালয় ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।“
ড. জামান আরো বলেন, ‘২০০৯ সালে ঢাকা ওয়াসার বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিতর্কিত নিয়োগের পর প্রশ্নবিদ্ধ প্রক্রিয়ায় টানা পাঁচ মেয়াদে ১১ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছেন। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে ও অন্যান্য নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, প্রতিবারই তার নিয়োগ নবায়নের ক্ষেত্রে কোনো না কোনোভাবে আইন ও নিয়মের ব্যত্যয় হয়েছে। এমনকি প্রথমবার নিয়োগের সময়ই অনিয়মের অভিযোগে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে পরবর্তী নিয়োগে সতর্কতা অবলম্বনের জন্য দালিলিক নির্দেশ দেওয়া হয়। তারপরও কখনো বয়সসীমা বাড়িয়ে, আবার কখনো বা বোর্ডের সাম্প্রতিক সভার সুপারিশ পাশ কাটিয়ে পুরনো সভার তামাদি সুপারিশ ব্যবহার করে, এমনকি বোর্ডের মতামত গ্রহণেরই তোয়াক্কা না করে প্রভাবশালী মহলের যোগসাজশে, একটি ক্ষেত্রে একজন বিতর্কের ঊর্ধ্বে মন্ত্রীর লিখিত নির্দেশ অমান্য করে দৈব প্রক্রিয়ায় পুনর্নিয়োগ নিশ্চিত করা হয়। যা শুধু আইনেরই সুস্পষ্ট ব্যত্যয় নয়, বরং ক্ষমতার অপব্যবহার ও যোগসাজশের সংস্কৃতির নির্লজ্জ প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের দৃষ্টান্ত।‘
আবারও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা প্রকাশ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সর্বশেষ বর্ধিত মেয়াদ আগামী ১৪ অক্টোবর ২০২০ শেষ হওয়ার পূর্বেই যথানিয়মে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট খাতে যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ সম্পন্ন করতে হবে। একইসঙ্গে, এই সংস্থার এবং এর সেবাগ্রহীতা জনগণের কল্যাণে বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালকের প্রশ্নবিদ্ধ নিয়োগ ও অব্যাহত পুনর্নিয়োগ বিষয়ে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ নিরীক্ষা সম্পন্ন করতে হবে। পাশাপাশি ওয়াসার সব পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীর বৈধ আয়ের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ সম্পদের সুষ্ঠু তদন্ত করে অনিয়ম ও দুর্নীতির জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।’