অপরাধীদের আড়ালকারীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া জনগণের দাবি
'বাসে অগ্নিসংযোগের অপরাধীদের আড়ালকারীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া জনগণের দাবি' বলেছেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।
আজ রোববার দুপুরে সচিবালয়ে তথ্য মন্ত্রণালয় সভাকক্ষ থেকে অনলাইনে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয় থেকে স্থানীয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে 'বকনা বাছুর' বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য শেষে সাংবাদিকদের তথ্যমন্ত্রী এ কথা জানান। রাঙ্গুনিয়ার ইউএনও মো. মাসুদুর রহমান, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মুহাম্মদ মুস্তাফা কামাল প্রমুখ এ সময় রাঙ্গুনিয়া প্রান্তে সংযুক্ত ছিলেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, 'গত ১২ নভেম্বর হঠাৎ করে গাড়িতে আগুন দেওয়া হলো এবং ২০১৩, ১৪, ১৫ সালে যেভাবে পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করা হয়েছিল ঠিক একইভাবে এই ন্যক্কারজনক কাজটির পর আরেকটি ন্যক্কারজনক কাজ করা হয়েছে, সেটি হচ্ছে এটিকে অস্বীকার করা।'
'এই অপরাধীদের খুঁজে বের করার পর সেটা যদি বিএনপির দলীয় কেউ হয়, তাদের বিরুদ্ধে দলগতভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, সেই কথা না বলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেবসহ বিএনপির সব ঊর্ধ্বতন নেতারা এটি নিয়ে প্রচণ্ড মিথ্যাচার করেছেন, এটিকে অস্বীকার করেছেন'- বলে উল্লেখ করেন মন্ত্রী। তিনি আরো বলেন, 'মিথ্যাচার করে বিএনপি তাদের দলের মধ্যে যেসব দুষ্কৃতকারী আছে তাদের আড়াল করার চেষ্টা করেছেন। যে দুষ্কৃতকারীরা এই ঘটনা ঘটিয়েছে তারা যেমন অপরাধী, যারা এ নিয়ে মিথ্যাচার করে এই দুষ্কৃতকারীদের আড়াল করার চেষ্টা করেছেন তারা এবং যারা এই ক্ষেত্রে মদদ ও অর্থ দিয়েছেন তারাও আইনের চোখে সহভাবে অপরাধী।'
ড. হাছান বলেন, 'আপনারা জানেন, এরই মধ্যে ভিডিও ফুটেজ দেখে অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং অতি সম্প্রতি যুবদল, ছাত্রদলের কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বনানীতে কোথায় বসে এই পরিকল্পনা হয়, কোথা থেকে অর্থ এসেছে সেগুলো তারা স্বীকার করেছে। এই স্বীকারোক্তির পর মির্জা ফখরুল ইসলাম সাহেব কী বলবেন'- প্রশ্ন রাখেন তথ্যমন্ত্রী।
জনগণের দাবির কথা উল্লেখ করে ড. হাছান বলেন, 'যারা বাসে আগুন দিয়েছে, পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করেছে, তারা যেমন অপরাধী, এই ঘটনা নিয়ে যারা মিথ্যাচার করে তাদের আড়াল করে অপরাধীদের রক্ষার অপচেষ্টা চালিয়েছেন তারাও সমভাবে অপরাধী, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে জনগণের দাবি।'
'স্বাধীনতার ইতিহাস নতুন প্রজন্ম জানছে বলেই বিএনপির গাত্রদাহ'
সাংবাদিকরা এ সময় মির্জা ফখরুল ইসলামের বক্তব্য 'স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃত করা হচ্ছে'-এর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, '১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর ২১ বছর ধরে স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে। স্বাধীনতার খলনায়ককে নায়ক বানানোর চেষ্টা করা হয়েছে। ঠিক তেমনিভাবে স্কুলের দপ্তরিকে হেডমাস্টার বানানোর চেষ্টা করা হয়েছে। স্বাধীনতার এই বিকৃত ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে পরিবেশন করে তাদের বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালানো হয়েছে।'
'এরপর ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা স্বাধীনতার মহানায়ক বাংলাদেশের মহান স্থপতি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতার সুযোগ্যকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা জনগণের রায় নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পাওয়ার পর সেই বিকৃতির গতি বন্ধ হয়েছিল এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে সেটির সংশোধন সম্ভবপর হয়েছিল'- বলে উল্লেখ করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
'২০০১ সালের পর আবারও স্বাধীনতার ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়েছে' উল্লেখ করে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, 'শুধু বিকৃত করাই নয়, টেলিভিশনের অনেক ফুটেজ ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। রেডিও-টেলিভিশনে সংরক্ষিত আর্কাইভ থেকে প্রায় সব জিনিস ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে, যাতে এই সত্যগুলো পরবর্তী প্রজন্ম না জানে। এরপরও কিছু কিছু থেকে গেছে। প্রকৃতপক্ষে স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাস ধীরে ধীরে দেশের জনগণ ও নতুন প্রজন্ম জানছে বিধায় মির্জা ফখরুল সাহেব ও বিএনপির গাত্রদাহ শুরু হয়েছে। যে দলের নেতারা দুর্নীতি আর খুনের দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির জন্মদিন ঢাকঢোল পিটিয়ে পালন করে, তাদের রাজনৈতিক দৈন্য সেই জায়গায় গেছে, এ কারণেই তাদের এই গাত্রদাহ।'
এ সময় বিএনপিনেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের মন্তব্য 'দেশে গণতন্ত্র নেই, আছে শেখ হাসিনার শাসনতন্ত্র'-এর জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, 'গয়েশ্বর বাবু যে সকালে একবার, বিকেলে আবার আওয়ামী লীগ এবং জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেন, এটিই প্রমাণ করে দেশে গণতন্ত্র আছে। দেশে গণতন্ত্র হরণ করে বন্দুক উঁচিয়ে ক্ষমতা দখল করেছিল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান। আর যখন ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন করে বঙ্গবন্ধুর খুনিকে সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা বানিয়ে গাড়িতে পতাকা লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল, তখনো গণতন্ত্রকে হরণ করা হয়েছিল।'
'দেশে গণতন্ত্র আছে, এই গণতন্ত্রকে নস্যাৎ করার ক্রমাগত অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি', যোগ করেন ড. হাছান মাহমুদ।
সাংবাদিকদের অপর প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী জানান, জাতীয় সম্প্রচার আইন ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে আছে, খুব শিগগিরই এটা শেষে মন্ত্রিসভা হয়ে পার্লামেন্টে যাবে।
টাকা পাচারের বিচার প্রসঙ্গে হাইকোর্টের নির্দেশনাকে দুর্নীতি দমনের ক্ষেত্রে এবং যারা টাকা পাচার করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার ক্ষেত্রে এটি সহায়ক উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, 'এই রায়ের জন্য হাইকোর্টকে আমি ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাই।'