একের পর এক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা, আওলাদকে হাইকোর্টে হাজিরের নির্দেশ
একের পর এক গ্রেপ্তারি পরোয়ানাপ্রাপ্ত গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কৃষি বিভাগের প্রোগ্রাম অফিসার মো. আওলাদ হোসেনকে আগামী ১৫ জানুয়ারি হাইকোর্টে হাজির হতে বা হাজির করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে কারা এসব ভুয়া পরোয়ানার সঙ্গে যুক্ত, তা খুঁজে বের করতে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আজ মঙ্গলবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন।
এ ছাড়া শেরপুরের পরোয়ানা যাচাই সাপেক্ষে আওলাদকে জামিন দিতে ওই আদালতকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। জামিনের পর শেরপুর কারাগার থেকে মুক্তি দিতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে যদি অন্য কোনো পরোয়ানা আসে, সেটার সঠিকতাও যাচাই করতে বলেছেন উচ্চ আদালত।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন। সঙ্গে ছিলেন এমাদুল হক বশির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার।
আদালতের আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করে আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, যদি ১৫ জানুয়ারির মধ্যে আওলাদ হোসেন বাইরে থাকেন, তাহলে তিনি নিজেই আসবেন। আর যদি কারাগারে থাকেন, তাহলে তাঁকে হাজির করতে হবে।
মামলার বিবরণে জানা যায়, আশুলিয়ার মির্জানগরের টাকসুর গ্রামের নূর মোহাম্মদের ছেলে মো. আওলাদ হোসেন। চাকরি করেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কৃষি বিভাগের প্রোগ্রাম অফিসার হিসেবে। ৩০ অক্টোবর হঠাৎ তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে কক্সবাজার থেকে পরোয়ানা আছে বলে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আওলাদ হোসেন একের পর এক পরোয়ানা মাথায় নিয়ে প্রথমে কক্সবাজার, পরে রাজশাহী, তারপর বাগেরহাট হয়ে বর্তমানে তিনি শেরপুরের মামলায় কারাগারে আছেন। তাঁর আইনজীবীর দাবি, এসব পরোয়ানা জাল জালিয়াতির মাধ্যমে করা। তাই তাঁকে বেআইনিভাবে আটক রাখা হয়নি, তা নিশ্চিতে হাইকোর্টে হাজির করার জন্য নির্দেশনা চেয়ে রিট করেন আওলাদ হোসেনের স্ত্রী।
আইনজীবী এমাদুল হক বশির বলেন, প্রথমে এক মামলায় গত ৩০ অক্টোবর আওলাদ হোসেনকে আশুলিয়া থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সেদিন আওলাদকে ঢাকার আদালতে হাজির করা হলে তাঁর জামিন আবেদন করা হয়। আদালত তাঁর নথিপত্র কক্সবাজারের আদালতে পাঠানোর আদেশ দেন। এ নথিপত্র কক্সবাজারের আদালতে পৌঁছার পর আওলাদের জামিন আবেদন করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৩ নভেম্বর কক্সবাজার আদালত বলেন, ওই মামলায় আওলাদ নামে কোনো আসামি নেই। গ্রেপ্তারি পরোয়ানাটি এই আদালত থেকে ইস্যু হয়নি। ওই পরোয়ানা সৃজন করা হয়েছে। তাঁকে মুক্তি দেওয়া হোক। এরপর মুক্তিনামাটা যখন ঢাকা জেলখানায় পৌঁছায়, তখন ঢাকা কারাগার বলে, আওলাদের বিরুদ্ধে রাজশাহীর একটি মামলা রয়েছে এবং তাঁকে রাজশাহী পাঠানো হবে। রাজশাহী কোর্টে যখন তাঁর জামিন চাওয়া হলো তখন রাজশাহী কোর্ট বলল, এই নামে কোনো আসামি নেই এ মামলায়। এবং আওলাদ হোসেনের নামে এই আদালত কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেনি। তখন তাঁকে মুক্তি দেওয়ার কথা বলার পর কারাগার থেকে জানানো হয়, তাঁর বিরুদ্ধে বাগেরহাটে আরো একটি মামলা আছে। সেখানে তাঁকে পাঠানো হবে এবং সেখানে তাঁকে পাঠানো হলো।
১ ডিসেম্বর বাগেরহাট আদালতে জামিন চাইলে আদালত বলেন, আওলাদ হোসেন নামে এ মামলায় কোনো আসামি নেই এবং তাঁর নামে কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা এখান থেকে জারি করা হয়নি। ওই দিন বাগেরহাটের আদালত তাঁকে মুক্তির নির্দেশ দিলেন। যখন তাঁকে মুক্তির নির্দেশ দিলেন, তখন জেলখানা বলল, তাঁর বিরুদ্ধে শেরপুরে একটা মামলার ওয়ারেন্ট আছে। বর্তমানে তিনি শেরপুর কারাগারে আছেন।
আইনজীবী বশির বলেন, ‘আওলাদ হোসেনের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা হচ্ছে, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হচ্ছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কোর্ট বলছে, উনারা এগুলো জারি করেননি। এ জন্য আওলাদ হোসেনের স্ত্রী শাহনাজ পারভীন হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেছেন। আমরা চেয়েছি তাঁকে মহামান্য হাইকোর্টে হাজির করা হোক এটা নিশ্চিতের জন্য যে, তিনি বেআইনিভাবে আটক নেই।’