আমি জেনে শুনেই মাঠে নেমেছি : তাবিথ আউয়াল
তাবিথ আউয়াল। তিনি বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী। ২০১৫ সালে ঢাকা উত্তর সিটির প্রথম নির্বাচনেও তিনি বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী ছিলেন।
১৯৭৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন তাবিথ আউয়াল। ১৯৯৭ সালে ঢাকা আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল স্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করেন তিনি। তারপর পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটিতে ব্যবসায় প্রশাসন ও তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে পড়াশোনা করেন তিনি। দেশে ফিরে পৈতৃক ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হন। তাঁর বাবা আবদুল আউয়াল মিন্টু বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এবং বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান।
২০১৫ সালে প্রথম মেয়র পদে প্রার্থী হয়ে আলোচনায় আসেন তাবিথ আউয়াল। তবে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আনিসুল হকের কাছে পরাজিত হন। তবে প্রচার ও পরিকল্পনায় তরুণ হিসেবে সেবারই সাড়া ফেলেছিলেন তাবিথ আউয়াল।
আসন্ন নির্বাচন ও নগর নিয়ে নিজের পরিকল্পনার কথা এনটিভি অনলাইনকে জানিয়েছেন তাবিথ আউয়াল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এনটিভি অনলাইনের সিনিয়র করেসপনডেন্ট জাকের হোসেন।
এনটিভি অনলাইন : আগামী ৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে আপনি কতটুকু আশাবাদী?
তাবিথ আওয়াল : এনটিভি অনলাইনের সব পাঠককে জানাতে চাই আমি আসন্ন নির্বাচনে যোগদানের পর থেকে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি, প্রস্তুতিও নিচ্ছি। কিন্তু আশঙ্কার জায়গা থেকে সরে আসতে পারছি না। আমরা এখনো দেখছি; একটি পরিবেশ তৈরির দরকার ছিল—তা করা হয়নি। অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য যে বক্তব্য দরকার ছিল সে ধরনের কোনো বক্তব্যই শুনছি না। এ নিয়ে দায়িত্বশীল কোনো আচরণ বা বক্তব্য পাচ্ছি না। ভোটাররা নিজ নিজ কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারবেন সে বিষয়ে এখনো কোনো কিছুই স্পষ্ট করা হয়নি। এ কারণে শঙ্কা রয়ে গেছে।
এনটিভি অনলাইন : নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন তুলে ২০১৫ সালের সিটি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন। এবারের পরিস্থিতি নিয়ে যদি কিছু বলেন…..।
তাবিথ আউয়াল : আমি গতবার ভোটের দিনই সরে যাই; ফলাফল চূড়ান্ত হওয়ার আগেই। গত নির্বাচনে দেখেছিলাম গত নির্বাচন প্রক্রিয়াতে অনেক অনিয়ম ছিল। অনেক প্রার্থী ব্যাপক সুবিধা পেয়েছিল আবার অনেক প্রার্থী কোনো সুবিধা পায়নি। এরপরও জেনেশুনে, আমলে না নিয়ে আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে নির্বাচন প্রক্রিয়াটা শেষ করেছিলাম। কিন্তু একটি মহল পরিবেশকে অস্থিতিশীল করে তুলেছিল। মামলা-হামলা দিয়ে একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করা হয়। পরিস্থিতি খুন খারাবির দিকে চলে যেতে পারত। ওই সময় আমি প্রার্থী হিসেবে থাকায় সকল জবাবদিহিতা আমাকেই করতে হতো।
ভোটকেন্দ্র থেকে ঘাড় ধরে পোলিং এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছিল। দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকরা এটা দেখেছেন। এ সংক্রান্ত অনেক সংবাদও প্রকাশিত হয়েছিল। এ পরিস্থিতিতে নির্বাচন বর্জন না করা ছাড়া আর কোনো উপায় আমাদের ছিল না।
এবার প্রেক্ষাপট ভিন্ন। কেননা এবারে আমরা জেনে শুনেই যাচ্ছি। জানি নির্বাচন সুস্থ হবে না। আমরা জেনে শুনেই যাচ্ছি যে, হয়তো হামলার শিকার হব। এবার জেনে শুনেই যাচ্ছি যে, হয়তো পুলিশ মামলা হামলা দিয়ে হয়রানিমূলক আচরণ করবে। জেনেশুনে পরিস্থিতিতে যাওয়ার অর্থ ফলাফল ভিন্ন হবে। এবার আমরা পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়া শেষ করেই গণনা শেষ হওয়া পর্যন্ত মাঠে থাকব। তারপরও আমরা আশাবাদী ভোটের মাঠে বিজয়ী হয়েই ঘরে ফিরব।
এনটিভি অনলাইন : এবার ভোট হবে ইভিএমে (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন)। এ নিয়ে আপনার মতামত কী?
তাবিথ আউয়াল : প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন,সংলাপ করে সব দল যদি আলোচনা করে ইভিএমের বিরোধিতা করে তাহলে ইভিএম পদ্ধতি পরিবর্তন করবেন। এ বক্তব্যর ওপর আমি আশা রাখছি না। তবে একটি জিনিস পরিষ্কার। তা হলো প্রধান নির্বাচন কমিশনের সাথে বসব, কথা বলব, আমাদের দাবিগুলো জানাব। তিনি যদি সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করে সমাধানের একটি পথ বের করেন তাহলে আমরা আশাবাদী। সুষ্ঠু নির্বাচনের দিকে যাওয়ার একটি জায়গা রয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি উনারা শেষ সময়ে এসে জাতিকে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিয়ে যাবেন।
এনটিভি অনলাইন : আপনি একজন মেয়র পদপ্রার্থী হিসেবে নগরীকে কীভাবে দেখতে চান?
তাবিথ আউয়াল : এ মুহূর্তে বাসযোগ্য দেখতে চাই। আমরা যেন বেঁচে থাকতে পারি। আমরা জেনেশুনে নিজেদের প্রাণ বিসর্জন দিচ্ছি। সেটা আপনি দেখতে পাবেন; পরিবেশ দূষণের ক্ষেত্রে, ডেঙ্গু, দূষিত পানি, শব্দ দূষণ,অগ্নিকাণ্ড সব ক্ষেত্রে নিজেরাই নিজেদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছি সব বাসিন্দাকে। এ জন্য আমাদের নগরীকে বাসযোগ্য করাই প্রধান কাজ। এ জন্য দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন।
এনটিভি অনলাইন : আপনার দৃষ্টিতে রাজধানী ঢাকার পাঁচটি সমস্যা কী?
তাবিথ আউয়াল : আমি বলব পাঁচটি সমস্যা হলো-বর্জ্য, মশা, যানজট, জলাবদ্ধতা, পরিবেশ দূষণ।
এনটিভি অনলাইন : আপনি একজন তরুণ মেয়র পদপ্রার্থী। আগামী প্রজন্ম তরুণদের নিয়ে আপনার ভাবনা কী?
তাবিথ আউয়াল : আমি প্রথমেই বিশ্বাস করি; তরুণরা এ নির্বাচনকে একটি আন্দোলন হিসেবে গ্রহণ করবে। এটি হবে তরুণদের ভোটের অধিকার রক্ষার আন্দোলন। তরুণরা নিশ্চিত হয়ে নির্ভয়ে নির্বিঘ্নে ভোটের মাঠে থাকবে। আগামী ৩০ জানুয়ারি ভোট দেওয়ার পাশাপাশি ভোটের ফলাফল পর্যন্ত মাঠে থাকার আহ্বান জানাচ্ছি তরুণদের। সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে ফলাফল যাই হোক, তরুণদের কিন্তু দায়িত্ব পড়ে যায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে সিটি কপোরেশনকে সহযোগিতা করা। একই সঙ্গে আমি এবং অন্য প্রতিদ্বন্দ্বিরা যেসব প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি তারা যেন এসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে আমাদের জবাবদিহিতার মধ্যে রাখে।
এনটিভি অনলাইন : আপনি একজন তরুণ উদ্যোক্তা এবং ব্যবসায়ী। বর্তমানে তরুণ উদ্যোক্তাদের নিয়ে আপনার কোনো ভাবনা আছে?
তাবিথ আউয়াল : আমি বলব আমাদের সকল সমাজের মানুষ আইটি (তথ্যপ্রযুক্তি) কেন্দ্রিক হয়ে গেছে। যদি শহরের মোবাইল ফোনের ব্যবহার দেখেন, তাহলে এটা একটা বড় আইটি। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মানুষ এখন কথা বলছে, বার্তা আদান-প্রদান করছে আবার কিছু ব্যবসাও করছে, বিনিয়োগও করছে। স্বাস্থ্য ও শিক্ষার ক্ষেত্রেও সুবিধা দিচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তি। তথ্যপ্রযুক্তি এখন পুরো সমাজের, নবীন-প্রবীণ সবার, সব বয়সের।
নতুন উদ্যোক্তাদের অনুরোধ করছি ওই তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে যেন তাঁরা কাজ শুরু করেন। ফলাফল পাবেনই। সেটাকে কেন্দ্র করে যেন সমাজের কিছু উন্নয়ন হয়।
এনটিভি অনলাইন : এ মুহূর্তে ঢাকা বসবাসের সবচেয়ে বড় বাধা বায়ু দূষণ। এ ক্ষেত্রে আপনার ভাবনা কী?
তাবিথ আউয়াল : বায়ু দূষণের ক্ষেত্রে বিশ্বের শীর্ষ শহরগুলোর মধ্যে ঢাকাও আছে। এখন তাই দেখাচ্ছে। মনে করছি আমরা হুমকির মুখে আছি। বিষয়টি কিন্তু এটা নয়। বায়ু দূষণের ক্ষেত্রে ঢাকা কিন্তু হেজার্ড ডেভেলের অনেক ওপরে দীর্ঘদিন ধরে ছিল। আমরা কেউ কিন্তু এটা নিয়ে ওভাবে কোনো ভূমিকা রাখি নাই। বায়ু দূষণের সমস্যার সমাধান দ্রুতই করা যায়। এ প্রসঙ্গে কিন্তু হাইকোর্টের নির্দেশনাও আছে। ঢাকার বায়ু দূষণের ৭০ ভাগ কারণ হলো আশেপাশের ইটভাটাগুলো। নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার আনতে হবে। যেখানে ইটও তৈরি হবে, পরিবেশও দূষিত হবে না।
শব্দ দূষণের কিন্তু পরিষ্কার আইন আছে। আইনের বাস্তবায়ন প্রয়োজন। কেউ আইন ভাঙলে পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা যদি আসলে আন্তরিক হই তাহলে শব্দ দূষণের সমাধানও করা যায়।
পানি যে দূষিত তা স্বীকার করা হয় না। ওয়াসার এমডি বারবার বলেন পানি দূষিত নয়। কিন্তু পানির কারণে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে। এলার্জি বেড়ে যাচ্ছে, নানা সমস্যা হচ্ছে। অস্বীকার করার জায়গা থেকে যদি আমরা সরে আসি তাহলে আমরা পানি দূষণও কমাতে পারব। পানি যদি পরিষ্কার রাখি,পানি যদি কোথাও জমে না থাকে তাহলে লার্ভা হবে না। লার্ভা থেকে মশা হবে না। তাহলে ডেঙ্গুও মোকাবিলা করা যাবে।
এনটিভি অনলাইন : পৃথিবীর বিভিন্ন শহরে নদী ব্যবহার করা হচ্ছে বিভিন্নভাবে, আমরা নদীকে মেরে ফেলছি। আপনার ভূমিকা কী হবে?
তাবিথ আউয়াল : একটা অভিযোগ আমাদের কাছে আসে। আগামী দিনের মেয়র যারা হতে চাচ্ছেন তাদের সাংবিধানিকভাবে যে ক্ষমতা দেওয়া আছে,তারা ক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকেন। নদী শাসন বলেন বা নদীর পাড় দখলে গেছে তা বেদখলে করার দায়িত্ব আসলে কিন্তু বিআইডাব্লিওটিএর (অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ) ওপরে বর্তায়।
এই ব্যাপারে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা দিয়েছে নদীগুলোকে বেদখল করার জন্য। মেয়র অফিস থেকে বিআইডাব্লিওটিএকে আমরা যত ধরনের সহযোগিতা করার আমরা করব; যেন সত্যিকার অর্থে নদীগুলোকে আমরা দখলমুক্ত করতে পারি এবং তারপর থেকে আবারও যেন সেটা দখল না হয়ে যায়।
এই প্রসঙ্গে আরো অনেক পদক্ষেপ সিটি করপোরেশন নিতে পারে, যেমন নদীর পাড়ে কিছু বিনোদনের ব্যবস্থা তৈরি করে দিতে পারে, হাঁটার রাস্তা করে দিতে পারে।
এনটিভি অনলাইন : ঢাকা উত্তরের বাসিন্দাদের উদ্দেশে কী বলবেন?
তাবিথ আউয়াল : আমি বিনয়ের সঙ্গে অনুরোধ করব আপনারা নির্বাচনের দিন কেন্দ্রে এসে ভোটটা দিবেন। পাশাপাশি যতটুকু সম্ভব অন্যদেরও উৎসাহিত করবেন ভোট দেওয়ার জন্য। কারণ ভোট আপনার অধিকার। আপনাদের অধিকার রক্ষা করার দায়িত্ব আপনাদেরই। আপনাদের সহযোগিতা করার দায়িত্ব আমাদের। আপনারা ৩০ জানুয়ারি কেন্দ্রে এসে ভোট দিবেন।
এনটিভি অনলাইন : এনটিভি অনলাইনের পক্ষ থেকে আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
তাবিথ আউয়াল : আপনার মাধ্যমে এনটিভি অনলাইন এবং পাঠকদের অনেক ধন্যবাদ। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।