‘আমার বাড়ি আমার খামার’ প্রকল্পের কোটি টাকা লোপাট
২০১৪ সালে ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ সমিতির সদস্য হয়েছিলেন সাতক্ষীরা সদর উপজেলার তলুইগাছা গ্রামের আকলিমা খাতুন। সেই থেকে প্রতি মাসে সঞ্চয়ের টাকা জমা দিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। তবে এখন পর্যন্ত জমা দেওয়ার বই হাতে পাননি। অথচ অডিট অফিসার তাঁকে বলে গেছেন তাঁর নামে ১০ হাজার টাকা ঋণ তোলা হয়েছে।
একই গ্রামের কামরুজ্জামান অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার বাবা, ভাই ও বোনের নামে ঋণ তুলে আত্মসাত করেছেন সমিতির উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তারা।’
বৃদ্ধ নাসের সরদার বললেন, ‘আমি কখনও অফিসে যাইনি, কাগজে সইও করিনি। অথচ আমার নামে ঋণ নেওয়া হয়েছে ২০ হাজার টাকা। আমার বাড়িতে সদস্য বই রয়েছে। কিভাবে এই সঞ্চয়ের টাকা তোলা হলো? আর কে তুললো এই টাকা?’
সাতক্ষীরার তলুইগাছা গ্রামের অনেক মানুষের এমন অভিযোগ। ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের বর্তমান নাম ‘আমার বাড়ি আমার খামার’।
বর্তমানে সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ‘আমার বাড়ি আমার খামার’ সমিতিতে ১২ হাজার সদস্য রয়েছে। তার মধ্যে কমপক্ষে এক হাজার সদস্যের নামে টাকা তুলে লোপাট করা হয়েছে। এ নিয়ে কর্তৃপক্ষের এক অডিটে সদস্যদের এক কোটি ২৭ লাখ টাকা খোয়া যাওয়ার বিষয়টি ধরা পড়ে। তবে এর মধ্যে ১৯ লাখ টাকা বর্তমান দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা উদ্ধার করতে পেরেছেন বলে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শাখা ব্যবস্থাপক ও উপজেলা সমন্বয়কারী মেহেদী হাসান, জুনিয়র অফিসার আব্দুল মুকিব, সুপারভাইজার রফিকুল ইসলাম ও শরিফুল ইসলামসহ কয়েকজন এই আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত। এরই মধ্যে তাদের সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। এমনকি তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
বরখাস্ত হওয়া শাখা ব্যবস্থাপক মেহেদী হাসানের দাবি, তিনি কোনো টাকা আত্মসাত করেননি। অপরদিকে জুনিয়র অফিসার আব্দুল মুকিব ৫৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন স্বীকার করে বলেন, ‘এর মধ্যে বেশ কিছু টাকা আমি ফেরত দিয়েছি।’
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ‘আমার বাড়ি আমার খামার’ প্রকল্পের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ সরদার বলেন, ‘বৈকারি, কুশখালি ও বাঁশদহা ইউনিয়নে এ ধরনের ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়েছে। খোয়া যাওয়া এক কোটি ২৭ লাখ টাকার মধ্যে উদ্ধার করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
সদস্যদের কাগজপত্র জালিয়াতি করে ব্যাংক থেকে অসাধু কর্মকর্তারা ঋণ নিয়ে আত্মসাত করেছে। আর এই একই সমস্যার মুখে পড়েছেন বাঁশদহা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমার ও আমার মায়ের নামে কে বা কারা এভাবে টাকা তুলে খেয়ে ফেলেছে।’
সমিতির সদস্যরা এখন হতাশ। তারা জানিয়েছে, আমরা ঋণ নেইনি, শুধু টাকা জমা দিয়েছি। কাগজপত্রও আমাদের দেওয়া হয়নি। তারা অবিলম্বে বিষয়টি তদন্ত করে জমাকৃত টাকা ফেরত এবং আত্মসাতকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে।