বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘আমরা একটি দুঃসময়, একটি অন্ধকার সময় অতিক্রম করছি। ঘর থেকে বের হলে কেন যেন পরিচিত একটি দেশে বাস করছি বলে মনে হয় না। একটা স্বাভাবিক পরিবেশের মধ্যে আমরা আছি বলে মনে হয় না।’

দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় আজ সোমবার নারী ও শিশু অধিকার ফোরাম আয়োজিত বিএনপির চেয়ারপারসন  খালেদা জিয়াসহ সব অসুস্থ নেতাকর্মীদের রোগমুক্তি কামনায় দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রুহুল কবির রিজভী এ মন্তব্য করেন।

রিজভী বলেন, ‘গাড়িতে যখন আসি, ডান দিকে, বাঁ-দিকে সবসময় উঁকি দেই। মনের মধ্যে আতঙ্ক থাকে, গাড়ি থামিয়ে গাড়ি থেকে বের করে ফেলবে কি না, বা গাড়ির ওপর আক্রমণ করবে কি না, অথবা সিএনজিতে আছি, সিএনজি থামিয়ে আমাকে অদৃশ্য করে দেবে কি না। এই আতঙ্ক, এই ভয় আমাদের প্রতিনিয়ত গ্রাস করে চলে।’

রুহুল কবির রিজভী আরও বলেন, ‘করোনার টিকার ব্যাপারে আমরা এমনি এমনি বিরোধিতা করিনি। আন্তর্জাতিক নিউজ এজেন্সি রয়টার্স বলেছে বাংলাদেশে ভারত যে টিকা পাঠাচ্ছে, সেটা ট্রায়াল করার জন্য পাঠাচ্ছে। অর্থাৎ, আমরা গবেষণাগারে তেলাপোকা, ব্যাঙ কেটে এর ইন্টারনাল এনাটমি আমরা  জানতাম। ঠিক তেমনি আমাদের ল্যাবরেটরির ব্যাঙ হিসেবে গণ্য করছে ভারতের নীতিনির্ধারকেরা। আর এ কারণেই তারা এখানে পরীক্ষামূলকভাবে পাঠিয়েছে। দেখি কত লোক মারা যায়। তারপর আমরা আমাদেরটা দেব। আমি যতটুকু জানি অন্য দু-একটি দেশে যেখানে দিয়েছে, সেখানে কিন্তু বন্ধ করে দিয়েছে। নতজানু সরকার থাকলে, আত্মসমর্পনকারী সরকার থাকলে তারা এগুলোর পরোয়া করে না। তারা প্রহসন করছে।’

রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নাকি ভ্যাকসিন নিয়েছেন। কীভাবে নিয়েছেন, সেটা কিন্তু তিনি জানাননি। গতকাল... গত পরশুদিন ওই যে গাজীপুরের মন্ত্রী আছে না... আ ক ম মোজাম্মেল হক, তাঁর ওখানে সিরিঞ্জ পুশ করার মতো কোনো ছবি নেই। কারণ ওরা নিজেরাও ভীত-সন্ত্রস্ত। ওরা নিজেরাও জানে এটা দুই নম্বর। এই টিকার কার্যকারিতা নাই। এদের মতো নাটক আর কেউ করতে পারবে না। বড় বড় অভিনেতা রাজ্জাক, অমিতাভ বচ্চন এরা সব ফেল আওয়ামী লীগের কাছে।’

রিজভী আরও বলেন, ‘আমাকে অনেক সাংবাদিক জিজ্ঞাসা করেছেন, আপনি টিকা নেবেন কি না? আমি বলেছি, ন্যায় সঙ্গতভাবে আমি যে টিকার বিরোধিতা করেছি, বাঁচি আর মরি ওই টিকা আমার শরীরে প্রবেশ করতে দেব না। আমি আমার কথা রেখেছি।’

বিএনপির মুখপাত্র বলেন, ‘ওবায়দুল কাদের সাহেব বলছেন, বিএনপি আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে ব্যক্তিগত আক্রমণ করছে। ব্যক্তিগত আক্রমণ তো বিএনপি করছে না ওবায়দুল কাদের সাহেব, আপনি কী বলেন? ঘরের মধ্যে থেকে আপনার মানসিক সমস্যা হয়েছে। কারণ আপনাদের অধিকাংশেরই মানসিক সমস্যা। আপনার ব্যক্তিগত সমস্যা আপনার আত্মীয়-স্বজনেরাই তুলে ধরছে। আমাদের আর বলার কী দরকার।’

রিজভী আরও বলেন, ‘ওই যে ছেলেটি ঢাকা দক্ষিণের মেয়র হয়েছে ভোট ছাড়া, তার কথাবার্তা দেখুন। একটি ব্যারিস্টার ছেলে, তার কথা-বার্তা তো একটু মার্জিত হবে, পরিশীলিত হবে। কেমন যেন ধর রে, মার রে, কেটে ফেলব—এ ধরনের তার কথাবার্তা। তার ফলাফল-বহিঃপ্রকাশ দেখুন। তিনি গোপালগঞ্জ যাবেন, সেখানে ফেরিতে দুজন লোক পুলিশের অনুমতিতে উঠেছে। তাঁর সিকিউরিটি যাঁরা ছিলেন, তাঁরা তাঁদের মেরে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে। তাপস আপনি কে? আপনার ওই ফেরিতে একজন সাধারণ মানুষ যেতে পারবে না, আর গেলে পরে হবে রক্তাক্ত? আপনি মেয়র নামের অযোগ্য। আপনি বিনা ভোটের মেয়র বলেই আপনার মধ্যে মানবতা নেই। আপনার মধ্যে ন্যূন্তম কোনো সংস্কৃতি নেই। যারা জনগণের ভোটে মেয়র হয় না, তারা হয় বেপরোয়া, জমিদার। এই দেশটা কি আপনাদের জমিদারি?  ফেরি কি আপনাদের ব্যক্তিগত মালামাল যে আপনি ছাড়া আর কেউ উঠতে পারবে না? আর উঠলে পরে পরিণাম হবে রক্তাক্ত হওয়া। আজ গুন্ডারা হয় মেয়র, মাফিয়ারা হয় মন্ত্রী।’

আয়োজক সংগঠনের সদস্য ও বিএনপির স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপুর সভাপতিত্বে এবং সংগঠনের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট নিপুন রায় চৌধুরীর সঞ্চালনায় দোয়া মাহফিলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ বক্তব্য দেন।