‘আগে স্টপেজে পৌঁছালে বেশি যাত্রী, দুই বাসের রেষারেষিতে নিহত হকার রাকিব’
আগে আগে স্ট্যান্ডে পৌঁছাতে হবে। তাহলে যাত্রী বেশি পাওয়া যাবে, আয় বেশি হবে—এমন মনোভাবে আজমেরী পরিবহণের দুটি বাস গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর মগবাজারে তড়িঘড়ি চালানো শুরু করে। এমন সময় দুই বাসের মাঝে পড়ে পিষ্ট হয় রাকিব নামের এক হকার কিশোর। পরে রাকিব নিহত হয়।
এ ঘটনা ঘটে গত বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টায়। ওই দুই বাসের চালককে গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর পল্টন ও মুন্সীগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। গ্রেপ্তারের পর তাঁরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে দ্রুত স্ট্যান্ডে পৌঁছানোর জন্য দ্রুত বাস চালাচ্ছিলেন বলে জানিয়েছেন।
গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের বরাত দিয়ে আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ তথ্য জানিয়েছেন।
গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন মনির হোসেন (২৭) এবং ইমরান হোসেন (৩৪)।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, রাজধানীর মগবাজার মোড়ে আজমেরী পরিবহণের দুই বাসের মাঝে পড়ে রাকিব নামের এক কিশোর। রাকিব রাস্তায় মাস্ক ও চিপস বিক্রি করত। মগবাজার মোড়ের সিগন্যাল ছেড়ে দিলে দ্রুত বাস দুটি এগিয়ে যাচ্ছিল। তাদের উদ্দেশ্য ছিল, পরবর্তী স্টপেজে যে আগে পৌঁছাতে পারবে, সে বাসের জন্য অপেক্ষারত বেশি যাত্রী পাবে। এ অবস্থায় এক বাস অপর বাসকে ওভারটেক করার সময় দুই গাড়ির মাঝখানে চাপা পড়ে কিশোর রাকিব। ঘটনার পর দুই বাসের চালকই বাস ফেলে পালিয়ে যান।
খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘এ ঘটনার পর নিহতের পরিবারের সদস্যেরা সড়ক ও পরিবহণ আইনে রমনা মডেল থানায় একটি মামলা করেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা এ ঘটনায় দায় স্বীকার করে নিয়েছেন। মামলার এক নম্বর আসামি মনির হোসেন তিন মাস আগে মধ্যপ্রাচ্য থেকে দেশে আসেন। তার বাড়ি ভোলা। মাত্র দেড় মাস আগে ঢাকাতে কর্মসংস্থানের জন্য আসে। এক মাস আগে থেকে আজমেরি বাসের চালকের সঙ্গে ওই বাসে দৈনিক ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা মজুরিতে হেলপারি শুরু করেন। তিনি মাঝে মধ্যে বাসটি চালাতেন বলে জানিয়েছেন।’
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ঘটনার দিন ২০ জানুয়ারি সদরঘাট থেকে গাজীপুর চন্দ্রার উদ্দেশে বাসের মূল চালক চালানো শুরু করে। চালক গুলিস্তানে এলে হেলপার মনির হোসেনকে দায়িত্ব দিয়ে তিনি চলে যান। মনির বাসটি চালিয়ে মগবাজার মোড়ে নিয়ে আসেন। আর ইমরান হোসেন দুই বছর ধরে বাস চালিয়ে আসছেন। তিনিও একসময় হেলপার ছিলেন। বাসটির মালিকের কাছ থেকে দৈনিক তিন হাজার ৫০০ টাকা হারে বাসটি ভাড়ায় চালানো শুরু করে। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।