এবার নির্বাহী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করবে বিএনপি
দলের নির্বাহী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। শনিবার দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আজ রোববার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে দলের সিদ্ধান্তের কথা জানান দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মির্জা ফখরুল বলেন, গত ১৪, ১৫ ও ১৬ সেপ্টেম্বর বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। অবশিষ্ট সদস্যদের সঙ্গে আগামী ২১, ২২, ২৩ সেপ্টেম্বর মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
কেন্দ্রীয় কমিটির বাইরে মাঠপর্যায়ের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় হবে কিনা প্রশ্ন করা হলে বিএনপির মহাসচিব বলেন, এই তিনদিনের সভায় তারাও থাকবেন। কারণ জেলার সভাপতি পদাধিকার এক্স অফিসিও হিসেবে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। তারা অবশ্যই আসবেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, যখন ধারাবাহিক সভাগুলো শেষ হবে, তখন সময়মতো আমাদের মতামতগুলো আপনারা জানতে পারবেন। আমাদের পরবর্তী কর্মপন্থাও জানতে পারবেন। এসব মতবিনিময় সভায় রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক বিষয় আলোচনা হয়েছে। পুরো রাজনৈতিক পরিস্থিতি, বর্তমান পরিস্থিতি, একদলীয় শাসন প্রবর্তন করার যে একটা প্রচেষ্টা, বিরোধী দলের ওপরে যে নির্যাতন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি না দেওয়া, মিথ্যা মামলা-গায়েবি মামলা ইত্যাদি বিষয় আলোচনা হয়েছে।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমাদের বেশির ভাগ কমিটি তাদের পুনর্গঠনের কাজ শুরু করেছে, কাজ চলছে। অঙ্গসংগঠনগুলোরও কাজ শুরু হয়েছে বেশি কিছুদিন ধরে। থানাপর্যায়ে, মাঠপর্যায়ে হয়ে গেছে, ইউনিয়নপর্যায়ে হয়েছে। এখন জেলাপর্যায়ের হয়ে যাবে, হতে যাচ্ছে। যেহেতু করোনা মহামারি, সেই কারণে সম্মেলনগুলো করা সম্ভব হয়নি। বেশিরভাগ জায়গায় সম্মেলনের জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ঠিক একইভাবে বিএনপিরও যেসব মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি আছে, সেসব মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলোয় নতুন করে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হচ্ছে। তারা ওয়ার্ডপর্যায় থেকে শুরু করে ইউনিয়নপর্যায়ে একেবারে মাঠপর্যায়ে এবং একেবারে জেলাপর্যায়ে কাজ শুরু করেছে। কয়েকটি জেলায় সম্মেলন অতি দ্রুত শেষ হবে।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, মুক্তিযুদ্ধ, ৭৫-এর পটপরিবর্তন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও তাঁর সমাধি সম্পর্কে সরকারের ‘লাগাতার মিথ্যাচারের’ তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায় বিএনপি। শনিবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির নিয়মিত ভার্চুয়াল সভায় এ নিন্দা জানানো হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বলেন, জনগণকে বিভ্রান্ত করার লক্ষ্যে সরকার সংসদে অবৈধ ও মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করছে। জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনকে দৃষ্টির আড়ালে রাখার একটি ষড়যন্ত্র করছে। সভার সদস্যরা মনে করেন যে ইতিহাস বিকৃত করে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের বিরুদ্ধে এ ধরনের বিকৃত অপপ্রচার স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে চক্রান্ত ব্যতীত কিছু নয়। দলের স্থায়ী কমিটির সভায় এই ধরনের ‘নিকৃষ্ট মিথ্যাচার’ থেকে সরকারকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, স্থায়ী কমিটির সভায় সরকারি ওয়েবসাইটে প্রস্তাবিত ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা আইনের খসড়া প্রকাশে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। সভা মনে করে, এই ধরনের আইন ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষার কথা বলে নাগরিকের স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকার হরণ করার আরেকটি চক্রান্ত। এই আইন গণতন্ত্রের জন্য একটি বড় ধরনের হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। সভায় জনগণের ব্যক্তিগত অধিকার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা অক্ষুণ্ন রাখার আহ্বান জানানো হয়।
মির্জা ফখরুল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, স্থায়ী কমিটির সভা থেকে সংসদে ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু রাখার জন্য প্রণীত বিশেষ আইনের মেয়াদ আরো পাঁচ বছর বাড়িয়ে বিল পাস করানোর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, সভা মনে করে, ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো স্থাপন করা হয়েছিল শুধু আওয়ামী শাসকগোষ্ঠীর লুণ্ঠনের স্বার্থে। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের সব কর্মকাণ্ডকে ইনডেমিনিটি আইন পাস করে দুর্নীতির সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছিল এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন না করলেও ভাড়া প্রদানের ফলে জনগণের ট্যাক্সের টাকার বিশাল অংশ আওয়ামী দুর্নীতিবাজদের পকেটে গেছে।
সাবেক এ প্রতিমন্ত্রী বলেন, সভা আরো মনে করে যে প্রতি বছর কয়েক দফা বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে জনগণের ব্যাপক আর্থিক ক্ষতি করা হয়েছে। নতুন করে পাঁচ বছর এই বিশেষ আইনের মেয়াদ বাড়িয়ে লুটপাটের ব্যবস্থা আরো দীর্ঘায়িত করা হলো। সভায় অবিলম্বে এই বিল বাতিল করার আহ্বান জানানো হয়।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।