এ সরকার পুতুল সরকারে পরিণত হয়েছে : মির্জা ফখরুল
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আজকে এই সরকার আধিপত্যবাদের তাঁবেদারি করছে এবং তারা একটি পুতুল সরকারে পরিণত হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার শুধু আজকে নয়, তারা ১৯৭২-৭৫ সাল পর্যন্ত একটি তাবেদারি সরকারের ভূমিকা পালন করেছে এবং বাংলাদেশকে তারা একটি তাবেদারি রাষ্ট্রে পরিণত করতে চেয়েছিল। আজকে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে সুকৌশলে গণতন্ত্রের একটি মোড়ক লাগিয়ে একই কায়দায় সেই একদলীয় শাসনব্যবস্থা বাকশাল এবং তাঁবেদারি রাষ্ট্র গঠন করতে চায়।’
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (অ্যাব) আয়োজিত স্মরণসভায় বিএনপির মহাসচিব এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আবরার হত্যার পরে সেদিন যারা সোচ্চার হয়েছিলেন সেই তরুণ সমাজের আজকে কোনো কর্মসূচি দেখতে পাচ্ছি না। পরিবর্তন আসে সবসময় তরুণ এবং যুবকদের মাধ্যমে। অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশে সেই তরুণ-যুবকদেরকে আমরা সামনে দেখতে পাচ্ছি না। আবরার হত্যা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, আবরার হত্যা এ দেশের যে সামগ্রিক সংকট, সেই সংকটের একটা প্রতিচ্ছবি। বহু আবরার হত্যা হয়েছে এবং আমরা সবাই জানি, আমাদের পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী গুম করে ফেলা হয়েছে। সহস্রাধিক নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। কোনোটিই বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটি একটি সুদূরপ্রসারী আধিপত্যবাদী চক্রান্ত।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এদেশের মানুষ চিরকাল অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছে। স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছে যুগ যুগ ধরে। আমি বিশ্বাস করি, কখনোই বাংলাদেশের মানুষকে এভাবে পরাজিত করা সম্ভব হবে না। এই সরকারকে অবশ্যই সরে যেতে হবে এবং জনগণের কাছে তাদেরকে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। এই সরকারের কীর্তিকলাপ বর্ণনা করে আপনাদের সময় নষ্ট করতে চাই না। বলার কোনো জায়গা নেই। এই সরকার কয়েক বছরে বাংলাদেশকে পুরোপুরি একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। এর কোথাও কোনো জবাবদিহিতা নেই, কোথাও ন্যায়বিচার নেই। মানুষের জীবন এবং জীবিকার কোনো কিছু তারা অবশিষ্ট রাখেনি।’
সাংবাদিক কনক সরওয়ার প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘এই সরকারের অত্যাচার-নির্যাতনে সে পালিয়ে জীবন রক্ষার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নিয়েছে। সেখান থেকে সে কিছু সত্য কথা তাঁর চ্যানেলের মাধ্যমে প্রচার করে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সফরকে কেন্দ্র করে যে প্রতিবেদনটি সে প্রকাশ করে সেজন্য ভয়াবহ প্রতিহিংসাপরায়ণ এই সরকার তাঁর (কনক সরওয়ার) বোনকে গ্রেপ্তার করেছে। তিনি কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন, তিনি একজন গৃহবধূ। শুধু গ্রেপ্তারই করেনি, নির্যাতন করেছে, তাকে রিমান্ডে পর্যন্ত নিয়েছে। কতটা ফ্যাসিবাদী হলে, কতটা স্বৈরাচারী হলে, কতটা নির্যাতনকারী হলে এই ধরনের মানুষের ওপর অত্যাচার নির্যাতন করা যায়। আজকে সাংবাদিকের বোনের ওপর নির্যাতন হয়েছে, কদিন আগে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের ওপর নির্যাতন হয়েছে, এরকম আমাদের কত নেতাকর্মীদের বাড়িতে গিয়ে তাদের মা-বোনদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের বাড়িঘর ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এটা কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘বক্তব্য বেশি দেওয়ার সময় নয়, এখন কাজের সময়। আমি বারবার বলেছি, এই সংকট শুধু বিএনপি নয়, এটা হচ্ছে সমগ্র জাতির সংকট। এই সংকট থেকে উদ্ধার পেতে হলে আজকে সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। একা বিএনপি এই ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে পড়েনি, পুরো জাতি পড়েছে। সেই ক্ষেত্রে পুরো জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে হবে।’
দেশের সব রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি, সামাজিক সংগঠন এবং পেশাজীবী সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আসুন এই ভয়াবহ দানব সরকারকে সরিয়ে সত্যিকার অর্থে একটা জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করি। এতে কোনো দ্বিমত নেই এই সরকারকে সরিয়ে জনগণের একটা পার্লামেন্ট তৈরি করতে হবে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আসুন আজকে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ভুলে গিয়ে আমরা ঐক্যবদ্ধ হই। ঐক্যের মধ্য দিয়ে দুর্বার একটা গণআন্দোলন সৃষ্টি করি। সেই গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই অবৈধ সরকার যারা বিনা নির্বাচনে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে তাদের সরিয়ে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র আমরা নির্মাণ করি।’
প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম রিজুর সভাপতিত্বে আবরার ফাহাদের স্মরণসভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, শওকত মাহমুদ প্রমুখ।