এমসি কলেজে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ : দুই নম্বর আসামি তারেক গ্রেপ্তার
সিলেটের মুরারিচাঁদ (এমসি) কলেজে গৃহবধূ সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনার মামলার দুই নম্বর আসামি তারেক আহমদকে (২৮) সুনামগঞ্জের দিরাই থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিষয়টি এনটিভি অনলাইনকে নিশ্চিত করেছেন র্যাব-৯-এর অধিনায়ক আবু মুসা শরীফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘সন্ধ্যায় সাড়ে ৬টায় দিরাইয়ে এক আত্মীয়র বাসা থেকে তারেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
এ নিয়ে এ মামলায় মোট আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
স্বামীকে নিয়ে ঘুরতে গত শুক্রবার সন্ধ্যায় এমসি কলেজে গিয়েছিলেন এক নববধূ। এ সময় কলেজ ক্যাম্পাস থেকে পাঁচ থেকে ছয়জন তাঁদের জোরপূর্বক কলেজের ছাত্রাবাসে নিয়ে যায়। সেখানে একটি কক্ষে স্বামীকে আটকে রেখে গৃহবধূকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করেন তাঁরা। পরের দিন শনিবার ওই গৃহবধূর স্বামী বাদী হয়ে ছয়জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরো তিনজনকে আসামি করে মামলা করেন।
মামলার আসামিরা হলেন সাইফুর রহমান (২৮), শাহ মো. মাহবুবুর রহমান রনি (২৫), তারেক (২৮), অর্জুন লস্কর (২৫), রবিউল ইসলাম (২৫) ও মাহফুজুর রহমান মাছুম (২৫)। তাঁদের মধ্যে সাইফুর রহমান বালাগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা, রনির বাড়ি হবিগঞ্জে, তারেক সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার বাসিন্দা, অর্জুনের বাড়ি সিলেটের জকিগঞ্জে, রবিউলের বাড়ি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায় আর মাহফুজুর রহমান মাছুমের বাড়ি সিলেটের সদর উপজেলায়। অভিযোগ উঠেছে, মামলার এই ছয় আসামি ছাত্রলীগের কর্মী। যদিও মামলার এজাহারে সেই পরিচয় উল্লেখ করা হয়নি।
এ ঘটনায় সবশেষ আজ মঙ্গলবার মাহবুবুর রহমান রনি, রাজন ও আইনুলের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দ্বিতীয় আদালতের বিচারক এম সাইফুর রহমান পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এদের মধ্যে রাজন ও আইনুল ছিলেন সন্দেহভাজন। পরে তাঁদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
এ ছাড়া গতকাল সোমবার মধ্যরাতে মামলার ৬ নম্বর আসামি মাহফুজুর রহমান মাসুমকে সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার হরিপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ বলছে, ভারতে পালানোর চেষ্টা করছিলেন মাসুম।
এ নিয়ে চাঞ্চল্যকর এই মামলায় আট আসামিকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। মামলার প্রধান আসামি সাইফুর রহমান, ৪ নম্বর আসামি অর্জুন লস্কর ও ৫ নম্বর আসামি রবিউলকে গতকাল পাঁচ দিন করে রিমান্ড দিয়েছেন আদালত।
গত রোববার সকালে সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলা থেকে সাইফুর রহমান ও হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার মনতলা এলাকা থেকে অর্জুন লস্করকে গ্রেপ্তার করা হয়। সেদিন রাতে এ মামলার আরো দুই আসামি শাহ মো. মাহবুবুর রহমান রনি ও রবিউল ইসলামকে হবিগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। নবীগঞ্জ উপজেলার এক আত্মীয়র বাসা থেকে রবিউলকে গ্রেপ্তার করা হয়।
অপরদিকে একই দিন দিবাগত রাতে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার কচুয়া নয়াটিলা এলাকা থেকে রাজনকে আটক করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। তিনি এ মামলার অজ্ঞাতপরিচয় তিন আসামির একজন। রাজনকে আশ্রয় দেওয়া ও সহযোগিতা করায় আইনুলকে আটক করা হয়।
বিচারিক তদন্তের নির্দেশ
এমসি কলেজে গৃহবধূ সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় বিচারিক তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। আদেশে, সিলেটের নারী ও শিশু আদালতের বিচারকসহ তিনজনকে যৌথ তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কমিটিকে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে বলেছেন হাইকোর্ট। এ ছাড়া সিলেটের পুলিশ কমিশনারকে তদন্তের সময় কমিটির সদস্যদের নিরাপত্তা ও সহযোগিতা করতে বলা হয়েছে এবং তদন্তকাজে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সরঞ্জাম সরবরাহ করতে সিলেটের জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি একটি রিটের শুনানি শেষে হাইকোর্ট এমসি কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল ইস্যু করেছেন।
আজ মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী এমসি কলেজের ঘটনাটি আদালতের নজরে এনে প্রয়োজনীয় আদেশের আবেদন জানালে বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
আদেশে শিক্ষা সচিব, আইন সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, রেজিস্ট্রার, এমসি কলেজের অধ্যক্ষ, সিলেটের জেলা প্রশাসক, সিলেট মহানগর পুলিশের কমিশনার, এমসি কলেজের হোস্টেল সুপারকে দুই সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।