অভাব আর ঋণের জালে আষ্টেপৃষ্টে বাঁধা সাতকানিয়ার জেলেরা
‘নদীতে পানি থাকাকালে আমাদের পরিবারের পুরুষ সদস্যরা নৌকা নিয়ে মাছ ধরতে নদীতে চলে যেতেন, ধরে আনা মাছ বিক্রি করে চলত সংসার। তবে বেশ কয়েক মাস ধরে নদী শুকিয়ে আছে। তাই বেকার হয়ে পড়েছে পরিবারের পুরুষরা। তাঁরা বেকার হয়ে যাওয়ায় পরিবারের জন্য তিনবেলা খাবারের ব্যবস্থাও করা যাচ্ছে না। অনেক পরিবারের সদস্যরা অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে। আমরা তারাতারি সরকারি-বেসরকারি তরফ থেকে ত্রাণ সহায়তা চাই।’ কথাগুলো বলছিলেন চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়নের বিশ্বাসেরহাট এলাকার নারী বকুল জলদাস (৫৫)।
চট্টগ্রামের শঙ্খ নদীর চরে চাষকৃত বাদাম তোলার কাজ করছিলেন বকুল জলদাস। শুধু বকুল নয়, নিপু জলদাস, নিয়তি জলদাস, সাহা জলদাস, রাধা রানী দাস ও আশকি দাসসহ জেলেপাড়ার আট থেকে নয়জন নারী। তারা এখানে দৈনিক শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। সেখানেই কথা হয় বকুলের সঙ্গে।
বাংলাদেশ ও আরাকান রাজ্যের মাঝামাঝি পাবর্ত্য অঞ্চল আরাকানের মদক পাহাড় থেকে শঙ্খ নদীর উৎপত্তি। শঙ্খ নদীর দৈর্ঘ্য ২৭০ কিলোমিটার। এটি বান্দরবানের রোয়াংছড়ি এবং বান্দরবান সদর হয়ে চট্টগ্রামের বাঁশখালী খানখানাবাদ ইউনিয়ন এবং আনোয়ারা উপজেলার রায়পুর হয়ে কর্ণফূলী নদী ও বঙ্গোপসাগরের মোহনায় মিলিত হয়েছে। বর্তমানে শঙ্খ নদী এ অঞ্চলের হরেক পেশার মানুষের জীবন জীবিকার উৎস। এ নদীর মাধ্যমেই জীবিকা চালায় বিশ্বাসেরহাট এলাকার জেলেপল্লির জেলেরা। এই নদীই তাদের একমাত্র আয়ের উৎস।
জানা যায়, শঙ্খ নদীতে পানি থাকলে এ পল্লির জেলেরা নৌকা নিয়ে মাছ ধরে। মাছ বিক্রি করে সংসারের খরচ চালায়। বিশ্বাসেরহাটের এই জেলে পল্লিতে প্রায় তিন শতাধিক পরিবার বসবাস করে। তাদের প্রধান পেশা মাছ শিকার। কিন্তু এখন শুষ্ক মৌসুমে অনেকদিন ধরে নদীতে পানি নেই। তাই বেকার হয়ে আছে জেলেরা। এছাড়াও দেশজুড়ে চলছে লকডাউন। কাজের সন্ধানে ঘর থেকে বের হওয়ার সুযোগ নেই। তাই আর্থিক অভাব অনটনে দিন কাটাচ্ছে এ পল্লির জেলেরা।
নদীতে পানি শুকিয়ে গেলে বেকার হয়ে পড়ে জেলেপল্লির মানুষগুলো। এ সময় তারা বিভিন্ন জায়গায় কাজ করে। কিন্তু এ বছর তার বিপরীত। নদী শুকিয়ে গিয়ে কর্মহীন হয়ে পড়া জেলেরা লকডাউনের কারণে বেকার হয়ে পড়েছে। নদীতে আবারও মাছ ধরা মৌসুম শুরু না হওয়া পর্যন্ত এই দীর্ঘ সময় তাদের দুবেলা খাবারের ব্যবস্থা করা কঠিন। পাশাপাশি অনেকেই জড়িয়ে যাচ্ছেন এনজিওর ঋণের জালে। এসব ঋণে সর্বশান্ত হচ্ছে পরিবারগুলো।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ধর্মপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, ‘শুষ্ক মৌসুমে জেলেপল্লির মানুষগুলো কর্মহীন হয়ে পড়ে। তাই তাদের জন্য সরকারের বিভিন্ন সহায়তা যথাসময়ে পৌঁছে দিচ্ছি। এ ছাড়াও আমি নিজস্ব তহবিল থেকে অর্থ সহায়তা দিচ্ছি।’