অযথা রিট করে প্যানিক সৃষ্টি করবেন না
জনস্বার্থের একটি মামলার শুনানিকালে আইনজীবীকে উদ্দেশ করে হাইকোর্ট বলেছেন, সরকার ভ্যাকসিনের জন্য নতুন নতুন দেশের সঙ্গে চুক্তি করে যাচ্ছে। হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ করা হচ্ছে। জেলা হাসপাতালগুলোকে কেন্দ্রীয়ভাবে অক্সিজেনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে। এ অবস্থায় অযথা রিট করে দেশে প্যানিক সৃষ্টি করবেন না।
আজ রোববার বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সরদার রাশেদ জাহাঙ্গীরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।
করোনা জাতীয় পরিকল্পনা প্রণয়ন, সব প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের টিকা প্রদান ও অক্সিজেন সরবরাহের নির্দেশনা চেয়ে রিট শুনানির সময় আদালত এ মন্তব্য করেন।
আদালত রিটকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লবকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনি সরকারকে একটি সাত দিনের নোটিশ দিয়ে রিট পিটিশন ফাইল করে দীর্ঘমেয়াদি প্ল্যান করতে নির্দেশনা চেয়েছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও তো ধারণা করতে পারছে না কী হবে, কী হতে পারে। এ রকম একটা পরিস্থিতিতে আপনি রিট ফাইল করে চাইলেন জাতীয় প্ল্যান। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞরা গবেষণা করে নতুন নতুন কথা বলছেন। করোনার বিভিন্ন রকম ভেরিয়েন্ট চলে আসছে। সব ভেরিয়েন্ট একই রকম না।’
ভ্যাকসিন প্রসঙ্গে হাইকোর্ট বলেন, ‘ভ্যাকসিন নিয়ে তো আপনি বলছেন ১৮ বছরের বেশি বয়সীদের দিতে হবে। আমাদের দেশে যখন ভ্যাকসিন আনার কথা হলো সরকার বলল, ৫৫ বছরের ওপর যাদের বয়স তাদের দেওয়া হবে। পরে সরকার ৪৫ বছর করল। মাঝপথে আমাদের যাদের সঙ্গে চুক্তি ছিল, সেই দেশে সংকট হলো। সংকটের কারণ নিজস্ব চাহিদা এবং কাঁচামালের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরতা। সেখান থেকে সাপ্লাই বন্ধ হয়ে গেছে।’
‘এ কারণে এখন সরকার তাদের বাদ দিয়ে ভ্যাকসিনের জন্য আরও কয়েকটি দেশের সঙ্গে চুক্তি করছে। একটু ওয়েট করেন। সবাই ভ্যাকসিন পাবে। আপনারা সবকিছু নিয়ে জনস্বার্থে রিট করবেন না। এ রকম একটা পরিস্থিতিতে দেশে প্যানিক ক্রিয়েট করার সৃষ্টি করবেন না। এ ধরনের রিট করলে প্যানিক হয়। সরকারের সদিচ্ছার কোনো অভাব নেই। অক্সিজেনের ব্যাপারে আমাদের সরকার অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে, এ কারণে এখনও সংকট হয়নি।’
আদালত বলেন, ‘আমরা দেখি সব বিষয়ে আপনারা জনস্বার্থে মামলা নিয়ে আসেন। এসব বাদ দিয়ে আপনারা স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য জনগণকে সচেতন করুন। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ভ্যাকসিন আপনি এক ডোজ আর দুই ডোজ যাই নেন না কেন, মাস্ক আপনাকে পরতেই হবে। গতকাল দেখলাম সন্ধ্যার পর ঢাকা শহরের সব মার্কেটে যেভাবে লোক ছুটছেন সেখানে কোনো স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। এ কারণে জনগণকে সচেতন করেন। কথায় কথায় প্লিজ এ ধরনের রিট নিয়ে আসবেন না। সরকার অক্সিজেনের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। জেলার সদর হাসপাতালগুলোকে কেন্দ্রীয়ভাবে অক্সিজেনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে। ভ্যাকসিনের জন্য সরকার অলরেডি তিনটি দেশের সঙ্গে চুক্তি করেছে। আসতে দেন। শুরু হলে নিশ্চয়ই সবাই টিকা পাবে। এসব নিয়ে করা রিটে কোর্ট ইন্টারফেরার করলে সমাজে আরও প্যানিক সৃষ্টি হবে।’
তখন আইনজীবী হুমায়ন কবীর পল্লব বলেন, ‘মাই লর্ড, আমি রিট পিটিশনে নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকারের কথা বলেছি, করোনার এ পরিস্থিতিতে আমাদের ন্যাশনাল প্ল্যান থাকা উচিত। এ কারণে আদালতের কাছে প্রার্থনা করেছি। গত এক বছরে করোনা নিয়ে জনস্বার্থে অনেক মামলা হয়েছে। আমি নিজেও করেছি। জনগণকে সচেতনের অংশ হিসেবেই আমি রিট করেছি।’
তখন আদালত বলেন, ‘আপনাকে ধন্যবাদ যে আপনি জনগণকে সচেতন করার জন্য মামলা করেছেন। কিন্তু সব মামলায় আদালতের ইন্টারফেয়ার করা উচিত না। পরে আদালত মামলাটি কার্যতালিকা থেকে বাদ দিয়ে আদেশ দেন।’