এনআইডি জালিয়াতি করে জমি রেজিস্ট্রি, গ্রেপ্তার ৫
কুষ্টিয়ায় জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) জালিয়াতি করে একটি পরিবারের প্রায় ১০০ কোটি টাকার সম্পত্তি দখলের ষড়যন্ত্রকারীদের মধ্যে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন কুষ্টিয়া শহরের আড়ুয়াপাড়া এলাকার খন্দকার আবুল হোসেনের ছেলে মো. ওয়াদুল ওরফে মিন্টু খন্দকার (৬০), কুমারখালী উপজেলার শালঘর মধুয়া গ্রামের আতিয়ার শেখের ছেলে মো. মিলন হোসেন (৩৮), মিন্টু খন্দকারের বোন ও কুমারখালী উপজেলার লাহিনী দাসপাড়ার সাত্তার শেখের স্ত্রী ছানোয়ারা খাতুন (৫০) ও অপর বোন খন্দকার আবদুল আজিজের স্ত্রী জাহানারা খাতুন (৪৫) এবং জমির ক্রেতা মিরপুর উপজেলার কূর্শা ইউনিয়নের কাটদহচর গ্রামের মৃত সাহাজদ্দিন বিশ্বাসের ছেলে মহিবুল ইসলাম।
পুলিশ জানায়, এই চক্র কুষ্টিয়া শহরের এনএস রোডের বাসিন্দা মৃত এম এম এ হাকিমের ছেলে এম এম এ ওয়াদুদের পৈতৃক সম্পত্তি তাঁর মা মোকসুদা খাতুন, চার বোন রিজিয়া খাতুন, বাসেরা খাতুন, সেলিমা কবির ও শামীমা খাতুনের এনআইডি জালিয়াতি করে প্রতারক চক্র তাদের নামে ভুয়া এনআইডি কার্ড তৈরি করে মজমপুর মৌজার ২৫৭৫, ২৫৭৬, ২৫৮০, ২৫৮১ দাগে দশমিক ৪৪ একরের মধ্যে দশমিক ২২ একর জমি বিক্রি করে দেয়। এ ছাড়া কুষ্টিয়া মডেল থানাধীন মজমপুর, চৌড়হাস, বাহাদুরখালী মৌজার জমি জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া দলিল তৈরি করে আত্মসাতের চেষ্টা করে। বিষয়টি জানাজানি হলে ভুক্তভোগী নির্বাচন কমিশনসহ বেশ কয়েকটি দপ্তরে অভিযোগ দাখিল করেন। এই প্রতারক চক্র নিয়ে দুটি গণমাধ্যমে অনুসন্ধানী সংবাদ প্রচার হলে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন।
অনুসন্ধানকালে জানা গেছে, জমির ক্রেতা মিরপুরের কাটদহচর গ্রামের মহিবুল ইসলাম রাজা মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তাঁর মাসিক বেতন ৩৫ হাজার টাকা। সামান্য বেতনে চাকরি করে মধ্যবিত্ত পরিবারের এই ব্যক্তি কীভাবে সাত কোটি টাকা মূল্যের সম্পত্তি ৭৭ লাখ টাকায় কিনলেন, তা নিয়ে অনুসন্ধানে নামে যমুনা টিভির ইনভেস্টিগেশন থ্রি সিক্সটি ডিগ্রি টিম। ওই টিমের কাছে তিনি স্বীকার করেন, এই জমি কেনার ৭৭ লাখ টাকা তাঁকে দেন বড়বাজারের হার্ডওয়্যার ব্যবসায়ী মহিবুল ইসলাম। ধারণা করা হচ্ছে, শহরের মজমপুর গেট এলাকায় প্রায় সাত কোটি টাকা মূল্যের জমিটি নামমাত্র মূল্যে প্রতারক চক্র ৭৭ লাখ টাকায় রেজিস্ট্রি করে তা দখলে নেওয়ার চেষ্টা করে। আর এই চক্রের মূল হোতা হার্ডওয়্যার ব্যবসায়ী বেঙ্গল হার্ডওয়্যারের মালিক মহিবুল ইসলাম। এই জমি দখলে নিতে একটি প্রভাবশালী মহল বেশ কিছুদিন ধরে এই মহিবুলের পক্ষে দৌড়ঝাঁপ শুরু করে। মহিবুলের বিরুদ্ধে এ ধরনের আরো অভিযোগ পাওয়া গেছে। সামান্য কয়েক বছরে শতকোটি টাকার মালিক হওয়া মহিবুলের টাকার উৎস নিয়ে জেলাজুড়ে চলছে নানা আলোচনা।
কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এস এম তানভীর আরাফাত জানান, গত শুক্রবার যমুনা টিভির ইনভেস্টিগেশন থ্রি সিক্সটি ডিগ্রি ও চ্যানেল টোয়েন্টিফোরে এ সংক্রান্ত অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রচার হলে ভুক্তভোগীকে অভিযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। তারই ভিত্তিতে গত দুদিনে পুলিশ ব্যাপক অভিযান চালিয়ে প্রতারক চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। আর এই চক্রের মূল হোতা বেঙ্গল হার্ডওয়্যারের মালিক মহিবুল ইসলাম, সদ্য বিলুপ্ত কুষ্টিয়া শহর যুবলীগের আহ্বায়ক আশরাফুজ্জামান সুজনসহ এই প্রতারণার সঙ্গে জড়িত অন্যদেরও গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে অন্যের জমি হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে গত রোববার রাতে শহর যুবলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় কমিটি।