আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের উত্তরা শাখা বন্ধ ঘোষণা, শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ
ঢাকায় ফরাসি দূতাবাসের তত্ত্বাবধানে থাকা ফরাসি ভাষাশিক্ষা ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ। ঢাকায় প্রতিষ্ঠানটির ধানমণ্ডি, গুলশান ও উত্তরায় শাখা রয়েছে। গত মার্চে বাংলাদেশে প্রথম কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হওয়ার পর থেকে আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের সব শাখা গত ২৬ মার্চ থেকে সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করা হয়। কিন্তু এবার প্রতিষ্ঠানটির উত্তরা শাখা স্থায়ীভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হলো।
হঠাৎ প্রতিষ্ঠানটির এমন সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়েছেন প্রতিষ্ঠানটির আর্ট অ্যান্ড পেইন্টিং, মিউজিক ও ফ্রেঞ্চ ক্লাসের বিভিন্ন কোর্সে থাকা ছয় শতাধিক শিক্ষার্থী। বিশেষ করে, চার বছরের ফ্রেঞ্চ ভাষাশিক্ষা কোর্সের অনেক শিক্ষার্থীই এখন মাঝপথে আছেন।
এ বিষয়ে আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের ওয়েবসাইটে একটি নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯-এর কারণে আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ ঢাকার গুলশান ও ধানমণ্ডি শাখা আপাতত বন্ধ রয়েছে। এ বিষয়ে শিক্ষার্থী, তাঁদের পরিবার ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের পরবর্তী তথ্যের জন্য প্রতিষ্ঠানটির ফেসবুক পেজ ও ওয়েবসাইটে ভিজিট করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
তবে অনলাইন ক্লাসের বিষয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের ঢাকা অফিস কোভিড-১৯-এর কারণে পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।
এ ছাড়া আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের বিভিন্ন কোর্সের জন্য নিবন্ধিত শিক্ষার্থীরা এখন আর কোর্সের বাকি ক্লাসগুলো উত্তরা শাখায় সম্পন্ন করতে পারবেন না। তবে আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের গুলশান ও ধানমণ্ডি শাখায় সংশ্লিষ্ট কোর্সগুলো চালু হওয়া সাপেক্ষে উত্তরা শাখার শিক্ষার্থীরা কোর্সগুলো সম্পন্ন করতে পারবে। তাই শিক্ষার্থীদের আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের নির্ধারিত মেইলে uttara@afdhaka.org যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
ফেঞ্চ ভাষাশিক্ষা কোর্সের শিক্ষার্থী ফরিয়াহ হাসানের মা নাসরিন আরা বলেন, ‘আমার মেয়ে সাড়ে তিন বছর শেষ করেছে; এখন অনলাইনে ক্লাস চলছে।’
এদিকে উত্তরা শাখা বন্ধের খবর অভিভাবকদের আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন কয়েকজন। ফ্রেঞ্চ ভাসাশিক্ষা ক্লাসের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আহমেদ লাবণ্যর মা সাবিনা আখতার জানান, অনলাইনে ক্লাস হবে বলে জানালেও উত্তরা শাখা বন্ধ করে দেওয়া হবে-সে বিষয়ে কোনো ফোন, বার্তা বা মেইল পাননি তিনি।
হতাশা ব্যক্ত করে আরেক অভিভাবক জেসমিন জাহান মুন বলেন, ‘কোর্স কো-অর্ডিনেটরদের বলা হয়েছে, উত্তরা শাখা বন্ধের খবর অভিভাবকদের জানিয়ে দিতে। আমাদের কোনো মেইল বা ফোন দেওয়া হয়নি। ভবনের সামনে এক টুকরো সাদা কাগজে লিখে দেওয়া হয়েছে, শাখা বন্ধ। আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের মতো প্রতিষ্ঠানের এমন আচরণ দুঃখজনক। আমার বাচ্চাদের কোয়ালিটি লার্নিং দিতে চেয়েছি বলেই আলিয়ঁস ফ্রঁসেজে দিয়েছি। কিন্তু তারা এভাবে চলে গেলে কোর্সগুলো শেষ হবে কীভাবে?’
উত্তরা শাখা কেন বন্ধ করা হলো-এ প্রসঙ্গে আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ ঢাকার পরিচালক অলিভিয়ার ডিনটিঙ্গারের কাছে জানতে চাইলে তিনি ই-মেইলের মাধ্যমে জানান, কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে শাখাগুলোতে তাদের সব শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এখন অনলাইনে ক্লাস চলছে। উত্তরায় যে ভবনটি ভাড়া নিয়ে কার্যক্রম চালানো হচ্ছিল, ভবন মালিক তা ডেভেলপারের কাছে দিয়ে দেওয়ায় এবং যৌক্তিক ভাড়ায় নতুন বাড়ি না পাওয়ায় উত্তরা শাখার কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন তারা।
অলিভিয়ার ডিনটিঙ্গার আরো জানান, যেসব শিক্ষার্থীর কোর্স মাঝপথে রয়েছে, তারা অনলাইন ক্লাস অথবা অন্য দুই শাখায় ক্লাস করতে পারবেন। তবে অভিভাবকদের শাখা বন্ধের কোনো তথ্য জানানো হয়নি এমন অভিযোগ অস্বীকার করেন অলিভিয়ার।
জানা গেছে, উত্তরা ৬ নম্বর সেক্টরের একটি ভাড়া বাড়িতে ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলছিল আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ উত্তরা শাখার কার্যক্রম। ভবনটি ডেভেলপারকে দেওয়ার জন্য বাড়ির মালিক প্রায় দেড় বছর আগে থেকেই বাড়ি ছাড়ার জন্য বলেছিলেন। দুই পক্ষের সমঝোতার ভিত্তিতে বাড়তি সময় নেয় আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ।
এ সময়ের মধ্যে নতুন বাড়ি ভাড়া নেওয়া কোনো সমস্যাই ছিল না বলে মন্তব্য করেন আরেক অভিভাবক ইমরান আহমেদ। তিনি বলেন, ‘আমরা অনেকেই নতুন বাড়ির প্রস্তাব দিয়েছি। আমাদের একজন অভিভাবক তাঁর নিজেরই একটি বাড়ি নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু তারা (আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ) কোনো রেসপন্স করেনি। তারা বলছে, তারা একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। কিন্তু ভবন ভাড়া বেশি পড়ছে- এমন অজুহাতে প্রতিষ্ঠানই বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত খুবই দুঃখজনক।’
এ প্রসঙ্গে আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ ঢাকার নির্বাহী কমিটির প্রেসিডেন্ট আবদুল মজিদ চৌধুরী বলেন, ‘এমন প্রতিষ্ঠানের জন্য কিছুটা বিশেষায়িত ভবন দরকার, যেখানে আমরা লাইব্রেরি করতে পারি, ক্যাফে করতে পারি। এ ছাড়া খোলা জায়গাও রাখতে হয়।’
অভিভাবকদের শঙ্কার কোনো কারণ নেই জানিয়ে আবদুল মজিদ বলেন বলেন, ‘প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের গুলশান বা ধানমণ্ডি শাখায় স্থানান্তর করা যাবে। কেউ চাইলে কোর্স ফি ফেরত নিতে পারবেন।’
এদিকে, উত্তরা শাখা চালু রাখার জন্য হস্তক্ষেপ কামনা করে আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ ঢাকার এক্সিকিউটিভ কমিটির অনারারি প্রেসিডেন্ট ও বাংলাদেশে নিযুক্ত ফরাসি রাষ্ট্রদূত জ্যাঁ মেরিনকে ই-মেইলের মাধ্যমে চিঠি দিয়েছেন অভিভাবকরা।