এখন সাওদাকে চকলেট এনে দেবে কে
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের বারান্দায় বসেছিল ছোট্ট মেয়েটি। নাম সাওদা আক্তার। পাশে তার মা লুৎফুর নাহার আর দাদা আবদুস সালাম মিয়াও বসেছিলেন।
সাওদার বাবা সালাহ উদ্দিন তখন বার্ন ইউনিটে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। কয়েক ঘণ্টা আগেই ঢাকার অদূরে কেরানীগঞ্জ উপজেলায় প্লাস্টিক কারখানায় গ্যাস বিস্ফোরণে যে ৩১ জন দগ্ধ হন, তাদের একজন সালাহ উদ্দিন।
বাবার দগ্ধ হওয়ার খবর পেয়ে মা ও দাদার সঙ্গে হাসপাতালে এসেছে সাওদা। গতকাল বুধবার রাতে সওদার সঙ্গে কথা হলে সে বলছিল, ‘আব্বু আমাকে দেখতে আসবে, চকলেট খাওয়াবে।’
কিন্তু চার বছরের ছোট্ট শিশু সাওদার আকুতিতে সাড়া না দিয়ে বাবা সালাহ উদ্দিন গভীর রাতেই পাড়ি জমালেন পরপারে। মারা যাওয়ার আগে স্ত্রী লুৎফুর নাহারকে বলে গেছেন, ‘আমার আদুরে মেয়ে যেন কখনও কষ্ট না পায়। মেয়েকে বুকে আগলে রেখ।’
ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটের নিচ তলায় রাত সাড়ে ১০টায় সাওদা এনটিভি অনলাইনকে বলেছিল, ‘আব্বুকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। কান্না লাগছে আমার।’
কিন্তু সাওদাকে বাবা সালাহ উদ্দিনের কাছে নিয়ে যেতে চাচ্ছিলেন না দাদা আবদুস সালাম মিয়া। তিনি বলছিলেন, ‘সাওদা এমনভাবে বলছে শুনেই চোখে পানি আসছে। কিন্তু সালাহ উদ্দিনের সারা শরীর ব্যান্ডেজ করা। সব পুড়ে গেছে। পোড়া চেহারা সাওদা দেখে সহ্য করতে পারবে না। তাই নিয়ে যাচ্ছি না। কিন্তু সাওদার জন্য কষ্ট হচ্ছে খুব।’
মেয়ে সাওদাকে কোলে নিয়ে শ্বশুরের পাশে বসেছিল লুৎফুর নাহার। সাওদা একবার দাদার চোখে একবার মায়ের চোখে তাকাচ্ছিল। কারণ তখন দুজনই কাঁদছিল। মায়ের মুখের দিকে তাকালে মেয়ের উদ্দেশ্য লুৎফুর নাহার বলছিলেন, ‘তোমার আব্বু সুস্থ হয়ে যাবে মা। তোমার সঙ্গে রাতে রাতে আগের মতো খেলা করবে।’ বলতে বলতেই ফুঁফিয়ে কেঁদে উঠেন লুৎফুর।
গতকাল বুধবার বিকেলে ঢাকার কেরানীগঞ্জ উপজেলার একটি প্লাস্টিক কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ওই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় গতকাল রাতে সালাহ উদ্দিন ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রাণ হারান। তিনি ওই কারখানায় বৈদ্যুতিক মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করতেন।
সালাহ উদ্দিন পরিবার নিয়ে থাকতেন তেজগাঁওয়ের তিব্বতের মোড়ে। সালাহ উদ্দিনের গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইল সদরে। ওই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ১৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন বলে ঢাকা মেডিকেল সূত্রে জানা গেছে।