এবার কুষ্টিয়ার প্রিজাইডিং কর্মকর্তাকে নিরাপত্তার নির্দেশ হাইকোর্টের

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা পৌরসভা নির্বাচন চলাকালে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে পুলিশ সুপারের ‘অসৌজন্যমূলক’ আচরণের ঘটনার সময় উপস্থিত থাকা প্রিজাইডিং কর্মকর্তাকে নিরাপত্তা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে তাঁকে হয়রানি না করার নির্দেশ দিয়েছেন।
আজ বৃহস্পতিবার বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন।
সারওয়ার হোসেন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, “প্রিজাইডিং অফিসার আদালতে এসে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে আদালতকে বলেন, ‘মাই লর্ড এসপির পক্ষে বক্তব্য দিতে আমাকে হয়রানি করা হচ্ছে। গতকাল আমার কাছ থেকে জোরপূর্বক কিছু স্বাক্ষর নিয়ে গেছে।’ তিনি নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তা চেয়েছেন।”
পরে আদালত ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ওই প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ও তাঁর পরিবারের নিরাপত্তা বিধানের জন্য পুলিশের মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) নির্দেশ দেন।
ওই প্রিজাইডিং কর্মকর্তা হলেন ভেড়ামারা উপজেলার যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. শাহজাহান আলী।
ভেড়ামারা পৌরসভা নির্বাচন চলাকালে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মহসিন হাসানের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগের ঘটনায় গতকাল বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার (এসপি) এস এম তানভীর আরাফাতকে তলব করেন। আগামী ২৫ জানুয়ারি তাঁকে হাইকোর্টে হাজির হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে নিয়ে স্বতপ্রণোদিত হয়ে রুলসহ এ আদেশ দেন হাইকোর্ট। তার একদিন পর আজ নিরাপত্তা চেয়ে আদালতে যুক্ত হন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা।
গত ১৬ জানুয়ারি ভেড়ামারা পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। পরের দিন কুষ্টিয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মহসিন হাসান নির্বাচন কমিশনে একটি অভিযোগ দেন। ওই অভিযোগের একটি অনুলিপি সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছেও দেওয়া হয়।
অভিযোগে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মহসিন হাসান বলেন, ‘কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা পৌরসভা নির্বাচনে দায়িত্ব পালনের সময় জনৈক ভোটারের অভিযোগের ভিত্তিতে ভেড়ামারা পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করি। সেখানে কয়েকজনকে ভোটকেন্দ্রের বুথের ভেতর পোলিং এজেন্টদের সাথে বসে থাকতে দেখি। তাদের পরিচয়পত্র দেখাতে বললে তারা প্রিজাইডিং অফিসারের স্বাক্ষরিত এ ফোর সাইজের কাগজ দেখান। প্রিজাইডিং অফিসারের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলার সময় ওই কেন্দ্রে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এস এম তানভীর আরাফাত ৪০-৫০ জন বিভিন্ন পদধারী পুলিশ ফোর্সসহ আসেন। তিনি প্রবেশ করেই প্রিজাইডিং অফিসারকে উচ্চস্বরে তলব করেন।
এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমানসহ কয়েকজন ফোর্স প্রিজাইডিং অফিসারকে আমার সাথে কথা বলতে না দিয়েই তাকে আমার সামনে থেকে নিয়ে যাওয়ার জন্য চাপাচাপি করেন। তখন আমি আমার নিজের পরিচয় বলি এবং কথা শেষ হলে প্রিজাইডিং অফিসারকে নিয়ে যেতে বলি। এ কথা বলার পরও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ধমক দিয়ে প্রিজাইডিং অফিসারকে আমার সামনে থেকে পুলিশ সুপারের সামনে নেওয়ার সময় পুলিশ সুপার আমার দিকে অগ্রসর হন এবং তিনি আমাকে উচ্চস্বরে জিজ্ঞেস করেন আপনি কে? কী করেন এখানে?
আমি পরিচয় দিলে তিনি আরো ক্ষিপ্তস্বরে আমাকে বলেন, আপনি এখানে কী করেন? বেয়াদব, বের হয়ে যান এখান থেকে। পুলিশ সুপার ও তার ফোর্সদের আক্রমণাত্মক, চরম অসৌজন্যমূলক ও মারমুখী আচরণে হতচকিত ও কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে তখন দাঁড়িয়ে থাকি। এরপর তিনি তার ফোর্সসহ আমার সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় পুনরায় আমাকে উদ্দেশ্য করে একাধিকবার বলেন, এসব লোকদের কে পাঠায় এখানে! বেয়াদব ছেলে। এখানে কাজ কী আপনার? বের হয়ে যান এখান থেকে। তারা কেন্দ্র থেকে চলে যাওয়ার পর আমি বিষয়টি ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করি।’