অব্যাহতি পেলেন শমী কায়সার
সাংবাদিকদের ‘চোর’ বলার অভিযোগ এনে শত কোটি টাকার মানহানির মামলা থেকে অভিনেত্রী শমী কায়সারকে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত। গত ৪ মার্চ বাদী অনুপস্থিত থাকায় ফৌজদারী কার্যবিধির ২০৩ ধারায় মামলাটি খারিজের আদেশ দেন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সত্যব্রত শিকদার।
আজ রোববার আদালতের বেঞ্চ সহকারী (পেশকার) নাজমা আক্তার এনটিভি অনলাইনকে এ বিষয়ে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, তদন্ত প্রতিবেদনে তদন্ত কর্মকর্তা ঘটনার সত্যতা না পাওয়ায় ও বাদী আদালতে হাজির না থাকায় বিচারক মামলায় শমী কায়সারকে অব্যাহতি দিয়েছেন।
২০১৯ সালের ৩০ এপ্রিল স্টুডেন্ট জার্নাল বিডির সম্পাদক মিঞা মো. নুজহাতুল হাসান বাদী হয়ে ঢাকার চিফ অ্যাডিশনাল ম্যাজিস্ট্রেট (এসিএমএম) আদালতে বাদী হয়ে মামলাটি করেন। এরপর মামলাটি শাহবাগ থানাকে তদন্ত করার নির্দেশ দেন আদালত। তদন্ত শেষে ২০১৯ সালের ২ অক্টোবর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) মাহাবুবুর রহমান ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৯ সালের ২৪ এপ্রিল জাতীয় প্রেসক্লাবে ই-কমার্সভিত্তিক পর্যটনবিষয়ক সাইট ‘বিন্দু-৩৬৫’-এর উদ্বোধনকালে গণমাধ্যমকর্মীসহ সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও তারকা খ্যাতিসম্পন্ন মানুষের উপস্থিতিতে শমী কায়সারের দুটি ফোন হারিয়ে যায়। এতে তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। হারিয়ে যাওয়া স্মার্টফোন দুটি উদ্ধারের লক্ষ্যে ওই স্থানে আগত কিছু সংখ্যক লোককে তল্লাশি করার জন্য বলেন শমী কায়সার। তবে কাউকে তল্লাশি করা হয়নি। কিন্তু শমী কায়সারের কথায়, ওই স্থানে উপস্থিত কয়েকজন সংবাদকর্মী তাঁদের ‘চোর’ সম্বোধন করা হয়েছে বলে ভুল বুঝেছেন। পরবর্তী সময়ে শমী কায়সার ঘটে যাওয়া অপ্রীতিকর ঘটনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন, যা বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়। তারপরও বাদী আদালতে মামলা করেন। মামলাটি সার্বিক তদন্তে বিবাদী শমী কায়সারের মাধ্যমে বাদীর মানহানির কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে প্রকাশ পায়।
এরপর ২০১৯ সালের ২৪ অক্টোবর আদালতে মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হলে মামলার বাদী এ বিষয়ে নারাজি দেবেন বলে আদালতকে জানান। এরপর আদালত মামলাটি শুনানির জন্য ২০১৯ সালের ২৩ ডিসেস্বর নির্ধারণ করেন। শুনানি শেষে বিচারক ওই দিন মামলাটি পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন।
মামলার আরজি থেকে জানা যায়, ২০১৯ সালের ২৪ এপ্রিল দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে ই-কমার্সভিত্তিক পর্যটনবিষয়ক সাইট ‘বিন্দু ৩৬৫’-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যোগ দেন শমী কায়সার। তিনি ই-ক্যাবের সভাপতি হিসেবে বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানের একপর্যায়ে শমী কায়সার জানান, তাঁর মোবাইল ফোন দুটি খুঁজে পাচ্ছেন না।
একপর্যায়ে শমী কায়সারের নিরাপত্তাকর্মীরা মিলনায়তনের মূল গেট বন্ধ করে দেন। শমী কায়সার উপস্থিত সবার দেহ তল্লাশি করার কথা বললে সাংবাদিকরা তাতে সম্মতি দেন। দেহ তল্লাশি শেষে সাংবাদিকরা বের হতে চাইলে শমী কায়সারের নিরাপত্তাকর্মীরা সাংবাদিকদের ‘চোর’ বলে চিৎকার-চেঁচামেচি করেন। এতে সাংবাদিকরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। একপর্যায়ে সাংবাদিকরা ক্যামেরার ফুটেজ দেখে চোর শনাক্ত করার উদ্যোগ নেন। এতে দেখা যায়, অনুষ্ঠানের আলোকসজ্জার দায়িত্ব পালনকারী এক কর্মী মোবাইল ফোনসেট দুটি নিয়ে বের হয়ে যান।
এ ঘটনায় শমী কায়সারের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। পরে বাদী ২০১৯ সালের বছরের ২৭ এপ্রিল থানায় বাদী হয়ে মামলাটি করতে চাইলে থানা কর্তৃপক্ষ আদালতে মামলা দায়ের পরামর্শ দেন।