এসপি হারুনকে দেখে যা করলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সপ্তাহ উপলক্ষে গতকাল বুধবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে গিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। এ সময় জেলার বিদায়ী পুলিশ সুপার (এসপি) হারুন অর রশীদকে দেখে মুখভার করে নেন মন্ত্রী। এসপিকে উদ্দেশ করে মাথা নেড়ে কিছু বলে অনুষ্ঠানস্থলে চলে যান। এরপর সেই অনুষ্ঠানে দেখা যায়নি এসপিকে।
গত ৩ নভেম্বর এসপি হারুনকে নারায়ণগঞ্জ থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ সদর দপ্তরে ট্রেইনি রিজার্ভ (টিআর) পদে বদলি করা হয়। এরপরও তিনি নারায়ণগঞ্জে ছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বুধবার বেলা ১১টার দিকে রূপগঞ্জের ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সপ্তাহ উপলক্ষে সরকারি গাড়িতে অনুষ্ঠানস্থলে আসেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এ সময় তাঁকে রিসিভ করতে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন, এসপি হারুন অর রশিদসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গাড়ি থেকে নেমেই জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিনের সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলেন। কথা বলার একপর্যায়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঘাড় ঘুরিয়ে স্যালুট দেওয়া অবস্থায় এসপি হারুনকে দেখতে পান। সঙ্গে সঙ্গে হাসিমুখ ভার করে তিনি এসপি হারুনকে উদ্দেশ করে কিছু কথা বলেন। তবে প্রতি উত্তরে এসপি হারুন কিছুই বলেননি। পরে তিনি কারো সঙ্গে কোনো কিছু না বলে অনুষ্ঠানের মঞ্চের দিকে চলে যান।
তখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসপি হারুনকে উদ্দেশ করে কী কথা বলেছেন সেটা স্পষ্টভাবে বোঝা যায়নি। আর এ বিষয়ে উপস্থিত কেউ কিছু বলতেও রাজি হননি।
অনুষ্ঠান শুরু হলেও চারপাশে এসপি হারুনকে আর দেখা যায়নি। তিনি অনুষ্ঠানেস্থলে ছিলেন নাকি সেখান থেকে চলে এসেছিলেন তাও কেউ কিছু বলতে পারেননি।
আয়োজকদের সূত্রে জানা যায়, এ অনুষ্ঠানে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী। এ ছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো. শহীদুজ্জামান, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাজ্জাদ হোসেন, পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদকে অতিথি করা হয়। এ ছাড়াও প্রশাসনের অনেকেই অতিথিদের তালিকা ছিলেন কিন্তু এসপি হারুনের নাম সেই তালিকায় ছিল না।
অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিক নির্দেশনায় ফায়ার সার্ভিসের আধুনিকায়ন ও ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশের ফায়ার সার্ভিস দুর্যোগ মোকাবিলায় সারা বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে।
আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ফায়ার সার্ভিসকে যুগোপযোগী করে তুলতে ৬২ হাজার অগ্নিসেনাকে দক্ষ স্বেচ্ছাসেবকের প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে। অগ্নিকাণ্ড ছাড়াও দেশের যেকোনো দুর্যোগপূর্ণ অগ্নিসেনা দল পরিস্থিতিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। বঙ্গবন্ধু ফায়ার একাডেমি প্রতিষ্ঠার কাজ চলছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, আগামী জুনে ৫৬৭টি ফায়ার স্টেশনের নির্মাণ সম্পন্ন হবে। ২০২২ সালে ৭০০ স্টেশন হবে। মুন্সীগঞ্জে অত্যাধুনিক ফায়ার ফ্যাকাল্টির কাজ চলছে। ২০ তলা পর্যন্ত উঁচুতে কাজ করতে সক্ষম। নদীমাতৃক দেশ হিসেবে নদী ফায়ার স্টেশনেরও কাজ চলছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দেশের সব উপজেলায় স্টেশন হচ্ছে। অগ্নিসেনাদের বেতন ১৮ থেকে ১৭তম গ্রেডে উন্নীত করা হয়েছে।
পারটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য এম এ হাশেমের ছেলে আম্বার গ্রুপের চেয়ারম্যান শওকত আজিজ রাসেলের স্ত্রী ও ছেলেকে গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর গুলশানের বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায় নারায়ণগঞ্জের পুলিশ। পরে তাঁরা মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পান।
ওই ঘটনার বিবরণ দিয়ে শওকত আজিজ সাংবাদিকদের বলেন, চাঁদা নিয়ে এসপি হারুন অর রশীদের সঙ্গে তাঁর পুরোনো বিরোধ ছিল। সম্প্রতি তিনি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে নতুন একটি প্রকল্পের কাজ শুরু করেছেন। সেখানেও হারুন বাগড়া দিচ্ছিলেন। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার তিনি তাঁর স্ত্রী-ছেলেকে একটি পার্টিতে নামিয়ে ঢাকা ক্লাবে আসেন। ক্লাব থেকে বেরিয়ে দেখেন তাঁর গাড়িটি নেই। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন গাড়ি আছে নারায়ণগঞ্জে। পরদিন রাতে তাঁর অনুপস্থিতিতে হারুন একদল পুলিশ নিয়ে তাঁর গুলশানের বাসায় ঢুকে ভাঙচুর করেন। এরপর তাঁর স্ত্রী-সন্তানকে নারায়ণগঞ্জে নিয়ে যান। এ বিষয়ে নিকটস্থ গুলশান থানাকে কিছু জানায়নি নারায়ণগঞ্জের পুলিশ। পরদিন তাঁর খোয়া যাওয়া গাড়িতে ইয়াবা, মদ ও গুলি উদ্ধারের ঘটনা সাজিয়ে তাঁর ও তাঁর গাড়িচালকের নামে মামলা করেন। গুলশানের বাসা থেকে স্ত্রী-সন্তানকে তুলে নিয়ে যাওয়ার একটি ভিডিও শওকত আজিজ রাসেল তাঁর ফেসবুকে শেয়ার করেন।
শওকত আজিজের স্ত্রী-ছেলেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর গত শনিবার নিজের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ভিন্ন একটি গল্প শোনান হারুন। তিনি দাবি করেন, শওকত আজিজের গাড়ি থেকে ২৮টি গুলি, এক হাজার ২০০ ইয়াবা বড়ি, ২৪ বোতল বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিদেশি মদ, ৪৮ ক্যান বিয়ার উদ্ধার করা হয়েছে। ওই সময় গাড়িতে শওকতের স্ত্রী ফারাহ রাসেল ও সন্তান আনাব আজিজ ছিলেন। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁদের আটক করা হয়েছিল। পরে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে এম এ হাসেম সহযোগিতা করবেন বলে মুচলেকা দেওয়ায় তাঁর স্ত্রী-পুত্রকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এ ঘটনার দুই দিনের মাথায় গত ৩ নভেম্বর এসপি হারুনকে নারায়ণগঞ্জ থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ সদর দপ্তরে ট্রেইনি রিজার্ভ (টিআর) পদে বদলি করা হয়। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে পুলিশ লাইনে তাঁকে বিদায় জানানো হয়।