আপিল বিভাগে প্রবেশে বাধা, দুপক্ষে ৩০ জন করে প্রবেশের অনুমতি
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন শুনানিতে আপিল বিভাগের তালিকাভুক্ত আইনজীবী ছাড়া হাইকোর্টের কোনো আইনজীবীকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। এতে করে বিএনপির জ্যেষ্ঠ কয়েকজন আইনজীবী ছাড়া জুনিয়র বা হাইকোর্টের আইনজীবীদের প্রবেশে বাধা দেওয়া হচ্ছে। তবে আপিল বিভাগের তালিকাভুক্তকরণ না থাকলেও রাষ্ট্রপক্ষে সহকারী অ্যাটর্নি ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলরা প্রবেশ করেছেন।
এ বিষয়ে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সদস্য আসিফা আশরাফী পাপিয়া এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ষড়যন্ত্র করে আওয়ামী আইনজীবীদের প্রবেশ করানো হচ্ছে। আমাদের কাউকে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। অথচ শতাধিক আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা প্রবেশ করেছেন।’
পাপিয়া বলেন, ‘আমরা আইনজীবীরা আপিল বিভাগের সামনে অবস্থান নিয়েছি।’
এদিকে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের সঙ্গে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বাকবিতণ্ডা চলছে।
আদালতে খালেদা জিয়ার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন প্রধান বিচারপতিকে বিষয়টি উপস্থাপন করে বলেন, ‘আমাদের আইনজীবীদের প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। অথচ সরকারি সব আইনজীবী প্রবেশ করেছেন।’
এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আজকে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যেসব আইনজীবীর আপিল বিভাগে তালিকাভুক্ত নেই, তাঁদের প্রবেশ করতে অনুমতি দেব না।’
এরপর খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘আমি বৃদ্ধ বয়সে কি মামলার নথি কাঁধে করে হাঁটব? আমার জুনিয়র না এলে আমি শুনানি কীভাবে করব? এই যদি হয়, তাহলে আমরা মামলার শুনানি করব না।’
এ সময় খন্দকার মাহবুব হোসেন আপিল বিভাগে প্রবেশের বিষয়ে একটি রায় উপস্থাপন করেন।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের বেঞ্চ রাষ্ট্রপক্ষে ও খালেদা জিয়ার পক্ষে মোট ৩০ জন করে ৬০ জনকে আপিল বিভাগে প্রবেশের অনুমতি দেন। এ ছাড়া বাকি সবাইকে আদালত কক্ষ থেকে বের হয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন তিনি। এ জন্য পাঁচ মিনিট সময় দেন প্রধান বিচারপতি। এরপর এজলাস থেকে নেমে যান পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ।
এদিকে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিনের আপিল শুনানিকে কেন্দ্র করে আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে হাইকোর্ট এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
আদালতের স্টাফ ও আইনজীবীদের পরিচয়পত্র দেখে তল্লাশি করে ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছে পুলিশ। হাইকোর্টের তিনটি ফটকে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। আদালতের ভেতরে আপিল বিভাগে প্রবেশের আগে দুটি গেটে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কঠোর অবস্থানে আছেন।
এদিকে, তিন গেটে পুলিশের তল্লাশির কারণে সাধারণ মানুষকে পড়তে হচ্ছে বিড়ম্বনায়। এমনকি ভুল করে বাসায় কার্ড রেখে আসা কোর্টের প্রবেশপত্রধারীদেরও পড়তে হচ্ছে ঝামেলায়। তাঁদেরও ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। কোর্টে মামলা-সংক্রান্ত কাজে আসা মানুষকেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানাচ্ছেন দুপুর ১২টার পর কোর্টের ভেতরে ঢুকতে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) সাজ্জাদুর রহমান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘খালেদা জিয়ার জামিন শুনানিকে কেন্দ্র করে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কোর্ট প্রাঙ্গণে। বহিরাগতরা এসে যাতে ঝামেলা করতে না পারে, সে জন্য এই নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।’
সাজ্জাদুর রহমান বলেন, ‘সবার পরিচয়পত্র দেখে দেখে কোর্টের ভেতরে ঢোকানো হচ্ছে। দুপুর থেকে সবাইকে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে। অনেক সাধারণ মানুষ হয়তো মামলা-সংক্রান্ত কাজে এসে হয়রানির শিকার হচ্ছে। কিন্তু আপাতত পরিস্থিতির কারণে কিছু করার নেই।’
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে জামিন দেওয়া হবে কি না, সে বিষয়ে আদেশের জন্য আজ দিন নির্ধারণ করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। শুনানির আগে আপিল বিভাগ খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য প্রতিবেদন দেখবেন। সে জন্য তাঁর স্বাস্থ্য সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) কর্তৃপক্ষ তাঁর স্বাস্থ্য প্রতিবেদন আদালতে পৌঁছে দিয়েছে।
তবে এর আগে খালেদা জিয়ার জামিন শুনানির জন্য আপিল বিভাগ নির্ধারিত রেখেছিল ৫ ডিসেম্বর। কিন্তু তাঁর স্বাস্থ্য প্রতিবেদন আদালতে না আসায় ১২ ডিসেম্বর পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ।