আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছি, আ.লীগের নেতৃত্ব সফল
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। বর্তমানে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। খালিদ মাহমুদ ১৯৭০ সালের ৩১ জানুয়ারি দিনাজপুর জেলার বোঁচাগঞ্জ উপজেলার ধানতলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা আবদুর রউফ চৌধুরী সাবেক সংসদ সদস্য এবং মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। মা রমিজা রউফ চৌধুরী।
বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ প্রয়াত আবদুর রউফ চৌধুরীর একমাত্র ছেলে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ছাত্ররাজনীতির মাধ্যমে উঠে এসেছেন। ছাত্রজীবনে তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। পরে তিনি আওয়ামী লীগের মূল রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। এ সময় তিনি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সান্নিধ্য লাভ করেন। ২০০১-০৬ সময়ে তিনি সুধা সদনে বসে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনাকে সহযোগিতা করতেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় শেখ হাসিনার মুক্তি আন্দোলনেও সক্রিয় ছিলেন তিনি।
খালিদ মাহমুদ ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে দিনাজপুর-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। টানা তিনবার নির্বাচিত ওই সংসদ সদস্য এবারই প্রথম মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। দায়িত্ব পেয়েছেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর।
আওয়ামী লীগের কাউন্সিলসহ দলীয় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেছেন খালিদ মাহমুদ। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন এনটিভি অনলাইনের স্টাফ করেসপনডেন্ট ফখরুল ইসলাম শাহীন।
এনটিভি অনলাইন : আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন আগামী ২১ ও ২২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সম্মেলনের প্রস্তুতি কতটুকু?
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী : সম্মেলন প্রস্তুতি আমাদের প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। আমাদের পোস্টার হয়ে গেছে। দাওয়াত কার্ড হয়ে গেছে। ঘোষণাপত্রের খসড়াও চূড়ান্ত হয়ে গেছে। আমাদের শৃঙ্খলা বিষয়েও কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে। মঞ্চ তৈরি হচ্ছে। সবকিছুই এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
এনটিভি অনলাইন : আওয়ামী লীগের প্রতিটি সম্মেলনে দেশের জনগণকে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়ে থাকে। এবারের সম্মেলন থেকে কী ধরনের বার্তা পেতে যাচ্ছে?
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী : বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সম্মেলন মানেই একটা বড় খবর। আবার এখন যেহেতু বাংলাদেশের রাজনীতিটা শুধু জাতীয় রাজনীতির ওপর নির্ভর করে না, আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনীতির মধ্যে যুক্ত আছে। কাজেই আমাদের শুধু রাজনৈতিক, আর্থসামাজিক, জাতীয়, ভূ-রাজনীতি বিষয়েই নয়, আন্তর্জাতিক বিষয়ের ওপরও নির্ভর করে। তাই আমাদের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি কী, এ ধরনের বার্তাই সম্মেলনের মধ্যে থাকবে। আমরা সেগুলো সম্মেলনের মাধ্যমে উপস্থাপন করব। সেটার জন্য ২০ ও ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। আওয়ামী লীগের যেহেতু সম্মেলন হচ্ছে, দেশের মানুষের এবং আন্তর্জাতিক বিশ্বের প্রত্যাশা মেটানোর যে সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, কাউন্সিলে সেই সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপই আসবে।
এনটিভি অনলাইন : বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে নেতাকর্মীরা কোনো পরিবর্তন দেখবে কি না?
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী : নেতৃত্বের পরিবর্তন একটি সম্মেলনের বিবেচ্য বিষয় নয়। একটি সম্মেলনে একটি রাজনৈতিক দল কী ভাবে, আগামী দিনের জন্য কী বক্তব্য নিয়ে আসছে, কী ধরনের চিন্তাভাবনা, তাদের দৃষ্টিভঙ্গি ও লক্ষ্যটা কী এবং পূর্ববর্তী লক্ষ্যের সঙ্গে আগামীর লক্ষ্যের কী ধরনের অ্যাডজাস্টমেন্ট হচ্ছে, সে বিষয়গুলো তো মূল বিষয়।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বে সফল বলেই পর পর তিনবার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। নেতৃত্বে সফল বলেই জঙ্গি-সন্ত্রাস থামিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে। আমরা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছি। যারা আইনকে চ্যালেঞ্জ করত, তারা এখন আইনকে শ্রদ্ধা করে। কাজেই বলা যায়, আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব সফল।
সে ক্ষেত্রে আমাদের সম্মেলনের যে মূল প্রতিপাদ্য, সেটা হচ্ছে, গত তিন বছরে যে কার্যক্রমগুলো নিয়ে জনগণের সঙ্গে যে কথাগুলো বলেছিলাম, সে কথাগুলো কতটুকু বাস্তবায়ন করেছি এবং আগামী তিন বছরের জন্য আমরা কী ধরনের বার্তা দেব, সেটাই হচ্ছে বড় বিষয়। সেই লক্ষ্য পূরণ করার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগেরই একমাত্র সক্ষমতা রয়েছে। এটা অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের নেই। আওয়ামী লীগ একটি দেশপ্রেমিক এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাভিত্তিক রাজনৈতিক দল। যে বৈশিষ্ট্য অন্য রাজনৈতিক দলের মধ্যে নেই।
এনটিভি অনলাইন : আসন্ন সম্মেলন থেকে সাংগঠনিক জেলার সংখ্যা বৃদ্ধির কোনো সম্ভাবনা রয়েছে কি না?
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী : সাংগঠনিক জেলা বাড়ানোর কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে যেগুলো সিটি করপোরেশন হয়েছে, সেগুলো মহানগর হবে। আমাদের এরই মধ্যে একটা সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে যে বিভাগীয় শহরগুলোই মহানগর হবে। এটা চলমান একটা প্রক্রিয়া; সরকারের কাঠামো পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সংগঠনের পরিবর্তন।
এনটিভি অনলাইন : আসন্ন সম্মেলনে সাংগঠনিক পদ বৃদ্ধির কোনো সম্ভাবনা রয়েছে কি না? কাউন্সিল সামনে রেখে আপনারা এমন কোনো প্রস্তাব করেছেন কি না?
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী : আমাদের যে খসড়া গঠনতন্ত্র করা হয়েছে, সেখানে পদ বাড়ানোর কোনো প্রস্তাবনা দেওয়া হয়নি। তবে প্রশিক্ষণবিষয়ক একটি সম্পাদকের কথা বলা হয়েছে, এটা গতবারও দেওয়া হয়েছে, গ্রহণ করা হয়নি; এবার আবারও দেওয়া হয়েছে।
এনটিভি অনলাইন : এবারের সম্মেলনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কেমন নেতৃত্ব উপহার পেতে যাচ্ছেন?
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী : আমাদের তো স্থায়ী নেতৃত্ব আছেই। তিনি জননেত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর বিকল্প আওয়ামী লীগে তো নয়ই, দেশের মধ্যে তাঁর অন্য কোনো বিকল্প নেই। কারণ তিনি এখন শুধু জাতীয় নেতা নন, ভূ-রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে রয়েছেন।
এনটিভি অনলাইন : দলের সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তন হবে কি না?
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী : এটা আমাদের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এখতিয়ার; যাঁরা কাউন্সিলর, আমরা যাঁরা থাকব, আমরা প্রধানমন্ত্রী সভানেত্রীকে দায়িত্ব দেব এ কারণেই, কারণ তিনি তাঁর দীর্ঘ ৩৮ বছরের পথচলার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে যেভাবে দেখেছেন, বুঝেছেন পর্যবেক্ষণ করেছেন; এর থেকে বেশি পর্যবেক্ষণ এ দলের মধ্যে আর কারো নেই। বরং তিনি অতীতে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা সঠিক ছিল দলকে গতিশীল করার ক্ষেত্রে যুগোপযোগী ছিল। সভানেত্রী যে সিদ্ধান্ত নেবেন, সেটাই চূড়ান্ত বলে বিবেচনা হবে।
এনটিভি অনলাইন : সম্প্রতি আওয়ামী লীগের অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে বেশ আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। এমনকি আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনে বিষয়টি নিয়ে একটি উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মানববন্ধনও করেছেন। সামগ্রিকভাবে বিষয়টি কীভাবে দেখছেন।
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী : এগুলো মনগড়া কথা। গত ১০ বছরে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের পরিধি অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের প্রচুর নেতাকর্মীর সংখ্যা বেড়েছে। অনেকেরই আওয়ামী লীগের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে, আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে এবং অতীতের রাজনীতি কার কাছে ভুল মনে হয়েছে, তারা বর্তমান নেতৃত্ব শেখ হাসিনার বিকল্প কেউ নেই বলেই আওয়ামী লীগে যুক্ত হয়েছে। সে ক্ষেত্রে আমাদের একটা তালিকা হয়েছে, সে তালিকার মধ্যে যুদ্ধাপরাধী, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদী, দেশবিরোধী কর্মকাণ্ডে সংশ্লিষ্ট আছে কী না, সে ধরনের একটা পর্যবেক্ষণ আমরা চালচ্ছি। যদি কেউ থেকে থাকে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শুধু পর্যবেক্ষণের জন্যই এ তালিকা। আমাদের কনসেপ্টটা পরিষ্কার। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিশ্বাস করে, স্বাধীনতা বিশ্বাস করে, দেশবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ডে জড়িত নয়, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের সঙ্গে কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই—এ ধরনের যেকোনো মানুষের আওয়ামী লীগ করার সুযোগ রয়েছে। অনুপ্রবেশকারী তারাই, যারা স্বাধীনতা-মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাস করে না, যাদের সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে, যারা নিজেকে রক্ষা করার জন্য আওয়ামী লীগে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করছে, তারাই অনুপ্রবেশকারী।
এনটিভি অনলাইন : আগামী বছর ‘মুজিববর্ষ’ পালন করবে দেশ। এদিকে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগ টানা ১০ বছরের বেশি সময় ক্ষমতায় আছে। বাংলাদেশ নিয়ে আওয়ামী লীগের ভাবনা কী?
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী : এটা গত ১০০ বছরে বাংলাদেশের ভূখণ্ডের সবচেয়ে বড় এ গুরুত্বপূর্ণ বছর। এটা ঐতিহাসিকভাবেই আমরা করতে যাচ্ছি। এটা বাংলাদেশের জন্য, বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য, বাংলাদেশের মানুষের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বছর। যেখানে আমাদের মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী পালন করব। আমরা মনে করি, জাতির পিতার নেতৃত্বে পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে স্বাধীনতার সূর্য আমরা ছিনিয়ে এনেছিলাম এক সাগর রক্তের বিনিময়। যে নেতা ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়ে মানুষের অধিকারের কথা বলেছেন, যে নেতা ফাঁসির মঞ্চ থেকে ফিরে এসে বলেছিলেন রক্ত দিয়ে হলেও আমি তোমাদের ঋণ শোধ করব; তিনি শুধু পরিশোধ করেননি, তিনি আমাদের ঋণী করে গেছেন। আজকে সম্মিলিতভাবে এখানে কোনো ব্যক্তি-গোষ্ঠীর বিষয় না, সম্মিলিতভাবে আমাদের শপথ নিতে হবে। বঙ্গবন্ধুর রক্তের প্রতি আমরা শ্রদ্ধা জানাব এভাবেই একটি পরিশুদ্ধ বাংলাদেশ, পরিশুদ্ধ রাজনীতির মধ্য দিয়ে আমরা তাঁর রক্তের প্রতি শ্রদ্ধা জানাব এবং বাঙালি জাতি হিসেবে ১৬ কোটি মানুষের সুবর্ণ সুযোগ বঙ্গবন্ধুর শততমবার্ষিকী উদযাপন করা। এটা হতে পারে আমাদের রাজনীতির শুদ্ধাচারের বিষয়।