‘আল্লাহ আমার মুখ দিয়ে যা বলাবেন, তা-ই বলব’
১৯৭১ সালের উত্তাল দিনগুলোর দীর্ঘ স্মৃতিচারণা করেছেন তৎকালে মুক্তিযুদ্ধকে কাছ থেকে দেখা ও সক্রিয়ভাবে অংশ নেওয়া দেশবরেণ্য আইনবিদ ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম। তাঁর নিজের লেখা ‘মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি’ বইতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ মার্চের ভাষণ দেওয়ার আগে কীভাবে প্রস্তুতি নিয়েছেন, তা তুলে ধরেছেন। একই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটও তুলে ধরেছেন দৃশ্যায়নের মতো।
বইটিতে ৭ মার্চ নিয়ে ব্যারিস্টার এম. আমীর-উল ইসলাম বলেন, ১৯৭১ সালের ২ মার্চ থেকে সারা দেশে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়। অসহযোগ আন্দোলনের সময় আওয়ামী লীগে হাইকমান্ড নামে একটা পাওয়ার স্ট্রাকচার গড়ে ওঠে।
হাইকমান্ড দলের একজন প্রেসিডেন্ট, তিনজন ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং দুজন জেনারেল সেক্রেটারিকে (একজন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সম্পাদক, একজন প্রাদেশিক আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক) নিয়ে গড়ে উঠেছিল। কিন্তু পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগই ছিল মূলধারা। বঙ্গবন্ধু প্রেসিডেন্ট, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, মোশতাক আহমেদ, মনসুর আলী এ তিনজন ভাইস প্রেসিডেন্ট, তাজউদ্দীন আহমদ ও কামরুজ্জামান দুজন সাধারণ সম্পাদক এই ছয়জনকে নিয়ে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড গঠিত ছিল এবং এঁরাই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতেন। এঁরাই ছিলেন কার্যত সরকার বা মন্ত্রিসভা।
৩ মার্চ ছাত্রলীগ আয়োজিত পল্টনের বিরাট জনসভায় বঙ্গবন্ধু বক্তৃতা করেন। বঙ্গবন্ধু তাঁর বক্তৃতায় দেশের মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত খাজনা, ট্যাক্স প্রদান বন্ধ রাখার আহ্বান জানান। বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতিতে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করা হয়। ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এ সংগীতকে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হিসেবে ঘোষণা করা হয়। তা ছাড়া সেদিনের সভামঞ্চে সর্বপ্রথম বাংলাদেশের মানচিত্রখচিত স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়।
৭ মার্চের ভাষণ :
বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ নিয়ে জল্পনা-কল্পনা চলতে থাকে। তিনি নিজেই বলেছেন ৭ মার্চে রেসকোর্সের জনসভায় গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি ঘোষণা করবেন। এ দিন বিভিন্ন দেশ থেকে বহু সাংবাদিক বাংলাদেশে আসেন। ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধুর ৬৭৭ নম্বর বাড়ি সংগ্রামের সূতিকাগারে পরিণত হয়। সকালে-বিকেলে দেশি-বিদেশি সাংবাদিক এ বাড়িতে এসে ভিড় জমান। তাঁরা সুযোগ পেলেই বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে বিভিন্নভাবে আন্দোলন ও ভবিষ্যৎ কর্মসূচি সম্পর্কে জানতে চান।
এ দিনকে কেন্দ্র করে পাকবাহিনীও সুযোগের প্রতীক্ষায় ছিল, অর্থাৎ সেনাবাহিনীরও একটা প্রস্তুতি ছিল ৭ মার্চ বিষয়ে। শোনা যায়, রেসকোর্সের জনসভাকে লক্ষ্য করে ঢাকা সেনানিবাসে কামান বসানো হয়। বঙ্গবন্ধু যদি এ দিন স্বাধীনতা ঘোষণা করেন, তাহলে জনসভায় গোলা বর্ষণ করা হবে। সে জন্য ছত্রী সৈন্য প্রস্তুত রাখা হয়।
৭ মার্চের ভাষণের প্রস্তুতি চলে কয়েক দিন ধরে। বঙ্গবন্ধু পশ্চিম পাকিস্তানের বিষয়, আন্তর্জাতিক বিষয়সহ বিভিন্ন বিষয়কে তাঁর ভাষণে উল্লেখ করবেন বলে বিবেচনা করছিলেন। ভাষণে বিষয়বস্তু কী হবে, এ নিয়ে অনেকেই মতামত দিয়েছিলেন। ১ থেকে ৭ মার্চে প্রতিদিন একটার পর একটা ঐতিহাসিক পরিবর্তন হতে থাকে, যেন ইতিহাসের চাকা খুব দ্রুত সামনের দিকে এগোচ্ছিল।
বেগম মুজিব বঙ্গবন্ধুকে বলেছিলেন, ‘তোমার মনে যা আসে ভাষণে তুমি তাই বলবে।’ আমি বঙ্গবন্ধুকে বলেছিলাম, আপনি আপনার বাড়ির ছাদে দাঁড়িয়ে একা একা যা ভাবেন, তা-ই আপনি বলবেন। হাজি গোলাম মোর্শেদ ছিলেন বঙ্গবন্ধুর সব কাজের সাহায্যকারী। তিনি বঙ্গবন্ধুর গাড়ি চালিয়ে তাঁকে বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যেতেন। ১ মার্চেও তিনি গাড়ি চালিয়ে বঙ্গবন্ধুকে পুরানা পল্টন অফিস থেকে পূর্বাণী হোটেলে নিয়ে আসেন। সেদিন বঙ্গবন্ধু বসেছিলেন গাড়ির সামনের আসনে। আর পেছনে ছিলাম ড. কামাল হোসেন ও আমি। ৭ মার্চে হাজি গোলাম মোর্শেদ তাঁর গাড়িতে করে ৩২ নম্বর থেকে রেসকোর্স ময়দানে নিয়ে আসেন। গাড়ি চালিয়ে আসতে আসতে পথে হাজি মোর্শেদ এক ফাঁকে জিজ্ঞেস করেন, ‘নেতা, আপনি আজ কী বলবেন।’ তিনি উত্তরে বলেন, ‘আল্লাহ আমার মুখ দিয়ে যা বলাবেন, তা-ই বলব।’
৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু অপার্থিব শক্তিতে বলীয়ান হয়ে এক অনন্যসাধারণ ও অলৌকিক বক্তৃতা দেন। অমর সেই ভাষণের একাংশে তিনি বলেন :
‘আর যদি একটি গুলি চলে, এরপর যদি আমার লোককে হত্যা করা হয় তোমাদের কাছে অনুরোধ রইল, প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল। তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে এবং জীবনের তরে রাস্তাঘাট যা যা আছে সবকিছু আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি, তোমরা বন্ধ করে দেবে। ... ... সাত কোটি মানুষকে দাবায়ে রাখতে পারবা না। আমরা যখন মরতে শিখেছি তখন কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবা না। .... রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেব। এই দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা।’
৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণের শেষ বাক্যটি ছিল, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম’। এ বাক্যের মাধ্যমে তিনি যে বার্তা দিলেন সেটা প্রতিটি বাঙালি, ছাত্র, কৃষক, জনতা, ব্যবসায়ী, শ্রমিক, কেরানি, গৃহিণী, কর্মকর্তা-কর্মচারী, পুলিশ, ইপিআর, বাঙালি সৈনিক, সেনাবাহিনীর অফিসার সবার জন্য একটা দ্ব্যর্থহীন আদেশ হিসেবে গণ্য হলো। তিনি বলেছিলেন ‘আর যদি একটি গুলি চলে, এরপর যদি আমার লোককে হত্যা করা হয় তোমাদের কাছে অনুরোধ রইল প্রত্যেকে ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল, তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে।’ কোনো ব্যক্তির বুঝতে বাকি রইল না যে তিনি স্বাধীনতার অমর বাণীটি উচ্চারণ করেছেন। কবির ভাষায়, ‘সেই থেকে স্বাধীনতা শব্দটি আমাদের হলো’। এ ভাষণে তিনি জনগণকে ‘সব রকম’ প্রস্তুতির নির্দেশ দিলেন। ফলে এটা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের অন্তরালে ছিল একটি সুচিন্তিত ও সুদূরপ্রসারী রণকৌশল।
ওরই মধ্যে লক্ষ করলাম, বঙ্গবন্ধু আত্মশক্তিতে আরো বেশি বলীয়ান হয়ে উঠেছেন, যেন কোনো অলৌকিক স্বত্তায় রূপান্তরিত হয়েছেন তিনি। সারা দেশের মানুষের প্রাণঢালা ভালোবাসা ও সমর্থন তাঁকে আত্মপ্রত্যয়ী করে তুলেছে। তখন তাঁর প্রতিটি কথাই ছিল বাঙালির মনের কথা। কেউ কেউ বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের বক্তৃতাকে আব্রাহম লিংকনের গেটিসবার্গ বক্তৃতার সাথে তুলনা করেন। কিন্তু আমি মনে করি এ বক্তৃতার কোনো তুলনা নেই। বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের আগে ও পরে অসংখ্য বক্তৃতা করেছেন। ৭ মার্চের বক্তৃতার সাথে তাঁর অন্য কোনো বক্তৃতার তুলনা হয় কি? ৭ মার্চের বক্তৃতায় উদ্বুদ্ধ হয়ে মুক্তিযোদ্ধারা মরণপণ সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। তাই আমি মনে করি, ৭ মার্চের বক্তৃতা এক অনন্য বক্তৃতা, যার সাথে পৃথিবীর অন্য কোনো বক্তৃতারই তুলনা চলে না। বাঙালি জাতি যত দিন বিশ্বের বুকে বেঁচে থাকবে তত দিনই এই বক্তৃতার প্রাসঙ্গিকতা থাকবে, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এই ভাষণের মধ্য দিয়ে ছড়িয়ে দেওয়া মূল্যবোধ দ্বারা আলোড়িত ও প্রভাবিত হবে। বাঙালি জাতির জীবনে এ বক্তৃতা এক অক্ষয়, অমর ও চির অম্লান চেতনায় সমৃদ্ধ এক স্বতঃস্ফূর্ত অভিভাষণের স্মারক হয়ে থাকবে।
৭ মার্চের বক্তৃতায় বঙ্গবন্ধু আন্দোলনের নয়া কর্মসূচি ঘোষণা করেন। দেশের সর্বত্র শহরে-বন্দরে-নগরে-গ্রামে-গঞ্জে পাকিস্তানি শোষণ, ষড়যন্ত্র, নির্যাতনের বিরুদ্ধে জনসভা, বিক্ষোভ মিছিল ও শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হতে থাকে। ১৫ মার্চ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদ ৩৫টি নির্দেশ জারি করেন। এ নির্দেশের মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের সর্বময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন। একাত্তরে শাহরিয়ার ইকবাল ঢাকায় প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ৭ মার্চের ভাষণের দিন পাকিস্তানের তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল আবদুল হামিদের কাছাকাছি বসে একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ শোনেন।
শাহরিয়ার ইকবাল লিখেছেন, ‘১৯৭১ সালে ৭ মার্চ রেসকোর্সের ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক বক্তৃতা শোনার সৌভাগ্য হয়েছিল। তখন ঢাকার ডেপুটি কমিশনার এ টি এম শামসুল হক এবং সদর এসডিও এম নুরুজ্জামান আমাকে ওই সভায় উপস্থিত থাকার জন্য দায়িত্ব দিয়েছিলেন। রেসকোর্সের ম্যানেজারের বাসা ছিল একটি টিলার ওপর। নিচে ছিল ঘোড়ার আস্তাবল। এখানে এখন পুলিশ কন্ট্রোল রুম। আমরা টিলার ওপর অবস্থান নিয়েছিলাম। রেসকোর্স ম্যানেজারের বাসা থেকে কয়েকটি কাঠের চেয়ার আমাদের বসার জন্য দেওয়া হলো। ডিসি, এসডিও ও আমি সেখানে বসলাম। নিচে বিশাল জনতার ঢল। বঙ্গবন্ধু মঞ্চ থেকে বক্তৃতা দেওয়ার জন্য উপস্থিত হবেন। কিছুক্ষণ পর দেখলাম একটি খোলা জিপে একজন সিনিয়র আর্মি অফিসার আসলেন। ড্রাইভ করছিলেন একজন আর্মি ক্যাপ্টেন। পেছনের সিটে দুজন অস্ত্রধারী আর্মি জওয়ান। এসডিও নুরুজ্জামান সাহেব জানালেন, এই ব্যক্তি হচ্ছেন পাকিস্তান আর্মির সর্বাধিনায়ক, জেনারেল হামিদ। তিনিও এসে বসলেন একটি কাঠের চেয়ারে। অদূরে আর্মির ওয়্যারলেসে জওয়ানরা কথা বলছিল পাঞ্জাবি ভাষায়। ১৯ মিনিটের বক্তৃতায় বঙ্গবন্ধু সেদিন ঘোষণা দিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। বঙ্গবন্ধু সেদিন অন্য কোনোভাবে স্বাধীনতা ঘোষণা করলে ওপর থেকে এয়ারফোর্সের বিমান গুলিবর্ষণ করে লক্ষ জনতাকে নিহত করত। তিনি জাতিকে এমনভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা শোনালেন যে জনতা ঠিকই বুঝল, কিন্তু পাকিস্তানি জেনারেল সাহেব কিছুই করতে পারলেন না। রাজনৈতিক সভার Long-hand notes নেন এস বি ও দুজন সাব-ইন্সপেক্টর। সেই নোট Attest করতে হয় একজন প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটকে। মিটিং শেষ হওয়ার সাথে সাথে দুজন এসবি সাব-ইন্সপেক্টর Attestation-এর জন্য আমার কাছে এলেন। আমি সত্যায়িত করলাম। তখন বুঝতে পারি নাই ইতিহাসের অন্য একটি ‘Magna Carta’ আমি সত্যায়ন স্বাক্ষর করলাম।’
ঢাকার ম্যাজিস্ট্রেট শাহরিয়ার ইকবাল ৭ মার্চের রেসকোর্স ময়দানে মঞ্চের খুব কাছেই যে টিলাটির বর্ণনা দিয়েছেন সেখানে সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তা ছাড়াও উপস্থিত ছিল সাধারণ পোশাকে একটি চৌকস কমান্ডো বাহিনী যা আমরাও প্রত্যক্ষ করেছি।
প্রকৃতপক্ষে ১ মার্চ থেকে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে সারা বাংলাদেশ পরিচালিত হতে থাকে। আমরা বুঝতে পারছিলাম যে, অসহযোগ আন্দোলন ধীরে ধীরে একটি সশস্ত্র যুদ্ধে পরিণত হতে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু ১ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত জনগণকে মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করেছিলেন। জনযুদ্ধের একটা যথার্থ ও যুক্তিগ্রাহ্য প্রেক্ষাপট তিনি রচনা করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক ও জনসম্পৃক্ততার বিষয়টি বঙ্গবন্ধু যথাযথভাবে উপলব্ধি করেছিলেন।
একাত্তরের উত্তাল মার্চ
ওই সময়ের উত্তাল মার্চে দেশের অবস্থা, আন্দোলনের গতিধারা প্রতিদিন নতুন নতুন মোড় নিচ্ছে, যার পূর্ণাঙ্গ বর্ণনা দেওয়া সম্ভব নয়। তবে সে সময়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরগুলোতে চোখ বুলালে নতুন প্রজন্মের পাঠকরা উপলব্ধি করবেন সেদিন সে কী এক মহাকাব্য রচনা করার জন্য সারা জাতি এক অখণ্ড চেতনার সুনির্দিষ্ট বিন্দুতে মিলিত হয়েছিল। সেই দিনগুলোর প্রতিটি ঘটনার অন্তর্নিহিত ইঙ্গিত ছিল একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যকে কেন্দ্র করে। বঙ্গবন্ধু ধাপে ধাপে জনগণকে স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত করছিলেন। একটি নির্দিষ্ট পরিমাপে বিক্রিয়ার ফলে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন একত্রিত হলে জলধারায় পরিণত হয়, আর সেই জলধারা খরস্রোতা হলে তা হিমালয়ের পাথর ভেঙে নিজস্ব পথ তৈরি করে নেয়। সেদিন বঙ্গবন্ধু প্রতিটি মানুষকে তেমনি এক ইস্পাতকঠিন অঙ্গীকারের শপথে ঐক্যবদ্ধ করে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন।