‘অভিমানে’ আত্মহনন
বিথী আক্তার (২২) বাবার বাড়ি যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর স্বামী নূর মোহাম্মদ (২৭) তাঁকে আরো তিনদিন পর যেতে বলেছিলেন। এই নিয়ে দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। পরে মসজিদে নামাজ পড়তে যান নূর মোহাম্মদ। নামাজ শেষে ফিরে দেখেন, বিথী গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ফাঁস নিয়েছেন। এ তথ্য জানিয়ে পুলিশ বলছে, গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর খিলগাঁওয়ের ভূইয়াপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে।
বিথী আক্তারের মৃত্যুর ঘটনায় খিলগাঁও থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুজিত কুমার সাহা আজ রোববার এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘বাবার বাড়ি যেতে না পেরে স্বামীর সঙ্গে অভিমান করে তিনি আত্মহত্যা করেছেন।’
ঘটনার বিস্তারিত জানতে যোগাযোগ করা হয় খিলগাঁও থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ইকরামুল হকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘নূর মোহাম্মদের কাছে বাবার বাড়ি যাওয়ার কথা বলেছিলেন বিথী। নূর তাঁর স্ত্রীকে আরো তিনদিন পর মায়ের সঙ্গে যাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন। কিন্তু বিথী দ্রুতই যেতে চাইলে এ নিয়ে দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে বিথী বাবার বাড়ি চলে যাওয়ার জন্য ব্যাগপত্র গোছাতে থাকেন। সে সময় নূর মোহাম্মদ নিজের মাকে মুঠোফোনে ঘটনাটি জানান।’
এসআই ইকরামুল হক বলেন, ‘নূরের কাছ থেকে ঘটনা শুনে ছোটো ছেলের বাসায় থাকা বিথীর শাশুড়ি নূরের বাসায় চলে আসেন। এরপর তিনি বিথী আক্তারকে সঙ্গে করে ছোটো ছেলের বাসায় নিয়ে যান। আর, নূর আসরের নামাজ পড়তে চলে যান মসজিদে। কিন্তু, ওদিকে বিথী আক্তার শাশুড়ির সঙ্গে থাকেননি। তিনি চলে আসেন নিজ বাসায়। এরপর শাশুড়ি বিথীকে খুঁজতে খুঁজতে নূরের বাসায় চলে যান। সেখানে গিয়ে দেখেন, ঘরের দরজা ভেতর থেকে লাগানো। পরে তিনি নূরকে ফোন করে বাসায় আসতে বলেন। নূর এসে বাসায় ঢুকে দেখেন, ঘরের ফ্যানের সঙ্গে ওড়না ঝুলিয়ে বিথী আক্তার গলায় ফাঁস নিয়েছেন।’
‘একটু ঝগড়া হলেই বিথী প্রায়ই বাচ্চামো করতেন বলে স্বামী-স্ত্রীর দুই পরিবারের কাছ থেকে আমরা জেনেছি। শেষমেশ অভিমানেই প্রাণ গেল তাঁর,’ যোগ করেন ইকরামুল হক।
ইকরামুল হক আরো বলেন, ‘বিথীকে দ্রুতই ফরাজি হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেখানকার চিকিৎসক তাঁকে ঢাকা মেডিকেলে নিতে বলেন। ঢাকা মেডিকেলে নেওয়ার পর শনিবার রাত ৮টার দিকে চিকিৎসক বিথীকে মৃত ঘোষণা করেন।’
এদিকে আজ রোববার সকালে বিথী আক্তারের বাবা সামাল শিকদার আত্মহত্যার প্ররোচনার ৩০৬ ধারায় একটি মামলা করেছেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই ইকরামুল হক। এ ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে তিনি নূর মোহাম্মদের পরিবার এবং বিথীর পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছেন।
বিথীর মৃত্যু-সংক্রান্ত সব তথ্য দুই পরিবারের কাছ থেকে শুনে এই প্রতিবেদককে দিয়েছেন বলে দাবি তদন্ত কর্মকর্তার।
ইকরামুল হক বলেন, ‘স্বামী-স্ত্রীর দুই পরিবার থেকে জানতে পেরেছি, তাঁদের দুজনের মধ্যে মাঝেমধ্যেই ঝগড়া হতো। এসব নিয়ে কয়েকবার পারিবারিকভাবে সালিশও করেছেন বলে উভয় পক্ষ আমাকে জানিয়েছে। এ ছাড়া বিথীর জিনের সমস্যা ছিল বলে উভয়পক্ষই দাবি করেছে। তাদের দাবি, বিয়ের পরপর বিথীর কাছ থেকে জিন তাড়াতে এক হুজুরের কাছে নেওয়া হয়েছিল।’
নূর-বিথী দম্পতির নয় বছরের একটি কন্যাসন্তান রয়েছে জানিয়ে ইকরামুল হক বলে, ‘বিথীর লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢামেকের মর্গে রাখা হয়েছে। আর নূর মোহাম্মদকে গ্রেপ্তার করে সকালে আদালতে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আরো তদন্ত করা হচ্ছে।’