‘এখন পর্যন্ত নির্বাচনে কোনো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, ‘নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড এখনো ঠিক হয়নি। অথচ এই সরকার এবং নির্বাচন কমিশন বলছে তারা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করছে। কিন্তু বাস্তবে আমরা তার কিছুই দেখছি না।’
আজ বুধবার রাজধানীর গোপীবাগে ঢাকা দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থী ইশরাক হোসেনের বাসায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন মোশাররফ।
ড. খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নির্বাচন মানেই বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকার নিয়ে তামাশা, প্রশাসনিকভাবে কেন্দ্র দখল করে সিল মারার উৎসব। কখনো কখনো দিনের ভোট আগের রাতেই সম্পন্ন করে ফেলা। হরেক রকম কারসাজি ও তামাশা পরিপূর্ণ এখন বাংলাদেশের নির্বাচন। তাই নির্বাচন নিয়ে কোনো মানুষের মধ্যে তেমন কোনো আগ্রহ নেই।’
মোশাররফ বলেন, ‘ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মনোনয়ন জমাদান এবং প্রচার প্রচারণা শুরু থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা ক্ষমতার অপব্যবহার করে অব্যাহতভাবে আচরণ বিধি লঙ্ঘন করে আমাদের নির্বাচনী প্রচারাভিযানে হামলা দলীয় নেতাকর্মীদের মামলা, গ্রেপ্তার, প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। আমরা বারবার নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করার পরও কমিশন থেকে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। বরং তারা বরাবরের মতোই নির্বিকার।’
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই নেতাকর্মীদের বিভিন্ন মামলা-হামলা, হয়রানি প্রচারে বাধা দেওয়া হচ্ছে অভিযোগ করে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘এসব ঘটনার পরও নির্বাচন কমিশন থেকে ন্যূনতম কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। গত ২৬ তারিখে গোপীবাগের আমাদের প্রচারণায় হামলা হয়েছে। এই ঘটনায় উল্টো আমাদের ২০০ নেতাকর্মীদের মামলা দেওয়া হয়েছে, তাদেরকে বাড়ি ঘর ছাড়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এটাই হলো নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড এর বাস্তবতা। একচোখা নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের ন্যক্কারজনক আচরণে এই নির্বাচনকে যদি গতানুগতিক প্রহসনের নির্বাচনে পরিণত করা হয়, এমন পরিস্থিতির দায়-দায়িত্ব সরকার এবং নির্বাচন কমিশনকেই বহন করতে হবে।’
ইভিএম প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, ‘নির্বাচনের শুরু থেকেই বলেছি যে, আমরা ইভিএমের পক্ষে নই। কারণ পৃথিবীর কোনো দেশেই ইভিএমকে গ্রহণ করে নাই। কারণ এর মাধ্যমেই ভোট কারচুপি করা সম্ভব। ভোটের ফলাফল বানচাল করা যায়। আমরা এখনো দাবি করছি ইভিএম নয় ব্যালটের মাধ্যমে নির্বাচন পরিচালনা করার ব্যবস্থা করা হোক।’
আগামীকাল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের সমাবেশ করার কথা জানিয়েছেন দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য আমির হোসেন আমু। নির্বাচনের একদিন আগে এমন সমাবেশ ও গণমিছিল নির্বাচনে আচরণবিধির পরিস্কার লঙ্ঘন উল্লেখ করে এবং এ সমাবেশ না করার আহ্বান জানিয়ে মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির দায়িত্বে যিনি আছেন তিনি গতকাল বলেছেন, আগামীকাল তাঁরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গণসমাবেশ করবেন এবং সেখান থেকে গণমিছিল নিয়ে শাপলা চত্বরে যাবেন। এখানে বলতে চাই এটা নির্বাচনের আচরণবিধি পরিষ্কার লঙ্ঘন। আপনারা এ সমাবেশ করা থেকে বিরত থাকুন।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির প্রার্থী ইশরাক হোসেন বলেন, ‘এ পর্যন্ত পুলিশ প্রশাসনের কাছ থেকে আমরা বিভিন্ন জায়গায় সহযোগিতা পেয়েছি। অনেককে দেখেছি নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে। কিন্তু ওয়ারী থানার কিছু অসাধু কর্মকর্তা দলীয় ভূমিকা পালন করছে। তারই অংশ হিসেবে এই মামলাটি করা হয়েছে। আমাদের এই থানার অধীনে তিনটি ওয়ার্ড রয়েছে। এখানে বিএনপিসহ অন্যান্য নেতাকর্মী যারা আছে তাদেরকে নেতাকর্মীশূন্য করার জন্য বিভিন্ন মামলা হামলা করছে।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, সহ-সাংগঠনিক আব্দুস সালাম আজাদ, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাসসহ বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।