ইকবাল এতদিন কোথায় ছিলেন, প্রশ্ন মির্জা ফখরুলের
কুমিল্লার পূজামণ্ডপের ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া যুবক ইকবাল হোসেন এতদিন কোথায় ছিলো তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শারদীয় দুর্গাপূজায় বিভিন্ন স্থানে পূজামণ্ডপে হামলার কয়েকটি ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে আজ শুক্রবার বিকেলে এক আলোচনা সভায় তিনি এই প্রশ্ন তুলেন।
সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ের মিলনায়তনে ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক বাংলাদেশ লেবার পার্টি ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এটা তো পরিষ্কার, এটা সত্য ঘটনা, সবাই এটা মেনে যে, সরকারের মদদ ছাড়া কখনো সাম্প্রদায়িক সমস্যা তৈরি হয় না। যারা সরকারে থাকে তারাই করে। আজকে যে পত্র-পত্রিকায় লেখা হচ্ছে, এই যে ইকবালের কথা কিছুক্ষণ আগে একজন বললেন। ইকবাল নামে একজন বলা যেতে পারে, একটা অপ্রকৃতিস্থ এবং মাদকসেবী তাকে ধরা হয়েছে। এটা (ইকবাল) অ্যাতদিন কোথায় ছিলো? এই বিশ্বাসটা কে করবে? কারা তাকে সেখানে নিলো?’
সারা দেশে পূজামণ্ডপে সংঘটিত হামলা ঘটনার প্রসঙ্গে সরকারকে উদ্দেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘কেন আপনারা (সরকার) ঘণ্টার পর ঘণ্টা চলে গেলো সেখানে কোনো পুলিশ পাঠালেন না বা পুলিশ গেলো না বা পুলিশ থেকেও কোনো ব্যবস্থা নিলো না। কেনো এটা হলো? রংপুরের ঘটনায় দেখলাম, একদিকে ওসি, চেয়ারম্যান সবাই মিলে আলোচনা করছে একটা আপোষ করার চেষ্টা করছে। অন্যদিকে বাইরে থেকে এসে লোকজন মাঝিপাড়া জ্বালিয়ে দিয়েছে। দুর্ভাগ্য। তাহলে কি আমরা বলব যে, তাদের ছত্রছায়ায় এই ঘটনা ঘটেছে।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘কুমিল্লার ঘটনার পর ওবায়দুল কাদের সাহেব কী করলেন? তিনি বললেন, এটা বিএনপি-জামায়াতের লোকেরা করেছে। কথায় কথায় উনি একটাই কথা বলেবেন যে, যত দোষ নন্দ ঘোষ। আপনাদের চরম ব্যর্থতা যে, আজকে এই সমাজে কোনো মানুষের নিরাপত্তা দিতে পারেন না। হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের তারা ধর্ম বিশ্বাস করেন তারা তাদের ধর্ম পালন করবেন, মুসিলম ধর্মের মানুষেরা তাদের ধর্ম পালন করবেন, বৌদ্ধরা তাদের ধর্ম পালন করবেন, খৃষ্টানরা তাদের ধর্ম পালন করবেন- এটাই তো বাংলাদেশ। আপনারা (সরকার) কী করছেন? অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশে একটা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করছেন; যা হাজার বছর ধরে চলে আসছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে শুধু মানুষের দৃষ্টিটা, মানুষের মনোযোগকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য সরকার এই বিষয়টাকে সামনে নিয়ে এসেছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার একেক সময়ে একেকটা বিভাজন তৈরি করছে। সেই বিভাজনে একেক সময় একেকটাকে সামনে নিয়ে আসে। স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তি, বিপক্ষের শক্তি, গণতন্ত্রের পক্ষে শক্তি, বিপক্ষের শক্তি। এখন তারা ধর্মীয় বিভাজনে নেমে পড়েছে কী করে মানুষের মূল যে সমস্যা সেই সমস্যা থেকে তাদেরকে বিভ্রান্ত করা যায়।
সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের সমস্যা এখন আমাদের জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। আমাদের সমস্যা হচ্ছে যে, আমরা ভোট দিতে পারি না। আমাদের সমস্যা হচ্ছে যে, আমরা কথা বলতে বলতে পারি না। আমাদের অধিকারগুলো নেই, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা ধবংস হয়ে গেছে। সেই জায়গাগুলো থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে এসে একটা সাম্প্রদায়িক সংকট, সাম্প্রদায়িক সমস্যা তৈরি করছে।
লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরানের সভাপতিত্বে ও সাংগঠনিক সম্পাদক জহুরা খাতুন জুঁই ও মেজবাউল ইসলামের সঞ্চালনায় সভায় জামায়াতে ইসলামীর শফিকুল ইসলাম মাসুদ, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, এলডিপির একাংশের শাহাদাত হোসেন সেলিম, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) আহসান হাবিব লিংকন, জাগাপার একাংশের খন্দকার লুৎফুর রহমান, মুসলিম লীগের শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, লেবার পার্টির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ফারুক রহমান, সহসভাপতি এস এম ইউসুফ আলী, রামকৃষ্ণ সাহা প্রমুখ বক্তব্য দেন।