এএসপি শিপন হত্যা একটি জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড : ডিসি হারুন
রাজধানীর আদাবরে হাসপাতাল কর্মচারীদের মারধরে নিহত সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আনিসুল করিম শিপনের পরিবারকে সমবেদনা জানাতে আজ বুধবার গাজীপুরে তাঁর বাড়িতে যান ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও জোনের উপকমিশনার হারুন অর রশিদ।
এ সময় উপকমিশনার (ডিসি) হারুন নিহতের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন, খোঁজ-খবর নেন এবং সান্ত্বনা দেন। পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলার সময় নিহতের স্ত্রী, বাবা ও ভাই বোনসহ স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ সময় আনিসুল করিম শিপন হত্যার সুষ্ঠু বিচার দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হস্তক্ষেপ কামনা করেন নিহতের বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফাইজুদ্দিন আহমেদ ও বড় ভাই রেজাউল করিম সবুজ। পাশাপাশি স্ত্রী সন্তানসহ নিহতের অসহায় পরিবারের পাশে থাকার জন্য অনুরোধ জানান তাঁরা।
এ সময় নিহতের বাবা ও বড় ভাই ছাড়াও বোন শামসুন্নাহার সুমন ও ডা. উম্মে সালমা এবং স্ত্রী শারমিন সুলতানাসহ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
নিহতের পরিবারের সঙ্গে কথা বলার সময় এএসপি আনিসুল করিম হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের আশ্বাস দেন ডিসি হারুন। তিনি বলেন, ‘ভিডিও ফুটেজ এবং এ পর্যন্ত তদন্তে যা পাওয়া গেছে তা থেকে প্রমাণ হয় এটি একটি জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড। এ ঘটনায় হত্যা মামলা করা হয়েছে। মামলার তদন্ত কার্যক্রম আইনি প্রক্রিয়ায় এগিয়ে চলেছে। এরই মধ্যে ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের মধ্যে ১০ জনের সাত দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। অপর জন হাসপাতালের পরিচালক ডা. নিয়াজ অসুস্থতার কারণে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তিনি সুস্থ হয়ে উঠলে তাঁর রিমান্ডের জন্য আমরা আবেদন করব।’
সিনিয়র এএসপি আনিসুল করিম শিপনকে যেভাবে একটি অন্ধকার প্রকোষ্ঠে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে, এটি কোনো চিকিৎসা ব্যবস্থা নয় উল্লেখ করে ডিসি হারুন বলেন, ‘তারা কোনো চিকিৎসা জানে না, সে ব্যাপারে তাদের কোনো জ্ঞান বা ধারণাও নেই। তাদের কোনো লাইসেন্স নেই। যারা চিকিৎসার নামে নির্যাতন করেছে, তারা কেউ চিকিৎসক নন। তারা শুধু ওয়ার্ড বয় ও স্কুল-কলেজের ছাত্র। শুধু পুলিশের বেলায় নয়, যেকোনো সাধারণ মানুষকে নির্যাতনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ পুলিশ সব সময় কাজ করছে। আমরা পুলিশের মেধাবী সদস্য শিপনের মৃত্যু হয়তো ফিরিয়ে দিতে পারব না, তবে পুলিশের প্রতিটি সদস্য নিহত শিপনের পরিবারের সঙ্গে আছে এবং থাকবে। আমরা শিপনের পরিবারকে সমবেদনা জানাচ্ছি। শুধু পুলিশ সদস্য বলে কথা নয়, তাঁর মতো যাতে আর কোনো বাবা-মায়ের বুক খালি না হয় সেজন্য দৃষ্টান্তমূলক বিচার হওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি। আমরাও চাই সিনিয়র এএসপি আনিসুল করিম শিপন হত্যার দৃষ্টান্তমূলক বিচার হোক।’
এ সময় ডিসি হারুনের সঙ্গে নিহতের ব্যাচমেট পুলিশের ৩৫ জন কর্মকর্তাসহ সহকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া কাপাসিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আমানত হোসেন খান, গাজীপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট রীনা পারভীন, স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাসান আজমল ভূঁইয়াসহ বিভিন্ন গণ্যমান্য ব্যক্তি এ সময় উপস্থিত ছিলেন। পরে ডিসি হারুন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কেন্দ্রীয় কবরস্থানে যান। সেখানে তাঁরা নিহতের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন এবং কবর জিয়ারত ও দোয়া করেন।
এদিকে সিনিয়র এএসপি আনিসুল করিম শিপনের হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও অপরাধীদের বিচারের দাবিতে আজ সকালে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে ও নিহতের বাসার পার্শ্ববর্তী হাড়িনাল সড়কে পৃথক মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। এ সময় তারা বিক্ষোভ করে। গাজীপুর শহরে নিহতের সহপাঠী, বন্ধু-বান্ধব ও এলাকাবাসী এ মানবন্ধন পালন করে।